প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, তিনটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষি করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে এই চুক্তির কোনো অংশ পরিবর্তন, পরিমার্জন বা বাতিল করতে পারবে। তবে পাল্টা শুল্ক ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন খলিলুর রহমান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষি করতে যাওয়া প্রতিনিধিদলকে বিটিএমএ এই সংবর্ধনা দেয়।

উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিনটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে দর–কষাকষি করেছি। প্রথমটি হচ্ছে আমরা নির্বাচিত সরকার নই। ফলে আমরা পরবর্তী সরকারের ওপরে কোনো দায় বা বাধ্যবাধকতা (অবলিগেশন) রেখে যেতে পারি না। সুতরাং, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকতে হবে; তারা এটার পরিবর্তন, পরিমার্জন কিংবা বাতিল করতে পারবে। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি এমন একটা চুক্তি নিয়ে, যেটা বাতিলযোগ্য।’

খলিলুর রহমান বলেন, ‘দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে যতটুকু অবলিগেশন (বাধ্যবাধকতা) আমরা বহন করতে পারব, তার চেয়ে বড় কোনো দায় নেব না। সত্যি বলতে আমরা সবগুলো বাধ্যবাধকতা মেনে নিতে পারিনি। এটির প্রতিফলন শুল্কের হারেও পড়েছে। আর তৃতীয় বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এটি ছিল শুধুই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। এখানে আমরা তৃতীয় কোনো দেশের উল্লেখ করতে পারব না। আমরা কোনো ভূরাজনৈতিক ফাঁদে পা দিতে চাই না।’

নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনটি বিষয়ে সবাইকে স্পষ্ট করতে চাই। এক.

যুক্তরাষ্ট্রের সুতা ব্যবহার করলে সেটি বাদ দিয়েই শুল্ক আরোপ করা হবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত থাকতে পারেন। দুই. সব প্রতিযোগী দেশের শুল্কহার এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে বাংলাদেশের শুল্কহার প্রতিযোগিতামূলক থাকবে। তিন. আরেকটি বিষয় আছে, সেটি এখানে প্রকাশ্যে বলছি না। তবে মূল বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের আরও কিছু আলোচনা বাকি আছে। সেটি সফল হলে আমরা আরও কিছু শুল্ক ছাড় পেতে পারি।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে এ নিয়ে ৪৫ মিনিট আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁকে বলেছি এই দর–কষাকষিকে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।’

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষির ক্ষেত্রে আমাদের অনেক পরিণামদর্শিতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ওপরে অনেক চাপ ছিল। কিন্তু আমরা সব সময়ই অংশীজনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি, চলমান আছে। আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজন হলে আমরা আবার যুক্তরাষ্ট্রে যাব।’

পাল্টা শুল্কের বিষয়টি আপাতত সমাধান হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ। আমি মনে করি, এটি ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিষয়টির জন্য কর্মপরিকল্পনা না করে এটিকে একটি টাইমবম্ব হিসেবে রেখে গেছে।’

অনুষ্ঠানে বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজীজ রাসেল বলেন, ‘আমরা যারা সুতা বানাই, তাদের কাছে ইতিমধ্যে বিদেশি ক্রেতাদের থেকে কোয়ারি (জিজ্ঞাসা) আসছে। তাতে বুঝতে পারছি, এবার বোধ হয় ব্যবসাটা হবে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলো বসে থাকবে না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ এই খাতের যন্ত্র উৎপাদন করে। তারা এই ব্যবসা বন্ধ করতে পারবে না। এ জন্য দেশটির সরকার ক্রেতাদের অর্থ সহায়তা ও প্রণোদনা দিচ্ছে, শ্রমিকের বেতন দিচ্ছে। আমাদেরও বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।’

শওকত আজীজ আরও বলেন, পাল্টা শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বেসরকারি খাতের সঙ্গে যে সহযোগিতার মনোভাব দেখাচ্ছে, তা নজিরবিহীন। আগে কখনো এমন দেখা যায়নি। সরকার ব্যবসায়ীদের প্রতি, বিনিয়োগের প্রতি সুনজর দিলে দ্রুততম সময়ে কর্মসংস্থান বাড়বে।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষির এক পর্যায়ে আমরা বেশ শঙ্কিত ছিলাম। কারণ, শুল্ক কমাতে না পারলে আমাদের ব্যবসা হারানোর শঙ্কা তৈরি হতো। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কথা বলেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, উদ্বেগ জানিয়েছেন। এ নিয়ে কিছু জায়গায় ভুল–বোঝাবুঝিও হয়েছে। তবে আমরা যা-ই বলেছি, তা সচেতন নাগরিক হিসেবে বলেছি এবং করেছি।’

মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সুতা ব্যবহার করলে পাল্টা শুল্কে ছাড় পাওয়া যাবে কি না; পাওয়া গেলে সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা যথাযথ তথ্য পাচ্ছি না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ করেছি। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পাল্টা শুল্কহার যে পরিমাণ কমেছে, তাতে আমরা খুব বেশি তৃপ্ত না৷ আমরা আরও কম শুল্ক আশা করি। তবে আপাতত এটাই তৃপ্তি যে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমরা কম সুবিধায় নেই। আমরা এখনো আলোচনার মধ্যে আছি। পাল্টা শুল্কের আলোচনায় ব্যবসায়ীরা যেভাবে সহযোগিতা করেছে, সেটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও ভালো ফল আসবে বলে আশা করি।’

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবসা ও শিল্প খাতে আরও সংকট রয়েছে। অনেক কারখানা গ্যাস পাচ্ছে না, গ্যাসের তীব্র সংকটে ভুগছে তারা, ব্যাংকিংয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া এখনো আমদানি-রপ্তানিতে বড় বাধা হিসেবে রয়েছে কাস্টমস বিভাগ।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, ‘পাল্টা শুল্কহার কমায় আমরা সরকারের ও নেগোসিয়েশন দলের ওপরে খুবই খুশি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র স অন ষ ঠ ন ব যবস য় সরক র র উপদ ষ ট পরবর ত আম দ র ন বল ন আরও ক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

চার টুকরো করে যুবককের লাশ খালে ফেলেন দম্পতি

কুমিল্লার তিতাসে নজরুল ইসলাম ভূইয়া (৩৫) নামে এক যুবককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন দম্পতি। এরপর তারা মরদেহটি চার টুকরো করে আলাদা বস্তায় ভরে খালে ফেলে দেন। এ ঘটনায় জড়িত স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

রবিবার (১০ আগস্ট) ভোরে তিতাস উপজেলার মজিদপুর এলাকার বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেল পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করে নিহত যুবকের কাটা দুইটি হাত উদ্ধার করে পুলিশ। গত চারদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন নজরুল। 

তিতাস থানার ওসি মো. শহিদ উল্লাহ আসামি গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

রংপুরে গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

পাবনার সেলিম গাজীপুরে এসে হন স্বাধীন, পাল্টান বাবার নামও

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মজিদপুর এলাকার মৃত মজু মিয়ার ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ হোসেন (৩২) এবং তার স্ত্রী স্মৃতি আক্তার (২৭)।

পুলিশ জানায়, গত ৬ আগস্ট রাতে মজিদপুর ইউনিয়নের শাহাবৃদ্ধি গ্রামের হানিফ ভূইয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম ভূইয়া নিখোঁজ হন। নজরুল পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান না পেয়ে তিতাস থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন নজরুলের বাবা।

পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমেই মোবাইল ট্র্যাকিং করে অটোরিকশাচালক হোসেনের স্ত্রী স্মৃতির মোবাইল নম্বরের সঙ্গে নজরুলের সর্বশেষ যোগাযোগের তথ্য পায়। রবিবার ভোরে স্মৃতি ও তার স্বামী হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নজরুলকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন দম্পতি। 

পুলিশ জানায়, নজরুলকে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা জানান, স্মৃতির সঙ্গে নজরুলের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল এমনটি সন্দেহ করতেন হোসেন। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে নজরুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

গত ৮ আগস্ট রাতে নজরুলকে ফোন করে ডেকে আনেন ওই দম্পতি। ঘরে প্রবেশের পর নজরুলকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন হোসেন ও তার স্ত্রী। পরে নজরুলের লাশ চার টুকরো করে চারটি আলাদা বস্তায় ভরে মরদেহের খালে ফেলে দেন তারা। 

অভিযুক্তদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিবার বিকেলে মজিদপুর গ্রামের উত্তর পাশের খাল থেকে স্থানীয় জেলেদের দিয়ে মরদেহের খণ্ডিত দুইটি হাত উদ্ধার করা হয়। অন্য টুকরোগুলো এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তিতাস থানার ওসি মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, “হত্যাকারীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মরদেহের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অংশগুলো ডুবুরি দিয়ে খোঁজা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ