সড়ক পরিবহন খাতের মাফিয়া চক্রের বিরোধিতার কারণে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন ও বিভিন্ন নির্দেশনা কার্যকর হতে পারেনি। সেই মাফিয়া চক্র এখন মাঠে না থাকলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনার কাজে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন বন্ধের সরকারি নির্দেশনা দিয়েও মালিক-শ্রমিক সংগঠনের বিরোধিতার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস–ট্রাকের সংখ্যাই ৮০ হাজার। অন্যান্য আরও অনেক এমন লক্কড়ঝক্কড় ও মেয়াদোত্তীর্ণ যান আছে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে প্রত্যাশা ছিল সড়ক পরিবহনেও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, আইনটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু ১১ মাস পরও সড়ক পরিবহনে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি।
গত বছরের অক্টোবরে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের নিবন্ধন বাতিল করে সড়ক থেকে প্রত্যাহার ও সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে ধ্বংস করা হবে। সংশ্লিষ্ট পরিবহনমালিকেরা যাতে নতুন যানবাহন কিনতে পারেন, সে জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথাও বলা হয় ওই বৈঠকে। এ বিষয়ে মালিকদের ৩১ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়।
এই পটভূমিতে সরকার গত রোববার থেকে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ৯টি অঞ্চল ধরে অভিযান শুরু করে। অন্যদিকে মালিকপক্ষ আট দফা দাবি পেশ করে সরকারকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করে। তাদের দাবির মধ্যে আছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারা সংশোধন, পুরোনো বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা, সেটা না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা। সরকার এসব দাবি না মানলে ১২ আগস্ট থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালিকপক্ষ। এটা তাদের অদ্ভুত আবদারই বটে।
সড়ক পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরে নানা বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। যখনই সরকার দুর্ঘটনা রোধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়, তারা বিরোধিতা করে। এর মাধ্যমে মালিকপক্ষ সড়ক পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখতে চায় কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থাকলে যানজট হয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেছেন, মেয়োদোত্তীর্ণ যানবাহন চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো এবং মানুষের মৃত্যু তো হত্যার শামিল। এই হত্যাকাণ্ড চলতে দেওয়া যায় না।
অতএব মালিকপক্ষের উচিত সড়ক থেকে যত দ্রুত সম্ভব মেয়াদোত্তীর্ণ সব যানবাহন সরিয়ে ফেলা। অতীতে ঢাকা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে অন্যত্র চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতো। এটা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাহন ঢাকার জন্য যেমন, তেমনি ঢাকার বাইরের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে মালিকদের পক্ষ থেকে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়ন দ্রুত দেওয়ার যে দাবি জানানো হয়েছে, তা আমরা সমর্থন করি। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ার পরও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার পরও দিনের পর দিন চালক ও মালিকদের ধরনা দিতে হবে কেন? আর ধরনার সঙ্গে উৎকোচ তথা দুর্নীতির যে নিগূঢ় সম্পর্ক আছে, তা–ও অজানা নয়।
মালিকপক্ষের ন্যায্য দাবিদাওয়া অবশ্যই সরকারকে মানতে হবে। তাই বলে মালিকপক্ষ মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন প্রত্যাহারে বাধা দেবে কিংবা ধর্মঘটের নামে যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করবে, এটা কোনোভাবে চলতে দেওয়া যায় না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক পর বহন ম ল কপক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবহনমালিকদের অদ্ভুত আবদার
সড়ক পরিবহন খাতের মাফিয়া চক্রের বিরোধিতার কারণে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন ও বিভিন্ন নির্দেশনা কার্যকর হতে পারেনি। সেই মাফিয়া চক্র এখন মাঠে না থাকলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনার কাজে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন বন্ধের সরকারি নির্দেশনা দিয়েও মালিক-শ্রমিক সংগঠনের বিরোধিতার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস–ট্রাকের সংখ্যাই ৮০ হাজার। অন্যান্য আরও অনেক এমন লক্কড়ঝক্কড় ও মেয়াদোত্তীর্ণ যান আছে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে প্রত্যাশা ছিল সড়ক পরিবহনেও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, আইনটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু ১১ মাস পরও সড়ক পরিবহনে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি।
গত বছরের অক্টোবরে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের নিবন্ধন বাতিল করে সড়ক থেকে প্রত্যাহার ও সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে ধ্বংস করা হবে। সংশ্লিষ্ট পরিবহনমালিকেরা যাতে নতুন যানবাহন কিনতে পারেন, সে জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথাও বলা হয় ওই বৈঠকে। এ বিষয়ে মালিকদের ৩১ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়।
এই পটভূমিতে সরকার গত রোববার থেকে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ৯টি অঞ্চল ধরে অভিযান শুরু করে। অন্যদিকে মালিকপক্ষ আট দফা দাবি পেশ করে সরকারকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করে। তাদের দাবির মধ্যে আছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারা সংশোধন, পুরোনো বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা, সেটা না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা। সরকার এসব দাবি না মানলে ১২ আগস্ট থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালিকপক্ষ। এটা তাদের অদ্ভুত আবদারই বটে।
সড়ক পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরে নানা বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। যখনই সরকার দুর্ঘটনা রোধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়, তারা বিরোধিতা করে। এর মাধ্যমে মালিকপক্ষ সড়ক পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখতে চায় কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থাকলে যানজট হয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেছেন, মেয়োদোত্তীর্ণ যানবাহন চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো এবং মানুষের মৃত্যু তো হত্যার শামিল। এই হত্যাকাণ্ড চলতে দেওয়া যায় না।
অতএব মালিকপক্ষের উচিত সড়ক থেকে যত দ্রুত সম্ভব মেয়াদোত্তীর্ণ সব যানবাহন সরিয়ে ফেলা। অতীতে ঢাকা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে অন্যত্র চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতো। এটা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাহন ঢাকার জন্য যেমন, তেমনি ঢাকার বাইরের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে মালিকদের পক্ষ থেকে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়ন দ্রুত দেওয়ার যে দাবি জানানো হয়েছে, তা আমরা সমর্থন করি। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ার পরও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার পরও দিনের পর দিন চালক ও মালিকদের ধরনা দিতে হবে কেন? আর ধরনার সঙ্গে উৎকোচ তথা দুর্নীতির যে নিগূঢ় সম্পর্ক আছে, তা–ও অজানা নয়।
মালিকপক্ষের ন্যায্য দাবিদাওয়া অবশ্যই সরকারকে মানতে হবে। তাই বলে মালিকপক্ষ মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন প্রত্যাহারে বাধা দেবে কিংবা ধর্মঘটের নামে যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করবে, এটা কোনোভাবে চলতে দেওয়া যায় না।