রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপির অনুমোদন, শিক্ষার্থীদের উল্লাস
Published: 17th, August 2025 GMT
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনসহ ৬ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অনশন ভেঙে আনন্দ উল্লাস করছেন শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড.
এ খবর পেয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পানি পান করান রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া। এ সময় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। আগামীকাল থেকে ক্লাসে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তারই রেখে যাওয়া ২২৫ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়ে প্রায় ৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এতদিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হয়নি।
স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে গত ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বয়কটের মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন। গত শনিবার (১৬ আগষ্ট) দুপুরে আমরণ গণঅনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অনশনে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে প্রতীকী অনশন করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও।
এদিকে, তাদের এ কর্মসূচিতে সংহতি জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বহল বাড়ি ও বুড়ি পোতাজিয়া সচেতন নাগরিক ফোরাম, শাহজাদপুর সচেতন নাগরিক ফোরাম, মালিথা স্মৃতি পরিষদ এবং শাহজাদপুর স্বার্থ রক্ষা কমিটি।
ঢাকা/রাসেল/হাবিবুর/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাতিল ঘোষণা করা ‘পোষ্য কোটা’ ভিন্ন নামে ফিরছে, তবে যুক্ত হচ্ছে শর্ত
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। তবে ‘প্রতিষ্ঠানিক সুবিধার’ নামে কিছু শর্ত যুক্ত করে সেই পোষ্য কোটা পুনরায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপাচার্য নিজের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল ঘষণার পর আবার সেটা ভিন্ন নামে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত প্রতারণা ও বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল। তবে প্রশাসন বলছে, পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা রয়েছে, সেটার আওতায় তাঁদের সুন্তানদের কিছু সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির সভায় পোষ্য ভর্তিতে পূর্বের নিয়মগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় সংস্কার করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু তাঁদের সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে এ সুবিধা ভোগ করবেন। আগে এই কোটার আওতায় ভাই, বোন এবং স্ত্রীও ছিলেন।
আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ৪০ জন পোষ্য ভর্তি হতে পারবেন এবং একই বিভাগে সর্বোচ্চ চারজন পোষ্য ভর্তির সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া একজন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এ সুবিধা শুধু একজন সন্তানের ক্ষেত্রে পাবেন এবং যে বিভাগে পোষ্যদের মা–বাবা চাকরি করেন, সে বিভাগে ভর্তি করাতে পারবেন না। তবে পোষ্য ভর্তিতে পাস নম্বর কত হবে, সেটা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মতভেদ থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা শাখা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা প্রথম আলোকে বলেন, পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে পাস নম্বর কত হবে, সেটা নিয়ে শিক্ষকেরা একমত হননি, বিধায় বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পোষ্য ভর্তির ক্ষেত্রে বাকি বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পোষ্য কোটাকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আমৃত্যু গণ–অনশন শুরু করেন ১৪ জন শিক্ষার্থী। ১৯ ঘণ্টা অনশনের পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন রাতেই পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত জানান উপাচার্য।
সে সময় উপাচার্য নতুন যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন সেগুলো হলো—পোষ্য কোটায় মোট ৪০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে এবং শুধু সন্তানের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পোষ্য কোটায় পাস মার্ক করা হয় ৪০ শতাংশ।
প্রশাসনের ওই সংস্কারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ৪ ফেব্রুয়ারি অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই দিন প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সাঁটানো পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে দুই পক্ষের উত্তেজনার পর শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। একপর্যায়ে উপাচার্য বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনঅনশনের মুখে পোষ্য কোটায় কিছু পরিবর্তন এনেছে জাহাঙ্গীরনগরের প্রশাসন০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ওই কোটা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পোষ্য কোটা স্থগিত রেখেছিলাম। কিন্তু এটার ক্ষেত্রে কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারণ, ভর্তির বিজ্ঞপ্তির সময় পোষ্যদের বিষয়ে অর্ডিন্যান্স ছিল। যদি বাতিল করা হয় তাহলে যে কেউ রিট করলে এটা ফিরে আসত। এ বছর বাতিল করা সম্ভব নয়, আগামী বছর এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যাবে। তাই আমরা সংস্কার করে প্রতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় পোষ্যদের নিয়ে আসছি। তবে আগের মতো যে কেউ ভর্তি হতে পারবেন না। অনেকগুলো শর্ত দিয়েছি, যেগুলো পূরণ করেই ভর্তি হতে পারবেন এবং আসনও নির্দিষ্ট করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, শুধু অনগ্রসর শিক্ষার্থীরা কোটা ভোগ করবে। পোষ্যরা কোনোভাবেই অনগ্রসর নন। তাঁরা প্রিভিলেজড বলে আমরা মনে করি। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সবার সামনে প্রশাসন পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করে সেটা আবার ফিরিয়ে আনছে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে।’
পোষ্য কোটার জটিলতায় ক্লাস শুরুতে বিলম্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের (৫৪তম ব্যাচ) ভর্তি পরীক্ষা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়, যা শেষ হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যখন এই শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করেছে আরও আগে, সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ছয় মাস পার হলেও ক্লাস শুরু করতে পারেনি। পোষ্য কোটার হিসাব-নিকাশে ভর্তি কার্যক্রম পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ভর্তির শুরুতেই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছেন নবীন শিক্ষার্থীরা।
৫৪তম ব্যাচে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থী সামিয়া জামান বলেন, ‘আমাদের বন্ধুবান্ধব অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করে অনেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। সেখানে আমাদের এখনো ভর্তি কার্যক্রমই শেষ হয়নি। বাসায় বসে থেকে আমরা একধরনের মানসিক হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছর মোট ২৭৮ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৫৯ জন, ২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫৬ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫৪ জন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৫৬ জন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৫৩ জন ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় শুধু পাস নম্বর পেয়েই পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন কেউ কেউ।