রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনবিষয়ক আইনে পরিবর্তন চায় গণ অধিকার পরিষদ
Published: 3rd, July 2025 GMT
বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিদ্যমান আইন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ কথা জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান।
মামলার জট কমাতে ও বিচারপ্রক্রিয়া সহজ করতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। এ বিষয়ে শাকিল উজ্জামান বলেন, জনগণ যেন সহজেই আইনের মাধ্যমে বিচার পায়, তাই রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের বিকল্প নেই।
বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেন গণ অধিকার পরিষদের এই নেতা। এ বিষয়ে দলের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমে ক্ষমা প্রদর্শনসংক্রান্ত একটি বোর্ড অথবা কমিটি গঠন করা হোক। এই বোর্ড বা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদর্শন করবেন, যা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুনউচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত’ করতে হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাড়ি ফিরল মোস্তফার নিথর দেহ, অন্ধকার নেমে এল সাত সদস্যের পরিবারে
সন্ধ্যায় বাজার হাতে নিয়েই বাড়ি ফেরার কথা ছিল গোলাম মোস্তফার। পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) বাবার ওষুধ, বৃদ্ধ মায়ের সেবা, স্ত্রী-সন্তানের মুখের হাসি—সবই তো তাঁর কষ্টার্জিত আয়ের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। প্রতিদিনের মতো ইজিবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন ভোরে। কিন্তু সংসারের টানেই ঘরে ফেরা সেই সন্ধ্যাটা হয়ে উঠল তাঁর জীবনের শেষ সন্ধ্যা। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বেপরোয়া গতির এক মোটরসাইকেলের আঘাতে নিথর দেহ হয়ে ফিরলেন তিনি। তাতে অন্ধকার নেমে এল সাত সদস্যের পরিবারে।
শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি ফেরার পথে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ব্রাদার্স হিমাগারের সামনে মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান গোলাম মোস্তফা। তাঁকে হারিয়ে পুরো পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গোলাম মোস্তফার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উত্তর রহিমাপুর জয়বাংলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ইসহাক আলীর একমাত্র ছেলে।
পরিবার, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত গোলাম মোস্তফার বাবা ইসহাক আলীর জমিজমা নেই। একমাত্র ছেলেকে সিলেটে রিকশা চালিয়ে বড় করেছেন ও জীবিকা নির্বাহ করেছেন। বাবার পর সংসারের হাল ধরেন গোলাম মোস্তফা। তাঁর সহায়সম্বল বলতে দুই শতক জমির ওপর টিনের দুটি ঘর ও আয়ের একমাত্র অবলম্বন ইজিবাইকটি। প্রতিদিন ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়ে সাত সদস্যের পরিবার চলত। গোলাম মোস্তফার বাবা ইসহাক আলী দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁর বড় ছেলে মামুন মিয়া স্থানীয় মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে মাওয়া মণি সপ্তম শ্রেণিতে এবং আরেক ছেলে আবদুর রহমান হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র (৯)।
বাজার নিয়া যে বাড়ি আসির চাইল। কোনঠে বাজার। ওমরা কেন কথা কয় না। কায় ওমাক মারি ফেলাইল।আবেদা বেগম, গোলাম মোস্তফার স্ত্রীপুলিশ জানায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তারাগঞ্জ চৌপথী থেকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক দিয়ে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন গোলাম মোস্তফা। মহাসড়কের ব্রাদার্স হিমাগারের সামনে ইজিবাইক নিয়ে সড়ক পার হওয়ার সময় পেছন থেকে দ্রুতগতিতে একটি মোটরসাইকেল এসে তাঁকে ধাক্কা দেয়। এতে গোলাম মোস্তফা ইজিবাইক থেকে সড়কে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে গোলাম মোস্তফার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। স্ত্রী–সন্তানেরা আহাজারি করছেন। প্রতিবেশী-স্বজনে পুরো বাড়ি ভরে গেছে। সবার চোখেমুখে কান্নার ছাপ। বাড়ির এক কোণে নির্বাক তাকিয়ে আছেন গোলাম মোস্তফার বাবা ইসহাক আলী। একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বিলাপ করতে থাকেন, ‘মুই মরনু হয়, তা–ও মোর বাবাটার যদি জানটা বাঁচিল হয়, তাহলে তো ছাওয়াগুলোক দেখার লোক থাকিল হয়। এ্যালায় কায় মোর ওষুধ আনবে, কায় ছাওয়ার ঘরে খাওন-খোড়াক দিবে। কেমন করি সংসার চলবে, হামরা বাঁচমো কেমন করি কন।’
গোলাম মোস্তফার স্ত্রী আবেদা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘বাজার নিয়া যে বাড়ি আসির চাইল। কোনঠে বাজার। ওমরা কেন কথা কয় না। কায় ওমাক মারি ফেলাইল।’ এ কথা বলেই তিনি মূর্ছা যান।
গোলাম মোস্তফার মা মোসলেমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। এরপর কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘এ্যালা কায় হামাক দেখবে, কায় মাও কয়া ডাকবে, ছোট ছোট নাতি-নাতনিগুলো যে এতিম হয়া গেল। ওমাক কায় পড়ার খরচ দিবে। কেমন করি হামার চুলা জ্বলবে।’
প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ইজিবাইক চালিয়ে অনেক কষ্ট করে মোস্তফা ভাই বাবা-মা স্ত্রী সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দেন। এভাবে তাঁর মৃত্যু হবে কল্পনা করতে পারছি না। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মোস্তফা ভাই। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। কীভাবে ছয় সদস্যের সংসার চলবে।’
ইউপি সদস্য মোনায়েম খান বলেন, গোলাম মোস্তফার পরিবারের অবস্থা খুবই করুণ। ইজিবাইক চালিয়ে তাঁর সংসার চলছিল। এক দিন গাড়ি নিয়ে বের না হলে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত জোটে না। তাঁর ছোট ছোট তিন ছেলে-মেয়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল। এমন মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল-ইজিবাইক সংঘর্ষে ইজিবাইকের চালক নিহত হয়েছেন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মোটরসাইকেলটি জব্দ করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।