আয়কর কার্যালয় থেকে করদাতাদের নানা ধরনের নোটিশ পাঠানো হয়। ইদানীং এই নোটিশ পাঠানো বেড়ে গেছে। অনেককে আগের বছর আয়কর রিটার্ন দেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করা হয়। আবার পরিশোধিত কর নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েও নোটিশ দেওয়া হয়। এমন ধরনের নোটিশ পেলে ঘাবড়াবেন না।

আপনার কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) দেওয়া ঠিকানায় নোটিশ পাঠায় কর অফিস। ঠিকানা পুরোনো বা ভুল থাকলে আপনি নোটিশ হাতে না পেলেও আইনিভাবে নোটিশ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। ফলে আপনি সুযোগ না পেয়েই মামলার পরবর্তী আইনি ধাপের সম্মুখীন হবেন।

তাহলে আয়কর অফিস থেকে নোটিশ এলে আপনার করণীয় কী। আয়কর অফিস থেকে নোটিশ আসা একটি স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া। এটিকে এড়িয়ে যাওয়া বা আতঙ্কিত হওয়া, কোনোটাই উচিত নয়।

এ জন্য কিছু করণীয় আছে। এবার দেখা যাক, নোটিশ পেলে করণীয় ধাপগুলো কী কী।

১.

অবহেলা করবেন না;

অনেকেই এ ধরনের নোটিশকে পাত্তা দেন না; কিন্তু এমন নোটিশ কখনোই হালকাভাবে নেবেন না। এটি রাষ্ট্রের সংস্থা থেকে পাঠানো নোটিশ। তাই অবহেলা করলে একতরফা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

২. বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করুন

প্রথমেই আপনি নোটিশের বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করুন। নোটিশে কী চাওয়া হয়েছে বা কী বিষয়ে বলা হয়েছে, তা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

৩. ধারা কী

নোটিশটি যে বিষয়ে দেওয়া হয়েছে, তা আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট আইনের কোন আইনের ধারা বা অংশের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে, তা ভালোভাবে বুঝে নিন।

৪. কবে যেতে হবে

নোটিশের তারিখ খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে নোটিশের জবাব দেওয়ার শেষ তারিখ বা শুনানির তারিখ নিশ্চিত করুন। সেই অনুযায়ী নিজে পদক্ষেপ নিন বা আইনজীবীকে পদক্ষেপ নিতে বলুন।

৫. প্রস্তুতি নিন

নোটিশ পাওয়ার পর যথাসময়ে যেন জবাবসহ সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করুন। নির্ধারিত তারিখে উত্তর, প্রয়োজনীয় দলিলপত্র জমা দিন বা শুনানিতে উপস্থিত হন।

৬. প্রয়োজনে সময় বাড়ান

প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে কর অফিসে গিয়ে সময় বাড়াতে পারেন। এ জন্য নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছ আবেদন করুন।

৭. দলিলপত্র জোগাড় করুন

এনবিআরের চাহিদা অনুসারে দলিলপত্র, সনদ জোগাড় করে রাখুন। এর পাশাপাশি নোটিশের প্রতিটি চাহিদা অনুযায়ী প্রমাণসহ স্পষ্ট ব্যাখ্যা পেশ করুন।

৮. পেশাদারের সহায়তা নিন

হিসাব ও আইন জটিল হলে একজন অভিজ্ঞ কর আইনজীবী ও পরামর্শকের সাহায্য নিন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ল

২০২৫-২৬ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ালো। এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়।

বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ২০২৫-২৬ কর বছরের ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাগণের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বৃদ্ধি করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সাথে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোন করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে অসমর্থ হলে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের নিকট সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতাসহ আবেদন করা যাবে বলে আরো একটি আদেশ জারী করা হয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর বিশেষ এই আদেশ জারি  করা হয়।

এ বছর ৬৫ (পঁয়ষট্টি) বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিক ব্যতীত সকল ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ কর বছরে বেশ কয়েক শ্রেণির করদাতাগণকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাদকতা হতে অব্যাহতি দেয়া হলেও তাঁরা ইচ্ছা পোষণ করলে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। 
 
করদাতার পক্ষে তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও এবছর অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এছাড়া, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী করদাতাগণের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাদকতা না থাকলেও তাঁর  পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল এড্রেস ইত্যাদি তথ্য [email protected] ই-মেইলে প্রেরণ করে আবেদন করলে আবেদনকারীর ই-মেইলে OTP এবং  Registration Link প্রেরণ করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী করদাতাগণও ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করত: সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। 
 
কোন ধরনের কাগজপত্র বা দলিলাদি আপলোড না করে করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে সহজে ঝামেলাহীনভাবে ঘরে বসেই ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি)-এর মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করে  ই-রিটার্ন দাখিল করে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-রিটার্ন দাখিলের একনলেজমেন্ট স্লিপ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখপূর্বক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর সনদ প্রিন্ট নিতে পারেন। ফলে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশী করদাতার কাছে ই-রিটার্ন দাখিল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
 
ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সহজবোধ্য করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের ন্যায় এ বছরেও সম্মানিত করদাতাদেরকে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। করদাতাগণ ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বছর করদাতার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি তথা আয়কর আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং চার্টার্ড সেক্রেটারিজগণকে ও ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সব ব্যক্তি করদাতাদেরকে ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য অনুরোধ করছে।  আজ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখের বেশি ব্যক্তি করদাতা এ বছর অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন। 
নাজমুল //
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ
  • রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ল
  • আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ল এক মাস