দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি কম, ইংরেজিতে অকৃতকার্য বেশি
Published: 16th, October 2025 GMT
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। এ বোর্ডে বিগত ছয় বছরের তুলনায় এবার সর্বনিম্ন পাসের হার ও জিপিএ-৫ এসেছে। তবে দুই বিষয়েই এগিয়ে আছেন মেয়েরা। এবার বোর্ডটিতে শিক্ষার্থী পাসের হার ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহা. তৌহিদুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ফলাফলের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এবার ৬৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ৫ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৬০ হাজার ৮৮২ জন। অনুত্তীর্ণ ৪৫ হাজার ৯ জন, যা শতকরা হিসেবে ৪২ দশমিক ৫০। তবে শুধু এক বিষয়েই ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৮৪১ জন। এবার ৪৩টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেননি।
আরও পড়ুনইংরেজিতে কম পাসে যশোর বোর্ডে ‘ফল বিপর্যয়’১ ঘণ্টা আগেফলাফল ঘোষণা শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফলাফল অপেক্ষাকৃতভাবে খারাপ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় অংশ ইংরেজি বিষয়ে ফেল করেছেন এবং এক বিষয়ে ফেল করেছেন।
৪৩টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস না করার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ওই কলেজগুলোতে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই কম। এমনও কলেজ আছে যেখান থেকে মাত্র একজন বা দুজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে এসব কলেজ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান যাচাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দিনাজপুর বোর্ডে এবার পাসের হার ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। যেখানে ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৫৬, ২০২৩ সালে ৭৪ দশমিক ৪৮, ২০২২ সালে ৭৯ দশমিক ০৮, ২০২১ সালে ৯২ দশমিক ৪৩ এবং ২০২০ সালে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছিলেন। অন্যদিকে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ২৬০ জন। যেখানে ২০২৪ সালে ১৪ হাজার ২৯৫, ২০২৩ সালে ৬ হাজার ৪৫৯, ২০২২ সালে ১১ হাজার ৮৩০ এবং ২০২১ সালে ১৫ হাজার ৩৪৯ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুনসব শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে পিছিয়ে কুমিল্লা, পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন১ ঘণ্টা আগেমেয়েরা এগিয়েএ বোর্ডে গত সাত বছর ধরে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোতেই ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে থাকছেন মেয়েরা। এবার ছেলেদের পাসের হার ৫২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি বছরে মেয়েদের পাসের হার ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলেদের সংখ্যা ২ হাজার ৭৭৪ জন। অন্যদিকে ৩ হাজার ৪৮৬ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার মেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ৩৭৪ জন এবং ছেলে ৫০ হাজার ৫১৭ জন।
প্রথম স্থানে রংপুর জেলাএ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার ৬৬৬টি কলেজের পরীক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর মধ্যে পাসের হারে প্রথম স্থানে আছে রংপুর জেলা। এই জেলায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। পাসের হার ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নীলফামারী জেলা। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছেন রংপুর জেলার পরীক্ষার্থীরা। মোট ২ হাজার ৬২৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন এ জেলায়।
আরও পড়ুনবরিশালে জিপিএ–৫—এ এগিয়ে মেয়েরা, ১২ প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেননি১ ঘণ্টা আগে৪৩ কলেজে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেননিএবার ৪৩টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাসে করেননি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০টি কলেজ নীলফামারীর। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের ৯টি, ঠাকুরগাঁওয়ের ৬টি, লালমনিরহাটের ৫টি, রংপুরের ৪টি, দিনাজপুরের ৪টি, পঞ্চগড়ের ৩টি এবং গাইবান্ধা জেলার অন্তর্ভুক্ত ২টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ থ ক পর ক ষ র দশম ক ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে মিসাইলে, ভূমধ্যসাগরে জলদস্যুদের গুলিতে আমরা মরবই?
১৭ নভেম্বর প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠার একটি খবরের শিরোনাম হলো, ‘লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর উপকূলে নৌকা ডুবে ৪ বাংলাদেশির মৃত্যু’। আল–জাজিরার সূত্রে খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ১৩ নভেম্বর রাতে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি দিতে যাওয়া দুটি নৌকা লিবিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। এর মধ্যে একটি নৌকায় বাংলাদেশ থেকে আসা ২৬ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে চারজন মারা যান। অন্যদের উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের লাওখণ্ডা গ্রামে। দুজনেই তরুণ। এনামুল শেখের বয়স ২৭ আর আনিস শেখের বয়স ২৫। গত ১০ অক্টোবর তাঁরা বাংলাদেশ ছাড়েন। চার ভাইয়ের মধ্যে এনামুল ছিলেন সবার ছোট। পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতেই তাঁর এই অগস্ত্যযাত্রা। আর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন নার্সের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আনিসের। তাঁদের সংসারে সাড়ে তিন বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে।
আরও পড়ুনএত উন্নয়নের পরও কেন ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরছে আমাদের তরুণেরা২৬ আগস্ট ২০২৩ভাগ্য ফেরাতে ইতালি যাওয়ার জন্য তাঁরা মাদারীপুরের একজন দালালকে ২১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। লিবীয় রেড ক্রিসেন্টের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়ানো মৃতদেহ গাড়িতে তোলা হচ্ছে। প্রিয়জনদের লাশ দেশে কবে ফিরবে, শেষ দেখাটা দেখতে পাবেন কি না, সেটাই এখন স্বজনদের একমাত্র আর্তনাদ।
মাদারীপুরের টগবগে তরুণ মুন্না তালুকদার। মাত্র ১৯ বছরে থেমে গেছে তাঁর জীবন। সাড়ে ২২ লাখ টাকায় বডি কন্ট্রাক্ট বা শরীর চুক্তি করে ইতালি পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেই বডিটাই এখন মায়ের কাছে ফিরবে কি না, সেটাই বড় সংশয়। দালালেরা বলেছে, জলদস্যুদের গুলিতে রাজৈর উপজেলার বায়েজিদ শেখ নামের আরেক তরুণের সঙ্গে মুন্না গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে মুন্নার মা রাবেয়া বেগমের সেই আর্তিই শোনা যাচ্ছে: ‘দালাল আমার বাবারে বডি কন্ট্রাক্ট (শরীর চুক্তি) কইরা নিছে। বলছে, য্যামনে হোক, ইতালি লইয়া যাইবে। সাড়ে ২২ লাখ টাকা লইয়া ভাগছে। ওরা আমার বাবারে খারাপ নৌকায় দিয়া মাইরা ফালাইছে। দয়া কইরা আমার বাবার বডি (শরীর) আম্মেরা আইনা দেন। আম্মেগো পায় ধরি, আমার বাবার লাশটা আইনা দেন।’ (আম্মেগো পায় ধরি, আমার বাবার লাশটা আইনা দেন’ ১৯ নভেম্বর, ২০২৫)
সাড়ে ১৫ বছর বলি, আর ৫৪ বছর বলি, এতগুলো বছরের জঞ্জাল দেড় বছরে ধুয়ে–মুছে ফেলা অসম্ভব। যে তরুণদের কর্মসংস্থানের বঞ্চনা নিয়ে চব্বিশের অভ্যুত্থানের সূচনা, তাঁদের কর্মসংস্থান, জীবনমান পাল্টানোর দৃশ্যমান কোনো প্রচেষ্টা, উদ্যোগ কোথাও দেখা যায়নি। বরং নতুন সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর আবির্ভাব হতে দেখছি। আর ধীরে ধীরে বাদ পড়ে গেছেন শ্রেণি–পেশা–জাতি–লিঙ্গ নির্বিশেষে অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীরা।প্রথম আলোর মাদারীপুর প্রতিনিধি অজয় কুণ্ডুর একই প্রতিবেদনে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ইতালিযাত্রার একটা পথরেখা জানা যায়। ১২ অক্টোবর ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে ঘর ছাড়েন মুন্না। প্রথমে তাঁকে সৌদি আরবে নেওয়া হয়। পরে ওমরাহ হজ করতে যান মুন্না। হজ শেষে তাঁকে কুয়েত নেওয়া হয়। সেখানে কয়েক দিন রেখে নেওয়া হয় মিসরে। তারপর উড়োজাহাজে লিবিয়ার বেনগাজিতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে লিবিয়ার মিসরাতা শহরের নেওয়া হয়। ১ নভেম্বর মুন্নাকে লিবিয়ার উপকূল থেকে নৌকায় ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মুন্নাকে তুলে দেয় দালাল চক্র। মুন্নাকে বহন করার নৌকাটি ভূমধ্যসাগরের কিছু দূর যাওয়ার পরই মাফিয়াদের (জলদস্যুদের) হামলার শিকার হয়।’
ভাগ্য বদলাতে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পথে বাংলাদেশি তরুণদের এই আত্মহনন নতুন নয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নৌকা ডুবে ৮ বাংলাদেশি মারা যান। ২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোটের হস্তক্ষেপে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। এর পর থেকে দেশটি দারিদ্র্য ও গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে লিবিয়া হয়ে ওঠে বিশ্বের সংঘাতকবলিত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলো থেকে ইউরোপমুখী অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যতম ট্রানজিট রুট।
আরও পড়ুনটাইটানের ধনী অভিযাত্রীরা বনাম ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির হতভাগারা২৩ জুন ২০২৩আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার বরাতে ২০২৪ সালের মে মাসে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৪-২০২৪ সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত অন্তত ২৮৩ জন বাংলাদেশি লিবিয়া হয়ে ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে জীবন হারিয়েছেন। লিবিয়ায় অভিবাসী ও শরণার্থীদের আটকে নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও নিয়মিত। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশি তরুণেরা কেন এমন মরিয়া হয়ে বডি কন্ট্রাক্ট করছেন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপযাত্রা সবচেয়ে বিপজ্জনক রুটগুলোর একটি। ২০১৪-২০২৪—এই ১০ বছরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই পথে পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।
বাংলাদেশি তরুণদের জীবন বাজি রেখে ভাগ্য ফেরানোর এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ২৫ বছরের যুবক আকরাম হোসেন ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে মিসাইলের আঘাতে নিহত হওয়ার পর সবার নজরে আসে। ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখে তিনি রাশিয়ায় যান। কিন্তু দালালেরা তাঁকে রুশ সেনাবাহিনীতে ‘চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা’ হিসেবে নিয়োগ করে। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে পাঠানো হয় ইউক্রেনে। গত ১৪ এপ্রিল সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ধারদেনা করে সাত লাখ টাকা জোগাড় করে পরিবার তাঁকে পাঠিয়েছিল রাশিয়ায়।
অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা যাচ্ছেন অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। এমন ঘটনা কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশিদের নামও উঠে আসছে প্রায় সময়।