নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় অমাবস্যা ও নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষের জনজীবন। উপজেলার প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুদিন বন্ধ থাকার পর হাতিয়ায় সঙ্গে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। নিঝুম দ্বীপসহ নিম্নাঞ্চল থেকে জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে।

রবিবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে দ্বীপটির সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ শুরু হয়। উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে সি ট্রাক নলচিরা ঘাটে পৌঁছেছে। দুপুরের দিকে নলচিরা ঘাট থেকে যাত্রীবাহী এক ট্রলার চেয়ারম্যান ঘাটে পৌঁছায়।

স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ও কাঁচা বাড়ি-ঘরের। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষেরা দুর্ভোগে পড়েছেন। জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধের বাইরের বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। জোয়ারে সুখচর ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। এ সব এলাকায় জোয়ারের পানিতে বসতঘর, রান্নাঘর, আঙিনা, রাস্তাঘাট ও মাছের ঘের নিমজ্জিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:

সেন্টমার্টিনে তিনদিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ, খাদ্য সংকট

অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত  

এছাড়া নিঝুম দ্বীপের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়েছে।  উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দমারচর, ঢালচর, চরগাসিয়া, নলের চর, বয়ার চর, চর আতাউর ও মৌলভীর চর এই চরাঞ্চলগুলোতেও জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অমাবস্যা ও বঙ্গোপসাগারে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে তুপানিয়া, আল-আমিন গ্রাম ও নলচিরা এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দিন জানান, জোয়ারের পানিতে এখানকার বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ শুরু হয়েছে। 
 

ঢাকা/সুজন/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ত হয় ছ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ