বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী দোয়া ও প্রার্থনা
Published: 5th, December 2025 GMT
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সারা দেশে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে জুমার নামাজের পর বিএনপির উদ্যোগে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়েও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকার নয়াপল্টনের একটি মসজিদে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। দোয়ার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বেগম জিয়া গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। কারাগার থেকেই তাঁর অসুস্থতার শুরু চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, কাতার থেকে পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার ঢাকায় পৌঁছালে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রবিবার তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।
এর আগে সকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার দেশব্যাপী দোয়া ও প্রার্থনার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির–গির্জা–প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। দেশবাসীর কাছে আমরা নেত্রীর সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করছি।”
দোয়া মাহফিলে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পক্ষ থেকেও সারাদেশে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়। দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদেরকে নিজ নিজ উপাসনালয়ে বেগম জিয়ার রোগমুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তাঁর শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ অগ্রগতি জানাতে হাসপাতাল এবং দলের পক্ষ থেকে নিয়মিত তথ্য দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা/এএএম/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
নয়াদিল্লির ১৭০ কোটি রুপির নিজামের প্রাসাদে থাকছেন পুতিন, কী আছে এতে
ভারতের হায়দরাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর সংগ্রহশালায় থাকা মণিমুক্তার ভান্ডার নিয়ে প্রচলিত ছিল নানা গল্প। বলা হতো, তাঁর মণিমুক্তা রাখা হলে অলিম্পিকে যে আকারের সুইমিংপুল থাকে, তা ভরে যাবে। তো ব্রিটিশরা ভারতের রাজধানী যখন কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নেন, তখন নিজের ঐশ্বর্য প্রদর্শনের এক মহাসুযোগ পেয়েছিলেন ওসমান আলী খান।
দিল্লিতে যখন ব্রিটিশ-ভারতের নতুন রাজধানীর নকশা করা হচ্ছিল, তখন সেখানে রাজাশাসিত রাজ্যগুলো (প্রিন্সলি স্টেট) নিজেদের স্বকীয়তার ছাপ রাখতে চেয়েছিল। এসব রাজ্যের মহারাজারা দিল্লিতে নিজেদের প্রাসাদ তৈরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁদের এমন আগ্রহে তৎকালীন ভাইসরয় আনন্দচিত্তে রাজি হয়েছিলেন। তাঁর মতে, মহারাজাদের এ মনোভাব নতুন রাজধানীর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতে দুই দিনের সফরে আসা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হায়দরাবাদের শেষ নিজামের বানানো সেই প্রাসাদে থাকছেন, যা ‘হায়দরাবাদ হাউস’ নামে পরিচিত। প্রায় শতবর্ষী এ ঐতিহাসিক প্রাসাদের কিছু টুকিটাকি নিয়ে এই আয়োজন।
হায়দরাবাদ হাউস নকশায় জটিলতা
হায়দরাবাদের নিজাম নতুন রাজধানীর যেকোনো এলাকার একটি যেনতেন জমি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন ভাইসরয়ের বাড়ির কাছে প্রিন্সেস পার্কের কিছু জমি, যেখানে তিনি নিজের প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। কিন্তু ব্রিটিশরা এতে রাজি হননি।
ব্রিটিশরা মাত্র পাঁচজন মহারাজাকে ভাইসরয়ের বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কিং পঞ্চম জর্জের ভাস্কর্যের আশপাশে জমি বরাদ্দ দিতে রাজি হয়েছিলেন। রাজ্যগুলো হলো হায়দরাবাদ, বরোদা, পাতিয়ালা, জয়পুর ও বিকানার।
পাঁচ মহারাজার মধ্যে হায়দরাবাদের নিজাম এবং বরোদার গায়কোওয়াড় তাঁদের দিল্লির প্রাসাদের নকশা করার জন্য বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্সকে নিয়োগ দেন। ব্রিটিশ-ভারতে রাজাশাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে হায়দরাবাদের মর্যাদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই ওসমান আলী খান ভাইসরয়ের প্রাসাদের সমান একটি বিশাল বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অনুমতি পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে জমি বরাদ্দের জন্য সরকার শর্ত দিয়েছিল, সব প্রাসাদের নকশার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। তাই নিজামের নির্দেশ সত্ত্বেও নিজের মতো করেই হায়দরাবাদ হাউসের নকশা করেছিলেন স্থপতি লুটিয়েন্স। ভাইসরয়ের বাড়ির নকশা থেকে নিজামের প্রাসাদের জন্য তিনি কেবল মধ্যভাগের একটি গম্বুজ নিয়েছিলেন।
প্রজাপতি আকৃতির নকশা
একটি দুর্লভ প্রজাপতির আকৃতিতে হায়দরাবাদ হাউসের নকশা করা হয়েছে। চট করে দেখলে মনে হয়, প্রাসাদটির সম্মুখভাগের ষড়্ভুজ প্রবেশপথ রাস্তার দিকে যেন তাকিয়ে আছে। প্রজাপতির ডানা দুটি পাশের রাস্তার সঙ্গে মিশে গেছে।
নয়াদিল্লিতে ওই সময়ে যত প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে হায়দরাবাদ হাউস ছিল সবচেয়ে বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ। ১৯০৩ সালে ইংল্যান্ডের লেস্টারশায়ারের পাপিলন হলের জন্য প্রজাপতি আকৃতির একটি নকশা করেছিলেন লুটিয়েন্স। সেটার আদলেই হায়দরাবাদ হাউসের নকশা করা হয়েছিল।
১৯২০-এর দশকে হায়দরাবাদ হাউস নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২ লাখ পাউন্ড। মূল্যস্ফীতিকে আমলে নিলে ২০২৩ সালে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৭০ কোটি রুপি।
২০২১ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের সময় হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন