কুড়িগ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা
Published: 26th, November 2025 GMT
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সায়দাবাদ ঘাট থেকে বকবান্ধা ব্যাপারীপাড়ায় নৌকায় যেতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগে। সড়কপথে সেখানে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বাংলাদেশে ঢুকে জিঞ্জিরাম নদটি ওই এলাকায় এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। এর দুই তীরে এখন শর্ষে, মাষকলাই ও ভুট্টার বিস্তীর্ণ খেত। সেই সঙ্গে এখানে–সেখানে টানানো মাছ ধরার জাল দেখে অনুমান করা যায়, অঞ্চলটির মানুষের জীবনযাত্রার প্রধান নির্ভরতার মাধ্যম এই নদ। কিন্তু জিঞ্জিরামের শান্ত সৌন্দর্যের ভেতর লুকিয়ে আছে ভয়ও।
উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের বকবান্ধা গ্রামের লোকজন কৃষি, মাছ ধরা ও দিনমজুরির আয়ে সংসার চালান। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উজানের অতিবৃষ্টিতে ঢল নামে ভাটির জিঞ্জিরামে। তখন নদটি বেশ আগ্রাসী হয়ে ওঠে; ভাঙনে হারিয়ে যায় ঘরবাড়ি, জমিজমা কিংবা শেষ সম্বলটুকুও।
বকবান্ধা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে নদের ভাঙন নতুন কোনো সংকট নয়। তবে ২০২৪ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া এক প্রচেষ্টায় সাময়িকভাবে কমে যায় জিঞ্জিরাম নদের তীরের মানুষের সংকট। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশের ‘ট্রোসা–২’ প্রকল্পের সহায়তায় নদের তীরের বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি–পেশার মানুষ একসঙ্গে ‘নদী বৈঠক’ করেন। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, বড় বাঁধ নয়; বরং দ্রুত কার্যকর ও স্বল্প খরচের সমাধানের দিকে যেতে হবে। এ থেকে বাঁশের বান্ডাল (বেড়া) তৈরির সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তাঁদের চাঁদার টাকা, ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা ও প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কারিগরি পরামর্শে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৬০০ মিটার এলাকায় ২৭টি বাঁশের বান্ডাল স্থাপন করা হয়। বান্ডালগুলো স্রোতকে মাঝপথে প্রতিহত করে তীরের দিকে চাপ কমাতে সাহায্য করে।
তবে নৌযান চলাচল, বর্ষার অতিরিক্ত পানির স্রোত ও উজানের পাহাড়ি ঢলের তীব্রতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা বুঝতে পারেন, শুধু বান্ডালই ভাঙন ঠেকাতে যথেষ্ট নয়। ৪ জুন স্থানীয় ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) গিয়ে জিও ব্যাগের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইয়ে বকবান্ধায় জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। পরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা এগুলো দিয়ে বান্ডালের পাশেই আরও মজবুত সুরক্ষা বলয় তৈরি করেন। এতে অন্তত ৪০০ পরিবার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে দাবি একাধিক বাসিন্দার।
গত শনিবার বকবান্ধা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জিঞ্জিরাম নদের তীরে বাঁশের বান্ডাল ঘিরে বাঁধসংলগ্ন বসতভিটায় সবজি রোপণের কাজ করছেন আনুজা বেগম (৫০)। তিনি বলেন, জিঞ্জিরামের ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে এলাকার সবাই চাঁদা দিয়েছেন। এরপর তাঁরা স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন।
আনুজার ভাষ্য, এলাকার ধনী–গরিব সব ঘর থেকে টাকা তোলা হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা ওঠে। পরে ইউনিয়ন পরিষদ এক লাখ টাকা দেয়। মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বান্ডাল বানিয়েছেন। প্রকল্প থেকেও টাকা ও কারিগরি সহায়তা পেয়েছেন সবাই।
অস্থায়ী এই উদ্যোগের কারণে জিঞ্জিরাম নদের তীরে ভাঙন কমে বাসিন্দাদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে আশঙ্কাও আছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ঞ জ র ম নদ নদ র ত র বকব ন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সুপারকম্পিউটারের হিসাবে এবার লিগ জিতবে আর্সেনাল, অন্য কোন দলের সম্ভাবনা কেমন
নভেম্বরের আন্তর্জাতিক বিরতি শেষে ফিরে প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকা যেন বিশাল এক ঝাঁকুনি খেল। ইংলিশ ফুটবলের ‘বিগ সিক্স’-এর চার দলই এই সপ্তাহে জয়হীন। হেরে গেছে ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, টটেনহাম ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
সিটির টানা চার ম্যাচের জয়রথ থেমেছে সেন্ট জেমস পার্কে। হার্ভি বার্নসের জোড়া গোলে নিউক্যাসলের কাছে তারা হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। লিভারপুলও অ্যানফিল্ডে নটিংহাম ফরেস্টের কাছে হেরেছে ৩-০ গোলে। টানা সাত ম্যাচে মাত্র এক জয় পাওয়া বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা নেমে গেছে ১২ নম্বরে।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যর্থতার সুযোগে আরও এগিয়ে গেছে আর্সেনাল। টটেনহামকে ৪-১ গোলে হারিয়ে শীর্ষে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করেছে তারা। চেলসি বার্নলিকে হারিয়েছে ২-০ গোলে। কিন্তু ইউনাইটেড হোঁচট খেয়েছে দুর্বল এভারটনের কাছে। ১-০ গোলে হেরে তারা এখন ১২ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকার ১০ নম্বরে।
আরও পড়ুনলিভারপুল কেন এত খারাপ খেলছে, আর কি লিগ জেতার আশা আছে২৪ নভেম্বর ২০২৫চারটি বড় দলের এই হোঁচটের পর প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার দৌড় কীভাবে এগোতে পারে, তার হিসাব করেছে অপ্টার সুপারকম্পিউটার। অপ্টার হিসাব অনুযায়ী আর্সেনালই এখনো শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার। সুপারকম্পিউটার মিকেল আরতেতার দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে ৭৬.৬৫ শতাংশ। অনুমান করা হচ্ছে, মৌসুম শেষে তাদের পয়েন্ট হবে প্রায় ৮১।
অন্যদিকে গত বছর তৃতীয় স্থানে থেকে লিগ শেষ করা সিটিজেনদের জন্য এবার দ্বিতীয় স্থানে ফেরাটা হয়তো এক ধাপ অগ্রগতি হবে। কিন্তু এই গ্রীষ্মে ২৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার খরচ করেও যদি পয়েন্টের দিক থেকে কোনো উন্নতি না হয়, তবে তা হতাশাজনকই বটে। এই সপ্তাহের হার তাদের শিরোপা জেতার সম্ভাবনাকে কমিয়ে এনেছে মাত্র ১৩.৬৪ শতাংশে। মনে হচ্ছে, সিটির বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ এবার জলে গেল!
শিরোপা দৌড়ে আছে ম্যানচেস্টার সিটিও