রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ভালোয় ভালোয় সরে না গেলে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও দনবাস অঞ্চল দখল করবে রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার পন্থা নিয়েও কোনো সমঝোতা করার বিষয় বাতিল করে দিয়েছেন তিনি।

দুদিনের ভারত সফর শুরুর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন এ হুঁশিয়ারি দেন।

পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনারা হয় এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যাবে, নয় আমরা সামরিকভাবে বা অন্য কোনো উপায়ে এ অঞ্চলকে মুক্ত করব।’

ইউক্রেনের পূর্বাংশের দনবাস অঞ্চলের প্রায় ৮৫ শতাংশ এখন মস্কোর দখলে রয়েছে।

ইউক্রেন বলেছে, মস্কো ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলে যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছে, তারা সেগুলো তাকে দিতে চায় না। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কোনো অঞ্চলগত ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছেন।

জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছিল। এ জন্য মস্কোকে কোনো পুরস্কার দেওয়া উচিত নয়।

বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে ক্রিমিয়াও রয়েছে। ২০১৪ সালে এটি দখল করে নেয় রাশিয়া।

এ ছাড়া গোটা লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৮০ শতাংশ, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও দনিপ্রোপ্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট কিছু অংশও তাদের নিয়ন্ত্রণে।

আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ভূখণ্ড নিয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি: রুশ কর্মকর্তা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

অন্যদিকে দোনেৎস্কের প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি শান্তিচুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে গত মঙ্গলবার মস্কোয় বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।

এ ছাড়া মস্কোয় থাকা ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের ফ্লোরিডায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল।

মস্কোয় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর প্রতিনিধিরা বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘যুদ্ধ শেষ করতে চান’।

আরও পড়ুনপুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রতিনিধিদের ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও হলো না সমঝোতা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ট্রাম্পের এ বক্তব্যের পর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন পুতিন। এদিকে ওই বৈঠকের বিষয়ে আজ শুক্রবার ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়ায় বৈঠকের পর মস্কো এখন ওয়াশিংটনের সাড়ার অপেক্ষায় আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার মূল প্রস্তাবে দনবাসের যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে তা কার্যত পুতিনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা ছিল। কিন্তু উইটকফের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল মস্কোয় ওই প্রস্তাবের একটি সংশোধিত সংস্করণ উপস্থাপন করেছে।

বর্তমানে ভারত সফরে আছেন পুতিন। ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন আরও বলেন, উইটকফ ও ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে আলোচনার আগে তিনি নতুন সংস্করণটি দেখেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কয়েকটি অংশের সঙ্গে মস্কো একমত হতে পারেনি বলেও জানান পুতিন। তবে কোন কোন অংশ নিয়ে মস্কোর আপত্তি সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।

আরও পড়ুনরাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলে দ্রুত পরাজিত হবে ইউরোপ, হুঁশিয়ারি পুতিনের০২ ডিসেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউক র ন র দনব স

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলে দ্রুত পরাজিত হবে ইউরোপ, হুঁশিয়ারি পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জারেড কুশনার। এ সাক্ষাতের লক্ষ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ইউক্রেন যুদ্ধ থামানো। সাক্ষাতের শুরুতে পুতিন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ যদি যুদ্ধ শুরু করতে চায়, তাহলে দ্রুত তাদের পরাজিত করা হবে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্রেমলিনে এই সাক্ষাৎ হয়। শুরুতেই উইটকফ ও কুশনারকে পুতিন বলেন, ‘আপনাদের পেয়ে আমি খুবই খুশি।’ জবাবে উইটকফ বলেন, ‘এটি (মস্কো) একটি চমৎকার শহর।’ পরে দুজনের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্টের দুই সহযোগী—কিরিল দিমিত্রিয়েভ ও ইউরি উশাকভ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তৎপর ট্রাম্প। এ নিয়ে পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন তিনি। সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা সামনে আসে। তবে ওই পরিকল্পনার বেশ কিছু দফা রুশপন্থী—ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্রদের এমন অভিযোগের পর তাতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।

বৈঠক শুরুর আগে পুতিন বলেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অবমাননা করতে চাইছে ইউরোপ। তারা এমন সব প্রস্তাব আনছে, যেগুলো রাশিয়া মেনে নেবে না বলে তারাও জানে। ইউরোপ যুদ্ধের পক্ষে। তারা যদি হঠাৎ যুদ্ধ শুরু করতে চায় এবং এটা শুরু করে, তাহলে সেই যুদ্ধ এত দ্রুত শেষ হবে যে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য কেউ আর বাকি থাকবে না।

কৃষ্ণ সাগরে ছদ্মপরিচয়ে থাকা রুশ নৌযানের ওপর ইউক্রেনের হামলার জবাবে পানিপথে কিয়েভের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন পুতিন। তাঁর এই হুমকির দিকে ইঙ্গিত করে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা বলেছেন, পুতিনের মন্তব্য থেকে এটাই বোঝা যায় যে তিনি যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত নন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। বর্তমানে ইউক্রেনের ১৯ শতাংশ বা ১ লাখ ১৫ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইউক্রেনপন্থীদের তৈরি বিভিন্ন মানচিত্রে দেখা গেছে, ২০২২ সালের পর ২০২৫ সালে এসেই ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি পেয়েছে রুশ বাহিনী।

এমন পরিস্থিতিতে মস্কোর আলোচনার ওপর যুদ্ধ বন্ধের সবকিছু নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে তিনি বলেছেন, ‘(যুদ্ধ বন্ধের) কোনো সহজ সমাধান নেই। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে সবকিছু ন্যায্য ও উন্মুক্ত হতে হবে। ইউক্রেনের পিঠপিছে কোনো খেলা চালানো যাবে না।’

আরও পড়ুনরাশিয়াকে ভূখণ্ডগত ছাড় না দেওয়াটাই ইউক্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: জেলেনস্কি১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রতিনিধিদের ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও হলো না সমঝোতা
  • ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতায় পোঁছাতে পারেনি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র
  • রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলে দ্রুত পরাজিত হবে ইউরোপ, হুঁশিয়ারি পুতিনের
  • ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন উইটকফ ও কুশনার