সিলেটে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে চোর সন্দেহে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১
Published: 5th, December 2025 GMT
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে চোর সন্দেহে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আরফান মিয়া (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রতিবন্ধী ওই তরুণের নাম জালাল মিয়া (২৭)। তাঁর একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই। তিনি একই উপজেলার দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে। অন্যদিকে গ্রেপ্তার আরফানও একই এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে গতকাল সকালে দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামে জালাল মিয়াকে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার পর জালালের মা শিরিয়া বেগম বাদী হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এতে আরফান মিয়া, তাঁর ভাই ইউনুছ আলীসহ তাঁদের পরিবারের ৬ সদস্যসহ মোট ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোরে চুরির অপবাদ দিয়ে জালালকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান কয়েকজন। পরে তাঁকে দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামে নদীর পাড়ে একটি নৌকায় নেওয়া হয়। সেখানে হাত পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে ইউনুছ আলীর বাড়িতে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে ওই বাড়ির সামনে একটি গাছের সঙ্গে জালালকে ঝুলিয়ে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে জালালের মা শিরিয়া বেগম (৫০) ঘটনাস্থলে যান। তিনি জালালকে উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
জালালকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের একটি একটি ভিডিও প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, জালালের দুই হাত রশি দিয়ে বেঁধে গাছের ডালে সঙ্গে ঝোলানো হয়। এ সময় তিনি চিৎকার করে পা দিয়ে মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে একাধিক ব্যক্তি লাঠি হাতে তাঁকে মারধর করতে উদ্যত হন। ওই সময় আশপাশের কয়েকজন মারধর না করতে বলেন। জালালকে গাছে ঝোলানোর সময় আশপাশে দাঁড়িয়ে কয়েকজন ঘটনাটি দেখছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর দুই হাত বাঁধা অবস্থায় গাছ থেকে মাটিতে নামানো হয়।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রতন শেখ বলেন, চুরির অভিযোগে একজনকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতে পাঠানোর কথা আছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাছের চিপস বানিয়ে মাসে লাখ টাকা মুনাফা নাজমা আক্তারের
করোনার শুরুর দিকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন অনেকেই। লাভও করেন। সে ভাবনা থেকে ২০২০ সালে উদ্যোক্তা নাজমা আক্তার অনলাইনে মেয়েদের রূপচর্চার সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেন। অনলাইনে ব্যবসার জন্য পালংকি কন্যা নামে একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। সে সময় রূপচর্চার সামগ্রী বিক্রি করে দুই মাসে ৫০ হাজার টাকা মুনাফা করেন। এই মুনাফা বদলে দেয় নাজমা আক্তারের জীবন।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী আদর্শগ্রামে থাকতেন নাজমা আক্তার। অবসরপ্রাপ্ত বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। তাই নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন নাজমা। একসময় নতুন পণ্য দিয়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেন। সে সময় বাসার কাছেই একটি ডুমুরের গাছ ছিল। তবে এই ফল খাওয়ার প্রচলন না থাকায় বেশির ভাগ সময় পেকে রাস্তায় পড়ে থাকত। তাই এই ফল দিয়ে আচার বানানোর চেষ্টা করেন তিনি। যদিও পরবর্তী সময়ে ডুমুরগাছটি কেটে ফেলা হয়। তাই কাঁচামালের অভাবে এই পণ্য তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
পরপর দুটি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয় নাজমা আক্তারকে। এরপর ইন্টারনেট ও ইউটিউবে নতুন ব্যবসার ধারণা খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে জোনাকি পোকার গুঁড়া তৈরির একটি ভিডিও দেখেন। তখন ধারণা আসে সামুদ্রিক মাছের গুঁড়া তৈরির। প্রথম চেষ্টায় কয়েক দফায় ব্যর্থ হন। তবে একসময় মাছের গুঁড়া তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন। অনলাইনে বিক্রিও বাড়তে থাকে। ব্যবসা করতে গিয়ে এই পণ্যের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন তিনি। তাই মাছ ধরার নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়া এই পণ্য তৈরি করেন না।
একপর্যায়ে ব্যবসা বড় করতে ২০২৪ সালে মাছের চিপস তৈরির পরিকল্পনা করেন নাজমা আক্তার। নিজের বাসায় বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠাপানির মাছ দিয়ে চিপস তৈরির চেষ্টা করেন। প্রথমে টুনা ও পোয়া মাছের চিপস বানানোর চেষ্টা করেন। কয়েকবারের চেষ্টায় তাতে সফল হন তিনি। তারপর ‘ফিসো ফিস চিপস’ নামে সামুদ্রিক মাছ থেকে তৈরি চিপসের একটি ব্র্যান্ড গড়ে তোলেন।
বর্তমানে তিন রুমের একটি ভাড়া বাসায় কারখানা ও অফিস রয়েছে নাজমার। সেখানেই এই মাছের চিপস তৈরি করেন তিনি। বর্তমানে প্রতি মাসে ৭০০ কেজি মাছের চিপস বিক্রি করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে লাখ টাকার বেশি মুনাফা থাকে নাজমার। তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সাতটি পরিবারের সদস্য। এ ছাড়া ৩০ জন নারীকে মাছের চিপস তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
নাজমা আক্তার বলেন, ‘এই চিপস দিয়ে বাচ্চাদের চিপস খাওয়ার বায়না মেটে। অন্যদিকে পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয়। আমাকে এই চিপস অনেকেই বিদেশে রপ্তানি করার কথা বলে। তবে আমি আগে দেশের চাহিদা মেটাতে চাই। পরে রপ্তানি নিয়ে ভাবব। আগামী কয়েক বছরে আমি আরও বড় পরিসরে চিপস উৎপাদনে যেতে চাই।’