তাঁর প্রিয় ব্যক্তিত্ব যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘লৌহমানবী’ মার্গারেট থ্যাচার। আর তাঁর ব্যক্তিগত লক্ষ্য ছিল জাপানের ‘লৌহমানবী’ হওয়া। দুবার ব্যর্থ হওয়ার পর আজ মঙ্গলবার সানায়ে তাকাইচির বহুদিনের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো। ঐতিহাসিক সংসদীয় ভোটে ৬৪ বছর বয়সী এই নেতা জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন।

সাবেক মন্ত্রী ও টিভি উপস্থাপক সানায়ে তাকাইচি একসময় হেভি মেটাল ব্যান্ডের ড্রামারও ছিলেন। এখন তাঁকে একই সঙ্গে দলের ও দেশের নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কিছু কেলেঙ্কারির পর তাঁর দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ভোটারদের আস্থা ফিরে পেতে সংগ্রাম করছে। উগ্র ডানপন্থীদের বিপক্ষে তাদের লড়াই করতে হচ্ছে। পাশাপাশি জাপানকে নিম্ন জন্মহার ও বাড়ন্ত ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

১৯৬১ সালে নারা প্রদেশে জন্ম নেওয়া তাকাইচির বাবা ছিলেন চাকরিজীবী এবং মা একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি যেখানে বেড়ে ওঠেন, সেখানে রাজনীতি ছিল অনেক দূরের বিষয় ছিল।

একসময় তাকাইচি হেভি মেটাল ড্রামার হিসেবে সংগীতজগতে ডুবে ছিলেন। জোরালো ড্রাম বাজানোর সময় স্টিক ভেঙে যাওয়ার কারণে তিনি সব সময় অতিরিক্ত স্টিক সঙ্গে রাখতেন। এ কারণে তাঁর একটি বিশেষ পরিচিতি ছিল। এ ছাড়া তিনি স্কুবা ডাইভার ও গাড়িপ্রেমীও। তাঁর প্রিয় টয়োটা সুপ্রা গাড়িটি এখন নারা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। রাজনীতিতে আসার আগে তাকাইচি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছিলেন।

আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্যিক তিক্ততার সময়ে তাকাইচির রাজনৈতিক অনুপ্রেরণার উন্মেষ ঘটে। জাপান সম্পর্কে মার্কিনদের ধারণা বোঝার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তিনি ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান প্যাট্রিশিয়া শ্রোডারের অফিসে কাজ করেন। প্যাট্রিশিয়া জাপানের সমালোচনার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তাকাইচি দেখেছিলেন, কীভাবে মার্কিনরা জাপানি, চীনা ও কোরীয় ভাষা এবং রন্ধনশৈলীকে গুলিয়ে ফেলছে। কীভাবে জাপানকে প্রায়ই চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একই শ্রেণিতে ফেলা হতো, সেটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। সানায়ে তাকাইচি সে সময় উপলব্ধি করলেন, ‘জাপান নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম না হলে যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁপা মতামতের ওপরই দেশটির ভাগ্য নির্ভরশীল হয়ে থাকবে।’

১৯৯২ সালে তাকাইচি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদীয় নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি হেরে যান। তাকাইচি হাল ছাড়েননি। এক বছর পর তিনি সংসদীয় আসনে জয়লাভ করেন এবং ১৯৯৬ সালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দেন।

এর পর থেকে তাকাইচি ১০ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন মাত্র একবার। দলের সবচেয়ে স্পষ্টবাদী রক্ষণশীল কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি নিজের একটি পরিচয় গড়ে তুলেছেন।

তাকাইচি অর্থনৈতিক নিরাপত্তামন্ত্রী, বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিষয় ও যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে সর্বাধিক সময় দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

২০২১ সালে তাকাইচি প্রথমবারের মতো এলডিপির নেতৃত্ব পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি ফুমিও কিশিদার কাছে পরাজিত হন। ২০২৪ সালে তিনি আবারও চেষ্টা করেন। এবারও প্রথম রাউন্ডে শীর্ষ ভোট পেলেও শেষ পর্যন্ত শিগেরু ইশিবার কাছে হেরে যান তিনি। তৃতীয়বারের চেষ্টায় এবার তিনি জয়লাভ করেছেন এবং সংসদে নির্বাচিত হয়ে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারে একদল স্কুলশিক্ষার্থীকে তাকাইচি বলেছিলেন, ‘আমার লক্ষ্য হলো আয়রন লেডি হওয়া।’

তাকাইচি একজন দৃঢ় রক্ষণশীল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিবাহিত নারীদের মূল নাম ব্যবহারের আইনের বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর মতে, এটি ঐতিহ্যকে দুর্বল করে। তিনি সমলিঙ্গের মানুষের বিয়েরও বিরোধী।

তবে সম্প্রতি তাকাইচির বক্তব্যে নমনীয়তা দেখা গেছে। নির্বাচনী প্রচারে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বেবিসিটারের (শিশুযত্ন সুবিধা প্রদানকারী) খরচ আংশিক করছাড়যোগ্য হবে। শিশুযত্ন সুবিধা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর জন্যও করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

তাকাইচির পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এ প্রস্তাবগুলোর ভিত্তি তৈরি হয়েছে। নারীদের স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালের সেবা সম্প্রসারণ, গৃহস্থালি–সহায়ক কর্মীদের বেশি স্বীকৃতি এবং জাপানের প্রবীণ সমাজের জন্য যত্নের সুযোগ-সুবিধা উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি জীবনে তিনবার ব্যক্তিগতভাবে শুশ্রূষা ও পরিচর্যার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সে কারণেই শিশুর যত্ন, সন্তান লালন-পালন বা স্কুলে যেতে অনিচ্ছুক সন্তানের কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা কমানোর জন্য আমার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে।’

তাকাইচি বলেন, ‘আমি এমন একটি সমাজ গড়তে চাই, যেখানে মানুষ তাদের পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হবে না।’

প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁর রাজনৈতিক গুরু। তিনি আবারও উচ্চ সরকারি ব্যয় ও সস্তা ঋণের ব্যবস্থা–সংবলিত আবের ‘আবেনমিকস’ অর্থনৈতিক দর্শন পুনরুজ্জীবিত করার অঙ্গীকার করেছেন।

তাকাইচি জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের ওপর সাংবিধানিক বিধিনিষেধ শিথিল করারও দাবি জানান। বর্তমানে এই বাহিনীর আক্রমণাত্মক সামর্থ্য রাখা নিষিদ্ধ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন র জন য র জন ত প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বিপিএলে থাকবেন সালাহউদ্দিনও

ক্রিকেটারদের এখন ছুটি। অখন্ড অবসর। তবে চাইলেই মাঠে ফেরার সুযোগ আছে। টি-টোয়েন্টির ব্যাটসম্যানদের জন্য আলাদা একটি সেশন শুরু করেছেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। সেই সেশনে সাইফ হাসান, কাজী নুরুল হাসান সোহান, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমনরা যোগ দিয়েছেন। 

কেন হঠাৎ এই আয়োজন? শনিবার বিকেলে মিরপুরে সেই উত্তর দিয়েছেন সালাহউদ্দিন, ‘‘উন্নতির তো শেষ নেই। আমরা সবাই বলি, স্কিলের ঘাটতি আছে। ওইটা উন্নতি করারও আসলে আমরা কোনো সময় সময় পাইনা। কারণ এত ইন্টারন্যাশনাল শিডিউল থাকে, ছেলেদের খেলা থাকে। এরকম একটা যেহেতু সুযোগ পেয়েছি তাই ব্যাটসম্যানদের স্কিলের আরেকটু উন্নতি…।’’ 

কোন দিকগুলো নিয়ে কাজ করছেন সেগুলো খোলাসা করলেন সালাহউদ্দিন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যেসব লাগবে, অনেক সময় হয়তো আমরা ভালো শট খেলি কিন্তু হয়তো ওগুলা হাতে চলে যায়। কিভাবে গ্যাপে মারতে হয়, কিভাবে বল ইউজ করতে হয়, পেসটা ইউজ করতে হয় এবং যদি নিজেকে আরেকটু ডেভেলপ করতে পারে, কম রিস্ক নিয়ে কিভাবে আসলে বাউন্ডারি আদায় করা যায় এবং কিভাবে আসলে সিঙ্গেলস ডেভেলপও করা যায়।’’

আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চিন্তা মাথায় রেখেই সালাহউদ্দিন প্রস্তুত করছেন ক্রিকেটারদের। যার পরীক্ষা হবে আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)।  ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল কোচ সালাহউদ্দিন। জাতীয় দলে যুক্ত থাকায় এ বছর তার কাজ করা হবে না। তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাখির চোখে পরখ করবেন তিনি। 

প্রধান কোচ ফিল সিমন্স দেশে থাকবেন না। দেশে ক্রিকেটারদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করবেন সালাহউদ্দিন। বিপিএলের পরপরই বিশ্বকাপ। ক্রিকেটাররা যেন পর্যাপ্ত অনুশীলন, ম্যাচ এবং সঠিক গাইডলাইন অনুযায়ী চলতে পারেন তা নিশ্চিত করবেন তিনি,

‘‘তাদের (ক্রিকেটারদের) সব দিকেই নজর রাখা হবে কারণ তাদের মানসিক অবস্থা কি রকম আছে, তাদের শারীরিক অবস্থা কিরকম আছে, তারা টেকনিক্যালি কি রকম করছে সবকিছুই তাদের নজর রাখতে হবে। কে কোথায় কিভাবে কাজ করছে দেখতে হবে। এখানে জাতীয় দলে একজন ট্রেনার যেভাবে ট্রেনিং করাচ্ছে, হয়তো বিপিএল এসে সে ওই ট্রেনিং পাচ্ছে না। ফিটনেস ডাউন হলে তো পরবর্তীতে আমাদেরই আবার এটা রিকভার করে তাকে ফিট করে নিয়ে আসতে হবে। এই জিনিসগুলো পুরো লক্ষ্য রাখা হবে, তারা যেন প্রতিটা সেক্টরেই তারা যেন বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকেন। কারণ খুব বেশি সময় থাকবে না।’’

বিশ্বকাপের আগে বিপিএলকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা বলে মনে করছেন সালাহউদ্দিন, ‘‘ছেলেরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ পরিবেশে একটা টুর্নামেন্ট খেলবে।  ভালো বোলাররা আসবে। ব্যাটসম্যানরা তাদের ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। আমি বলবো ভালো অনুশীলন হবে বিশ্বকাপের আগে। যেহেতু ফর্মটাই বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারবে। তারা যদি ভালোভাবে সুযোগ ব্যবহার করতে পারে তাহলে দলের জন্য ভালো হবে।’’

জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকায় বিপিএলে নির্দিষ্ট কোনো ফ্রাঞ্চাইজিতে কাজ করা হবে না সালাহউদ্দিনের। কোচ হিসেবে বিপিএলকে কি মিস করবেন তিনি? উত্তর দিয়েছেন সোজাসাপ্টা,‘‘আমি সচরাচর কোনো কিছু মিস করি না।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ