জামালপুর শহরে নদ ভরাট করে বিএনপি নেতার রাস্তা নির্মাণ
Published: 5th, December 2025 GMT
জামালপুর শহরের চালাপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা ভরাট করে আড়াআড়িভাবে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূল নদ থেকে বালু তুলে বিক্রি সহজ করতে এবং চরের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করতেই এ রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন এই পথে বালুবাহী যানবাহন চলাচল করবে।
বিএনপির ওই নেতার নাম মিজানুর রহমান। তিনি জামালপুর জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এই রাস্তা নির্মাণ কমিটির সভাপতিও মিজানুর।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শহরের পাথালিয়া থেকে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের এ শাখা মূল নদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই শাখা নদ একদম জামালপুর শহরঘেঁষা। বিভিন্ন সময় বর্ষা মৌসুমে নদে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিত। ফলে ২০১৩ সালে ভাঙন রোধে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ শাখা নদের ডান তীরে জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পরে ২০২০ সালে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের যানজট কমাতে এ শাখা নদের তীর ঘেঁষে পুরোনো ফেরিঘাট থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। এই সড়কের চালাপাকা অংশে পাউবোর বাঁধের ওপর দিয়ে বালু ফেলে এ রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিগত সরকারের আমলেও এই শাখা নদের বিভিন্ন স্থানে ভরাট করে দখল করা হয়েছে। এই শাখা নদের তমালতলা অংশেও ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা হচ্ছে। সেখানেও কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। এসব প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও রহস্যজনক কারণে দুই জেলার সীমানা জটিলতার অজুহাতে স্থানীয় প্রশাসন নদটি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও রেলিং ভেঙে ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।জাহাঙ্গীর সেলিম, সভাপতি, জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটিগত বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এ শাখা নদের তীর ঘেঁষে পুরোনো ফেরিঘাট থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত সড়কের চালাপাড়া অংশে শহর রক্ষা বাঁধের রেলিং ভেঙে বালু ফেলা হয়েছে। আর নদের দক্ষিণ পাশে শেরপুর জেলার চরপক্ষীমারী অংশে ড্রেজার মেশিনের পাইপ বসানো আছে। সেই পাইপ দিয়ে শাখা নদের মধ্যে বালু ফেলা হয়েছে। নদের মধ্যে বালু ফেলে কিছুটা ভরাটও করা আছে। ওই সড়কের ডান পাশ দিয়ে সুন্দর একটি ফুটওভার ছিল। সেটাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিকেলবেলায় লোকজন এই ফুটওভার দিয়ে হাঁটাহাঁটি করে থাকেন।
বালু ভরাটের ছবি তোলার সময় ভরাট কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন ছুটে আসেন। তাঁদের মধ্যে একজন রফিক মিয়া। তিনি বলেন, এই রাস্তা সবার জন্যই দরকার। চরের লোকজন যাতায়াত করতে পারেন না। রাস্তাটি কে নির্মাণ করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানসহ অনেকেই আছেন।
শহরের চালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এক নারী বলেন, ‘আমার বাড়ির একদম সামনেই বাঁধের রেলিং ভেঙে রাস্তাটি করা হচ্ছে। এই সড়কের নিচ দিয়ে আমার বাড়ির পানি যাওয়ার পাইপও আছে। তারা পাইপের মুখসহ ভরাট করে ফেলেছে। তাদের এভাবে রাস্তা নির্মাণে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কথাই শোনেনি। হঠাৎ এমন রাস্তা কেন?’
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের অনুমতি নিয়েই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে, যাতে পানিনিষ্কাশনে কোনো সমস্যা না হয়।’
সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হলে জামালপুর শহরের অভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নকিবুজ্জামান খান, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, জামালপুরএই রাস্তা কি বালু বিক্রির জন্য করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে মিজানুর বলেন, ‘এই ধরনের কাজের সঙ্গে আমি কখনোই যুক্ত হইনি। সত্যিকার অর্থে সেখানে অনেক গরিব মানুষ থাকে, তাদের যাতাযাতের সুবিধার্থে এই রাস্তা।’ সেখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা তো শেরপুর জেলার বাসিন্দা। তাহলে এখানে আপনি কেন রাস্তা নির্মাণ করতে গেছেন, এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর মিজানুর দিতে পারেননি।
জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও রেলিং ভেঙে ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অথচ জামালপুর, শেরপুর জেলার সীমানা জটিলতা দেখিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
জামালপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘ওই স্থানে রাস্তা নির্মাণের খবর পেয়ে, সরেজমিনে দেখে এসেছি। সেখানে যাতে কোনোভাবেই রাস্তা নির্মাণ করা না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসনকে আমরা চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। কারণ, জামালপুর শহরের সকল পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থার একমাত্র ওই শাখা নদটি। ওই শাখা নদ দিয়ে সারা বছর পানিনিষ্কাশন হয়ে থাকে। সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হলে জামালপুর শহরের অভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’
জামালপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইউসুপ আলী বলেন, ‘সম্প্রতি এ জেলায় আমি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে আপনার কাছে শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়েছিল। ওই অংশের বেশির ভাগ শেরপুর জেলার মধ্যে পড়েছে। আর ড্রেজান মেশিনও শেরপুর অংশেই। এই কারণে আমি শেরপুরের জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি জানিয়েছি। যেটুকু অংশ জামালপুরের, সেখানে কোনোভাবেই রাস্তা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর এই র স ত ভর ট ক সড়ক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুর শহরে নদ ভরাট করে বিএনপি নেতার রাস্তা নির্মাণ
জামালপুর শহরের চালাপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা ভরাট করে আড়াআড়িভাবে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূল নদ থেকে বালু তুলে বিক্রি সহজ করতে এবং চরের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করতেই এ রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন এই পথে বালুবাহী যানবাহন চলাচল করবে।
বিএনপির ওই নেতার নাম মিজানুর রহমান। তিনি জামালপুর জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এই রাস্তা নির্মাণ কমিটির সভাপতিও মিজানুর।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শহরের পাথালিয়া থেকে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের এ শাখা মূল নদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই শাখা নদ একদম জামালপুর শহরঘেঁষা। বিভিন্ন সময় বর্ষা মৌসুমে নদে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিত। ফলে ২০১৩ সালে ভাঙন রোধে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ শাখা নদের ডান তীরে জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পরে ২০২০ সালে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের যানজট কমাতে এ শাখা নদের তীর ঘেঁষে পুরোনো ফেরিঘাট থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। এই সড়কের চালাপাকা অংশে পাউবোর বাঁধের ওপর দিয়ে বালু ফেলে এ রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিগত সরকারের আমলেও এই শাখা নদের বিভিন্ন স্থানে ভরাট করে দখল করা হয়েছে। এই শাখা নদের তমালতলা অংশেও ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা হচ্ছে। সেখানেও কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। এসব প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও রহস্যজনক কারণে দুই জেলার সীমানা জটিলতার অজুহাতে স্থানীয় প্রশাসন নদটি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও রেলিং ভেঙে ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।জাহাঙ্গীর সেলিম, সভাপতি, জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটিগত বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এ শাখা নদের তীর ঘেঁষে পুরোনো ফেরিঘাট থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত সড়কের চালাপাড়া অংশে শহর রক্ষা বাঁধের রেলিং ভেঙে বালু ফেলা হয়েছে। আর নদের দক্ষিণ পাশে শেরপুর জেলার চরপক্ষীমারী অংশে ড্রেজার মেশিনের পাইপ বসানো আছে। সেই পাইপ দিয়ে শাখা নদের মধ্যে বালু ফেলা হয়েছে। নদের মধ্যে বালু ফেলে কিছুটা ভরাটও করা আছে। ওই সড়কের ডান পাশ দিয়ে সুন্দর একটি ফুটওভার ছিল। সেটাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিকেলবেলায় লোকজন এই ফুটওভার দিয়ে হাঁটাহাঁটি করে থাকেন।
বালু ভরাটের ছবি তোলার সময় ভরাট কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন ছুটে আসেন। তাঁদের মধ্যে একজন রফিক মিয়া। তিনি বলেন, এই রাস্তা সবার জন্যই দরকার। চরের লোকজন যাতায়াত করতে পারেন না। রাস্তাটি কে নির্মাণ করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানসহ অনেকেই আছেন।
শহরের চালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এক নারী বলেন, ‘আমার বাড়ির একদম সামনেই বাঁধের রেলিং ভেঙে রাস্তাটি করা হচ্ছে। এই সড়কের নিচ দিয়ে আমার বাড়ির পানি যাওয়ার পাইপও আছে। তারা পাইপের মুখসহ ভরাট করে ফেলেছে। তাদের এভাবে রাস্তা নির্মাণে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কথাই শোনেনি। হঠাৎ এমন রাস্তা কেন?’
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের অনুমতি নিয়েই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে, যাতে পানিনিষ্কাশনে কোনো সমস্যা না হয়।’
সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হলে জামালপুর শহরের অভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নকিবুজ্জামান খান, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, জামালপুরএই রাস্তা কি বালু বিক্রির জন্য করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে মিজানুর বলেন, ‘এই ধরনের কাজের সঙ্গে আমি কখনোই যুক্ত হইনি। সত্যিকার অর্থে সেখানে অনেক গরিব মানুষ থাকে, তাদের যাতাযাতের সুবিধার্থে এই রাস্তা।’ সেখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা তো শেরপুর জেলার বাসিন্দা। তাহলে এখানে আপনি কেন রাস্তা নির্মাণ করতে গেছেন, এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর মিজানুর দিতে পারেননি।
জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও রেলিং ভেঙে ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অথচ জামালপুর, শেরপুর জেলার সীমানা জটিলতা দেখিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
জামালপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘ওই স্থানে রাস্তা নির্মাণের খবর পেয়ে, সরেজমিনে দেখে এসেছি। সেখানে যাতে কোনোভাবেই রাস্তা নির্মাণ করা না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসনকে আমরা চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। কারণ, জামালপুর শহরের সকল পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থার একমাত্র ওই শাখা নদটি। ওই শাখা নদ দিয়ে সারা বছর পানিনিষ্কাশন হয়ে থাকে। সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হলে জামালপুর শহরের অভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’
জামালপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইউসুপ আলী বলেন, ‘সম্প্রতি এ জেলায় আমি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে আপনার কাছে শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়েছিল। ওই অংশের বেশির ভাগ শেরপুর জেলার মধ্যে পড়েছে। আর ড্রেজান মেশিনও শেরপুর অংশেই। এই কারণে আমি শেরপুরের জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি জানিয়েছি। যেটুকু অংশ জামালপুরের, সেখানে কোনোভাবেই রাস্তা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।’