সংগীত পরিবেশনের সময় ধর্ম অবমাননা ও কটূক্তির অভিযোগে করা মামলায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গতকাল দুপুরে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে আসামি করে মামলা করেন ঘিওর বন্দর মসজিদের ইমাম মুফতি মো.

আবদুল্লাহ। এতে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসের অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কটূক্তি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা এলাকায় খালা পাগলীর মেলায় পালাগানের আসরে বাউলশিল্পী আবুল সরকার ইসলাম ও মহান আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তাঁর এসব মন্তব্যের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার রাতে মাদারীপুরে একটি গানের আসর থেকে আবুল সরকারকে আটক করে মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশের একটি দল। গতকাল সকালে তাঁকে জেলা ডিবির কার্যালয়ে আনা হয়। দুপুরে মুফতি মো. আবদুল্লাহ বাদী হয়ে আবুল সরকারকে আসামি করে ঘিওর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নেওয়া হয়। জেলা ডিবির পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের কঠোর শাস্তির দাবিতে গতকাল দুপুরে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে ‘আলেম-ওলামা ও তাওহীদি জনতা’র ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ সময় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি আবদুল্লাহ আল ফিরোজ, মুফতি আবদুল হান্নান, মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মুফতি মজিবুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এ বিষয়ে আবুল সরকারের সহকারী শিল্পী রাজু সরকার বলেন, আবুল সরকারের পালাগানের পুরো বক্তব্য প্রচার না করে একটি গোষ্ঠী তাঁর বক্তব্য আংশিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে পরিবেশ ঘোলাটে করছে। মহান আল্লাহ পাকের তিনটি সৃষ্টির মধ্যে কোনটি আগে করা হয়েছে—প্রতিপক্ষ বাউলশিল্পীকে এমন প্রশ্ন করেছিলেন আবুল সরকার। মহান আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেননি। ওই অনুষ্ঠানে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। ওই গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত হয়ে আবুল সরকারের পালাগানের মন্তব্যের ভিডিওর খণ্ডিত অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ আবদ ল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রারকে পুলিশে দিলেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহাকারী রেজিস্ট্রারকে ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে মারধরের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস এলাকার মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সহকারী রেজিস্ট্রারের নাম আবুল মনসুর শিকদার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সাবেক সহসভাপতি ছিলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আবুল মনসুর শিকদার বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কর্মরত। গতকাল বিকেলে অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে তাঁর পথ আটকান শিবিরের নেতা-কর্মীরা। পরে সেখান থেকে তাঁকে মারধর করে থানায় নেওয়া হয়।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আবুল মনসুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের এক নেতা খুনের মামলার আসামি। মামলাটিতে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এ মামলা করা হয়।

বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন বলেন, বেলা চারটার দিকে বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। এরপর তিনি অফিসের এক কর্মচারীকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে থানায় পাঠিয়েছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শিবির নেতা মামুন হোসাইনকে হত্যার মামলায় আসামিদের মধ্যে অন্যতম আবুল মনসুর শিকদার। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে তিনি লিপ্ত রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী তাঁকে থানায় হস্তান্তর করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়েছে বলেও শুনেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সহরাওয়ার্দী বলেন, মনসুর শিকদার ২০১৪ সালে আমানত হলের শিবিরের সেক্রেটারি মামুনকে হত্যার মামলায় আসামি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নিহত ব্যক্তির ভাই বাদী হয়ে আদালতে মনসুর শিকদারকে ৫ নম্বর আসামি করে মামলা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষ, শিবির নেতা নিহত

২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে শিবির নেতা ও মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মামুন হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ২০ জন। সিলেটে ছাত্রলীগের নেতা জালাল আহমেদের ওপর হামলার জেরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ