যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়েন, তাঁদের সুবিধা দিতে কেন পিছুটান দেখাই রাশেদা কে চৌধূরী
Published: 21st, October 2025 GMT
দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা টানা ১০ দিন ধরে ঢাকার রাস্তায় আন্দোলন করেছেন বাড়িভাড়া ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে। এ সময়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে নানা ধরনের বক্তব্য এসেছে; কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারকে ধন্যবাদ জানাই—তিনি নিজেও একজন শিক্ষক হিসেবে বিষয়টি অনুধাবন করে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু জানা গেছে, প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে ছিল।
শিক্ষা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমার প্রশ্ন, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা বাড়াতে যখন বেতন কমিশন হয়, তখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–কর্মচারীদের বিষয়টি কেন গুরুত্ব পায় না? তাঁদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ–সুবিধা ক্রমেই বাড়ছে, অথচ যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর, তাঁদের ক্ষেত্রে কেন পিছুটান দেখা যায়—এটাই দুঃখজনক।
আরও পড়ুনএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বাড়ছে ১৫ শতাংশ, কার্যকর দুই ধাপে২ ঘণ্টা আগেনানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত (দুই ধাপে কার্যকর হবে) নিয়েছে—এর জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। আশা করব, আগামীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন শিক্ষক–কর্মচারী ও শিক্ষাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখে, মানবসম্পদ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। সক্ষমতা অনুযায়ী সেটি করা যেতে পারে, তবে শুধু জাতীয়করণই সমস্যার পূর্ণ সমাধান নয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দিকও ভাবতে হবে।
বাড়ি ভাড়া বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করছেন এমপিওভূক্ত শিক্ষক–কর্মচারিরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলনের মুখ থেকে রাকসুর জিএস আম্মার
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। আন্দোলনের সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হন। আন্দোলনজুড়ে ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। জুলাই–পরবর্তী ক্যাম্পাসেও নিজের সেই পরিচিতি ধরে রেখেছিলেন। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীবান্ধব নানা দাবি আদায়ে ছিলেন সোচ্চার।
পোষ্য কোটা ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশের বিরাগভাজন হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পেয়েছেন সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের মোট প্রাপ্ত ভোটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জিএস এবং সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে হয়েছেন সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি।
সালাহউদ্দিন আম্মার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলায়। তিনি ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থীও হয়েছিলেন। তিনি দুটি পদে বড় ব্যবধানে জিতেছেন। আর ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে একজন এবং স্বতন্ত্র থেকে সম্পাদক পদে একজন বাদে রাকসুর ২৩টি পদের মধ্যে ২০ পদে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল জিতেছে।
আম্মার পরিচিতি পান ফিলিস্তিন ইস্যুতেসালাহউদ্দিন আম্মার ক্যাম্পাসে এসে পরিচিতি পান ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি আন্দোলনের মাধ্যমে। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দাবিতে প্যারিস রোডে তিনি আর্ট পারফরম্যান্স করেছিলেন। পরে জুলাইয়ে আন্দোলন আরও বেশি পরিচিতি এনে দেয় তাঁকে। কোটা আন্দোলনের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমন্বয়ক কমিটি আন্দোলন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন। তখন আন্দোলনে ভাটা পড়লে তিনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে ঘোষণা দেন। তাঁর ডাকে আবারও রাজপথে নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা।
একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ সমন্বয়কের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। আন্দোলনজুড়ে কখনো হ্যান্ডমাইকে, কখনো কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাসে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চ, পোষ্য কোটা বাতিল, ৯ দফা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন।
আরও পড়ুনরাকসুর ২৩ পদে কার সঙ্গে কার লড়াই হলো, জয়ের ব্যবধান কত১৭ অক্টোবর ২০২৫আম্মার ছিলেন পোষ্য কোটাবিরোধী আন্দোলনেজুলাই আন্দোলনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন। সালাহউদ্দিন আম্মার পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে ছিলেন। এ নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনের একপর্যায়ে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি প্রশাসন ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করা হয়। সেদিন রাতে উপাচার্য পোষ্য কোটা একেবারে বাতিল করার ঘোষণা দেন। পরে রাকসু নির্বাচনের আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ১০ শর্তে প্রশাসন পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনলে শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামেন। ২০ সেপ্টেম্বর পোষ্য কোটা নিয়ে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেদিন একজন সহ-উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। সহ–উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেও রাখা হয়। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাতভর শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
পোষ্য কোটা নিয়ে আন্দোলনের ফলে সালাহউদ্দিন আম্মারকে প্রশাসন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াতে হয়। শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারী হিসেবে আম্মারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন।
আরও পড়ুনযে সম্মান নিয়ে আজ ঢুকছি, সেই সম্মান নিয়ে বের হতে চাই: রাকসুর জিএস আম্মার১৭ অক্টোবর ২০২৫তদন্ত কমিটির বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি তাদের মতো তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করছে। সংকটটা তো প্রশাসন তৈরি করেছে। এই সংকট যদি তারা সৃষ্টি না করত, তাহলে আজকে আমাদের এ ধরনের একটি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতো না।’
রাকসু নির্বাচনের সময় সালাহউদ্দিন আম্মার ও তাঁর প্যানেল ঘিরে আলোচনা ওঠে তাঁরা শিবিরের ‘বি টিম’ হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো বলতে পারবেন ন্যারেটিভ আছে কি না। আমরা তো সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়াই করছি। তো এটা বলার আর কোনো সুযোগ নেই। তবে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইবে, তারা তো চাইবেই।’
৯ দফা দাবি নিয়ে মাঠে ছিলেন আম্মারপূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার রোডম্যাপ ঘোষণা; পরীক্ষায় রোলবিহীন খাতা মূল্যায়ন ও খাতা চ্যালেঞ্জের সুযোগ; ক্যাম্পাসে সপ্তাহে ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে চলতি বছর জুন থেকে আন্দোলন করেন আম্মার। এই ৯ দফা তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যেও রেখেছিলেন।
রাকসু নির্বাচনে জিএস পদে সালাহউদ্দিন আম্মার ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৯ ভোট। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে তিনি সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়েছেন। এই নির্বাচনে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ বেশি ভোট পেয়েছেন আম্মার।