পিআর ছাড়া বেকার পুনর্বাসন উচ্চকক্ষ চাই না: মামুনুল হক
Published: 17th, August 2025 GMT
পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষ মূলত একটি ‘বেকার পুনর্বাসন উচ্চকক্ষ অভিহিত করে তা প্রতাখ্যান করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
রবিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে ঢাকার মোহাম্মদপুরে হলি উম্মাহ মিলনায়তনে খেলাফত মজলিস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “পিআর ছাড়া যদি উচ্চকক্ষ গঠিত হয়, তবে এটি মূলত একটি বেকার পুনর্বাসন উচ্চকক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা এ ধরনের বেকার পুনর্বাসনের জন্য কোনো কক্ষ চাই না। আমরা চাই একটি কার্যকর, সত্যিকার অর্থে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক উচ্চকক্ষ।”
তিনি বলেন, “রক্তস্নাত জুলাই অভ্যুত্থানের পর সবার আশা ছিল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে চলে আসা দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির পরিবর্তন হবে।জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য গঠিত হলেও সংসদ কিভাবে গঠন হবে এ নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।সংসদ দ্বিকক্ষের হবে-এটাতে ঐকমত্য হয়েছে। তবে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। আমরা আশা করি দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান হবে এবং নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হবে।”
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক
‘হেফাজতকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না’
আগামী নির্বাচন গণঅভ্যুত্থানের সব অংশীদার রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে অনুষ্ঠিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে দলটির আমির বলেন, “আমরা আশাবাদী, এবারের নির্বাচন হবে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন রোধ করার নির্বাচন। আমরা লক্ষ্য করছি-ফ্যাসিবাদের দীর্ঘদিনের সহযোগী জাতীয় পার্টি নতুনভাবে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা সব ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে আহ্বান জানাই-ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাই সচেষ্ট হোন।”
সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় ধাপের দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন মাওলানা মামুনুল হক।
২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নতুনভাবে ৪৫টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পাশাপাশি পূর্ব ঘোষিত ২২৩টি আসনের মধ্যে ৭টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান। এই নিয়ে দুই ধাপে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সর্বমোট ২৬৮ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে।
উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শারাফাত হোসাইন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ হাদি, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন খান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদ, যুব মজলিসের সভাপতি জাহিদুজ্জামান, ঢাকা মহানগর উত্তর খেলাফত মজলিসের সহ-সভাপতি মাওলানা এহসানুল হক প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক ঐকমত য ন ল হক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।
বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।
এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’
বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।
গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।