থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, কালো ও সবুজ রঙের বিদেশি আঙুর। সুন্দর এই দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি মেঘাদল গ্রামে। সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান।

এ উদ্যোক্তা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মিজানুরের বাবা জলিল মিয়া ২০২২ সালে ভারতে ঘুরতে গিয়ে শখের বশে প্রথমে দুই জাতের ১০টি আঙুরের চারা নিয়ে আসেন। সেগুলো নিজের জমিতে রোপণ করেন। চারা লাগানোর ১০ মাস পর তাঁর বাগানে আসতে থাকে মিষ্টি ফল।

বাবার অনুপ্রেরণায় মিজানুর ২০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভা‌বে আঙুর চাষ শুরু করেন। এতে তিনি ৫০ জাতের আঙুরগাছ রোপণ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একেলো, ডিকসন, ব্ল্যাক ম্যাজিক, বাইনুকা, ইসাবেলা, পারলেট, আনাব-এ-শাহি ইত্যাদি।

মিজানুরের বাগানে বর্তমানে ১৫০টি গাছ আছে। এর মধ্যে ৪০টি গাছে ফল এসেছে। ১৫ থেকে ২০‌টি গাছে ১০ থে‌কে ১২ কেজি করে ফল ধরেছে। বা‌কি গাছগু‌লোর বয়স কম থাকায় দেড় থে‌কে দুই কে‌জি ক‌রে ফল এসে‌ছে। সম্প্রতি তিনি স্বল্প প‌রিমা‌ণে সবুজ আঙুর প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

গাছ রোপণ ও পরিচর্যায় মিজানুরের ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। যে পরিমাণ ফলন হয়েছে, তা‌তে তি‌নি আশাবা‌দী। আগামী দিনে তি‌নি বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের প‌রিকল্পনা করছেন। মিজানুর ও তাঁর বাবা মিলে উৎপাদন করেছেন আঙুরের চারা। মিজানুরের স্বপ্ন আঙুরের বাগানটি বড় পরিসরে তৈরি করার।

মিজানুরের সফলতা দেখে এলাকার অনেকে আঙুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে মিজানুরের আঙুরবাগান দেখতে আসেন অনেকে। কেউ কেউ মিজানুর রহমানের কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।

মেঘাদল গ্রা‌মের বা‌সিন্দা আশিকুর রহমান ব‌লেন, ‘মিজা‌নু‌রের বাগা‌নের আঙুর খে‌য়ে‌ছি। মিষ্টি। এই বাগানের ফল দে‌খে অনেক কৃষক আঙুর চা‌ষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

মিজানুরের বাবা জলিল মিয়া বলেন, ভারত থেকে তিনি শখের বশে আঙুরের চারা এনেছিলেন। পরে দুই ধাপে আরও কিছু চারা আনেন। মনে করেছিলেন, চারাগুলো হবে না। কিন্তু আস্তে আস্তে সেগুলো বড় হয় এবং ফলনও আসে।

মিজানুর রহমান বলেন, ভারত থে‌কে বাবার নি‌য়ে আসা আঙুরগা‌ছ প‌রিচর্যার পর ফল আসে। এতে আঙুর চা‌ষে তিনি নিজে আগ্রহী হ‌য়ে ওঠেন। প‌রে ইউটিউব দে‌খে ঢাকা থে‌কে ৫০ জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ ক‌রেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব‌রিনা আফ‌রিন বলেন, ‘আমি বাগানটা দে‌খে‌ছি। মিজানুর দুই বছর ধ‌রে প‌রীক্ষামূলকভা‌বে আঙুর চাষ কর‌ছেন। আগামী‌ দিনে নতুন ক‌রে আরও বড় আকা‌রে তিনি আঙুর চাষের প‌রিকল্পনা করছেন। এতে কৃষি কার্যালয় থে‌কে তাঁকে সা‌র্বিক সহ‌যো‌গিতা করা হ‌বে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাবিতে এইচডব্লিউপিএল বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের ১১তম বর্ষপূর্তি

‘ইউনাইটিং ফর পিস অ্যান্ড ফুলফিলিং হিউম্যানিটি’স ডিউটি টুগেদার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে ‘সেপ্টেম্বর ১৮ এইচডব্লিউপিএল ওয়ার্ল্ড পিস সামিটের একাদশ বার্ষিকী’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে এ সামিট অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধভাবে মানবতার দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক মাশরুর রহমান, এইচডব্লিউপিএল বাংলাদেশের প্রতিনিধিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এইচডব্লিউপিএল বাংলাদেশের উপপ্রধান শাখা ব্যবস্থাপক ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (IUB) আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল খান।

তিনি বলেন, “বিশ্বে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কেবল সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থার নয়, প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। এইচডব্লিউপিএল বিশ্বব্যাপী তরুণদের মধ্যে শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলার কাজে নিরলসভাবে কাজ করছে।”

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আইনের চর্চা ন্যায় ও মানবতার চর্চা। এইচডব্লিউপিএল-এর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো আমাদের তরুণ প্রজন্মকে শুধু আইনি জ্ঞান নয় বরং মানবিকতা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মতো চিরন্তন মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত করছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা কোনো একদিনের কাজ নয়- এটি একটি অবিরাম প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে আইন শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি আরো বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, তরুণরা যদি ন্যায় ও মানবতার পথে এগিয়ে আসে, তবে একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ভবিষ্যতেও শান্তি, মানবাধিকার ও বৈশ্বিক ন্যায়ের পক্ষে এমন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা তৈরির মাধ্যমেই আমরা সত্যিকার অর্থে মানবতার বিজয় ঘটাতে পারব।”

প্রভাষক মাশরুর রহমান বলেন, “শান্তি কেবল একটি ধারণা নয়, এটি একটি অবিরাম প্রয়াস। শিক্ষার্থীদের উচিত ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবনের প্রতিটি স্তরে শান্তি ও সহনশীলতার চর্চা করা।”

আলোচনা পর্বে বক্তারা বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা, শিক্ষায় মানবিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্তি এবং আইন শিক্ষার নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের শেষে ‘পিস আইডিয়া কনটেস্ট’-এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, এইচডব্লিউপিএল (হেভেনলি কিলচার, ওয়ার্ল্ড পিস, রেস্টোরেশন অব লাইট) একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), যা জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (UN ECOSOC)-এর স্বীকৃত অংশীদার। 

সংগঠনটির মূল লক্ষ্য যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধ করা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতি নির্বিশেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বজুড়ে শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

ঢাকা/আহসান হাবীব/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ