গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলেছে ইসরায়েল, এর মধ্যেই হামলায় নিহত ৫০
Published: 27th, July 2025 GMT
ইসরায়েল গতকাল শনিবার জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলেছে। পাশাপাশি দেশটি ত্রাণসহায়তার জন্য মানবিক করিডর খোলার উদ্যোগ নিয়েছে।
ফিলিস্তিনি এ ভূখণ্ডে খাদ্যসংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল এ কথা জানাল।
বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা আকাশ থেকে এক দফা ত্রাণসামগ্রী ফেলার কাজ সম্পন্ন করেছে।
এর আগে ইসরায়েল বলেছে, জাতিসংঘের ত্রাণবাহী গাড়িবহরগুলো যাতে গাজায় খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে পারে, সে জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ইচ্ছাকৃত দুর্ভিক্ষ ঘটানোর মিথ্যা দাবি খণ্ডন হবে।
ইতিমধ্যে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, আজ রোববার সকালে গাজার নির্দিষ্ট অংশে ত্রাণ বিতরণ সহজ করতে ‘মানবিক বিরতি’ কার্যকর হবে।
তবে মানবিক সহায়তা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যসংকট মোকাবিলায় আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ যথেষ্ট নয়। স্থলপথে আরও বেশি ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
গত ২ মার্চ গাজার ওপর পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। মে মাসের শেষ দিকে দেশটি আবার স্বল্প পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ চালু করার অনুমতি দেয়।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) জানিয়েছে, তারাও গাজায় আবার আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু করবে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, দেশটি গাজায় ত্রাণ সরবরাহে জর্ডানসহ অন্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে।
আরও পড়ুনগাজাবাসীর জন্য তাঁরা জাহাজে এনেছিলেন ত্রাণ, ধরে নিয়ে গেল ইসরায়েল১ ঘণ্টা আগেঅন্যদিকে ইসরায়েল যখন আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা বা মানবিক করিডর খোলার উদ্যোগের কথা জানিয়েছে, তখন ফিলিস্তিনি বেসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর বলেছে, সবশেষ ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে আরও ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কিছু মানুষ ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে নিহত হন।
আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) জাহাজ হান্দালাকে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, জাহাজটির আরোহীদের ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় জাহাজটি গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল।
বিবৃতিতে এফএফসি জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজটিতে থাকা সব ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে জাহাজটির সঙ্গে সংস্থাটির আর কোনো যোগাযোগ নেই।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সম্প্রতি মানবিক পরিস্থিতি ভীষণভাবে খারাপ হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শিশুদের মধ্যে চরম অপুষ্টির বিষয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছে।
সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৭৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।
আরও পড়ুনগাজায় প্রতি তিনজনে একজন না খেয়ে দিন পার করছেন: জাতিসংঘ২৬ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে ২২১ আইনপ্রণেতার চিঠি১২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ম নব ক জ হ জট
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’