মাদক ব্যবসায়ীকে আটক, গ্রাম পুলিশকে পেটালো বিএনপি নেতা
Published: 5th, December 2025 GMT
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের ঘটনায় দুই গ্রাম পুলিশকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে গোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জীবেশ বাড়ৈর বিরুদ্ধে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে এ ঘটনায় জীবেশ বাড়ৈকে প্রধান আসামি করে যুবদল ও ছাত্রদল নেতাসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো সাতজনকে আসামি করে টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা করেন পুলিশ উপপরিদর্শক মোসলেম আলী।
এ দিকে, ঘটনার পর জীবেশ বাড়ৈকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপি। তাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের জোয়ারিয়া এলাকায় মারধরের ঘটনা ঘটে।
আসামিরা হলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জীবেশ বাড়ৈ, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নয়ন বাইন, হৃদয় তালুকদার ভোলা ও অয়ন বাইন।
মামলা ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকালে পাটগাতী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড ও ৩ নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ কৃপা মন্ডল ও সুরজিত ঘরামী বিশেষ কাজে গোপালপুর যায়। ফেরার পথে তারা থানার এসআই মোসলেম আলীকে জানায় জোয়ারিয়া এলাকায় ইয়াবা ট্যাবলেট বেচাকেনা চলছে। তখন থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ী বিজন বিশ্বাসকে ইয়াবাসহ আটক করে। ঘটনাস্থলে থাকা অন্য তিনজন মাদক ব্যবসায়ী এ সময় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
ঘটনা জানার পর জীবেশ বাড়ৈর নেতৃত্বে দশ-বারোজন দুই গ্রাম পুলিশের কাছে জানতে চায়, তারা কেন পুলিশকে খবর দিয়ে বিজনকে গ্রেপ্তার করালো? এক পর্যায়ে তারা দুই গ্রাম পুলিশকে মারধর করে। কৃপা মন্ডল ও সুরজিত টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে আটক মাদক ব্যবসায়ী বিজন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে আলাদাভাবে মামলা করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
কৃপা ও সুরজিত বলেন, ‘‘পুলিশ বিজনকে আটক করে থানায় রওনা দেয়। আমরা পুলিশের পিছনে গেলে হঠাৎ বিএনপি নেতা কিছু লোকজন নিয়ে আমাদের গতিরোধ করে। তারপর বিজনকে কেন পুলিশে ধরিয়ে দিলাম বলে বকাঝকা ও পেটানো শুরু করে। আমরা তাদের বিচার চাই।’’
জীবেশ বাড়ৈ গ্রাম পুলিশদের পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘গ্রাম পুলিশ দুজন পাটগাতী থেকে এসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বিজন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে। তখন তাদের পরিচয় জানার পর লোকজন বকাঝকা করেছে কিন্তু তাদের পেটানো হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’’
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘দুই গ্রাম পুলিশকে মারধর, সরকারি কাজে বাধা ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বাকি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
অন্যদিকে, এ ঘটনায় জীবেশ বাড়ৈকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপি। উপজেলা বিএনপি সভাপতি শেখ সালাহ উদ্দীন আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাবলু স্বাক্ষরিত নোটিশে তাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা/বাদল//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন য ন ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীর ২৪৩ প্রাইমারি স্কুলের সব শিক্ষককে শোকজ
তিন দাবিতে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের চলমান কমপ্লিট শাটডাউন ও কর্মবিরতী কর্মসূচির কারণে নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ২৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এসব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিয়েছেন। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইশরাত নাসিমা হাবীব পৃথকভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
আরো পড়ুন:
কর্মবিরতি করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কড়া বার্তা
নেত্রকোণায় দুই স্কুলে আগুন, আসবাবপত্র পুড়ে কয়লা
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ২ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নেননি। বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং বিদ্যালয়ে তালা লাগানো হয়েছে, যা দায়িত্বহীন আচরণ।
নোটিশে আরো বলা হয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৮ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক নেতা বলেন, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মোট ৪২ জনকে মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ আদেশে বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নোয়াখালী সদরের কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শামছুদ্দীন মাসুদও এর মধ্যে রয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইশরাত নাসিমা হাবীব বলেন, “সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত না হওয়া এবং সরকারি দায়িত্ব পালন না করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।”
তিন দাবিতে দেশের ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা গত ২৭ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। এর মধ্যে গত ২ দিন ধরে চলছে অনির্দিষ্টকালের কমপ্লিট শাটডাউন ও বিদ্যালয় তালাবদ্ধ রাখার কর্মসূচি।
তারপরও নোয়াখালীতে বেশ কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে জেলা শহরের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “আমি আমার স্কুলে অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। সহকারী শিক্ষকরা সকালে পরীক্ষার পর স্কুলের মূল ফটকে তালা মেরে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক অভিভাবকদের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হঠেন।
আলাউদ্দিন নামে একজন অভিভাবক বলেন, “শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। তারা (শিক্ষক) সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তাদের যদি কােনো দাবি থাকে, তাহলে তারা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। পরীক্ষা চলাকালীন তাদের শার্টডাউন ও কর্মবিরতী সমর্থনযোগ্য নয়।”
ঢাকা/সুজন/মাসুদ