জাতিসংঘের শীর্ষ এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদী ও উগ্র ডানপন্থী শক্তির উত্থানের পেছনে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ এক রাজনৈতিক বয়ানকে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাঁর মতে, মূলধারার রাজনীতিকেরা কয়েক দশক ধরে কল্যাণমূলক কর্মসূচি গুটিয়ে নেওয়ার যে চেষ্টা চালিয়েছেন, সেটির কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

লন্ডন থেকে লিসবন—উদার ডানপন্থী ও বামপন্থী, উভয় ধারার রাজনীতিকরাই ধীরে ধীরে সামাজিক কর্মসূচিগুলো দুর্বল করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার অলিভিয়ে দে শুতার। তাঁর মতে, এতে সমাজে একধরনের অভাবের অনুভূতি তৈরি হয়েছে। যেটি অভিবাসীবিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।

শুতার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি আরও বেশি পদক্ষেপ নিত, তাহলে মানুষ হুমকির মুখে আছে বলে মনে করতেন না। তাঁরা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করতেন না। ডিজিটাল ও সবুজ রূপান্তর এবং বিশ্বায়ন যে বেদনাদায়ক হবে না, সেই নিশ্চয়তাও তাঁরা পেতেন। কারণ, তাঁদের দেখভাল করার জন্য একটি রাষ্ট্র সচেষ্ট রয়েছে।’

অলিভিয়ে দে শুতার বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। সেখানে তিনি সর্বজনীন ও মানবাধিকারভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরবেন। তাঁর যুক্তির মূলকথা হলো সরকারগুলোর উচিত কল্যাণরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়—খাদ্যসহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা ও বেকার ভাতা পুনর্বিবেচনা করা।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের কর্মকর্তা যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনেছেন। সেখানে নাইজেল ফারাজের ‘রিফর্ম’ দল অভিবাসন ইস্যুতে কনজারভেটিভ দলকেও ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর। রিফর্ম ইউকে ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সমর্থন পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে.

..এর একমাত্র কারণ, আমরা কল্যাণরাষ্ট্রে যথেষ্ট বিনিয়োগ করিনি।’

অলিভিয়ে দে শুতার আজ বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করছেন। সেখানে তিনি সর্বজনীন ও মানবাধিকারভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরবেন। তাঁর মূলকথা হলো, সরকারগুলোর উচিত কল্যাণরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়—খাদ্যসহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা ও বেকার ভাতা পুনর্বিবেচনা করা। এসবকে সামাজিক কাঠামো টিকিয়ে রাখার অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে দেখা উচিত, কেবল ব্যয় বা বোঝা হিসেবে নয়।

বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার হলেন জাতিসংঘের নিযুক্ত স্বাধীন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও প্রতিবেদন তৈরি করেন।

অলিভিয়ে দে শুতার বলেন, বিশ্বজুড়ে মূলধারার রাজনীতিকেরা কয়েক দশক ধরে ভাতা বা সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়া কঠিন করেছেন। নজরদারি বাড়িয়েছেন এবং ভাতা পাওয়া ব্যক্তিদের কলঙ্কিত করেছেন। তাঁদের বার্তা ছিল—এসব সমাজের জন্য একটি বোঝা, ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ নয়।’

শুতার বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি আরও বেশি পদক্ষেপ নিত, তাহলে মানুষ হুমকির মুখে আছে বলে মনে করত না। তারা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করত না। ডিজিটাল ও সবুজ রূপান্তর এবং বিশ্বায়ন যে বেদনাদায়ক হবে না—সেই নিশ্চয়তাও তারা পেত। কারণ, তাদের দেখভাল করার জন্য একটি রাষ্ট্র সচেষ্ট রয়েছে।’

শুতার বলেন, এর ফলে এমন একটি ধারণা জন্ম নিয়েছে যে এ ধরনের সম্পদের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ কঠোরভাবে সীমিত রাখতে হবে। ‘বার্তাটা হলো এমন “আমরা বনাম ওরা”। এক গোষ্ঠী যা পায়, অন্যদের তা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। কারণ, সবার জন্য যথেষ্ট নেই। এটি এমন একটি আলোচনা, যা মানুষকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। আর এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমি মনে করি, চরম ডানপন্থীরা এখন সেটিরই সুবিধা ভোগ করছে।’

জাতিসংঘের র‍্যাপোর্টিয়ারের বক্তব্যের সপক্ষে ২০২১ সালের একটি গবেষণা রয়েছে। সেখানে ইউরোপের ১৪টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আয়ের বৈষম্য এক ঘর বৃদ্ধি পেলে জনতুষ্টিবাদী দলগুলোর প্রতি সমর্থনও এক ঘর বেড়ে যায়। একই সঙ্গে, পেনশনের হার বৃদ্ধি, ন্যূনতম মজুরির বিধান ও শিশু ভাতা বাড়ানো চরম ডানপন্থী দলগুলোর প্রতি ভোট দেওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয় বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে বসবাসরত পুরুষদের মধ্যে চরম ডানপন্থী দলগুলোর বার্তা গভীরভাবে সাড়া জাগায়।জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অলিভিয়ে দে শুতার

অলিভিয়ে দে শুতার বলেন, জনতুষ্টিবাদী দলগুলো প্রায়ই দাবি করে, অভিবাসন সামাজিক সেবার ওপর চাপ তৈরি করে থাকে। তাই সমাজ তা বহন করতে পারবে না। অথচ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) সদস্যদেশগুলোর তথ্য বলছে, অভিবাসীরা যে ব্যক্তিগত সুবিধা পান, তাঁর চেয়ে আয়কর ও সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থায় বেশি অবদান রাখেন।

জাতিসংঘের কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রতিবেদন একটি সতর্কবার্তা দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যে রিফর্ম ইউকের জরিপে শীর্ষে থাকা কোনো আকস্মিক বিষয় নয়। একই চিত্র জার্মানিতে অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসে ফ্রিডম পার্টি এবং ফ্রান্সে ন্যাশনাল র‍্যালির ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। তারা সরকার গঠনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।’

বিক্ষোভকারীদের ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক বা যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকা এবং সেন্ট জর্জ বা ইংল্যান্ডের পতাকা ওড়াতে দেখা গেছে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র শ ত র বল ন র জন ত ক ড নপন থ র জন য র র জন কর ছ ন অল ভ য দলগ ল করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিপিএলে থাকবেন সালাহউদ্দিনও

ক্রিকেটারদের এখন ছুটি। অখন্ড অবসর। তবে চাইলেই মাঠে ফেরার সুযোগ আছে। টি-টোয়েন্টির ব্যাটসম্যানদের জন্য আলাদা একটি সেশন শুরু করেছেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। সেই সেশনে সাইফ হাসান, কাজী নুরুল হাসান সোহান, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমনরা যোগ দিয়েছেন। 

কেন হঠাৎ এই আয়োজন? শনিবার বিকেলে মিরপুরে সেই উত্তর দিয়েছেন সালাহউদ্দিন, ‘‘উন্নতির তো শেষ নেই। আমরা সবাই বলি, স্কিলের ঘাটতি আছে। ওইটা উন্নতি করারও আসলে আমরা কোনো সময় সময় পাইনা। কারণ এত ইন্টারন্যাশনাল শিডিউল থাকে, ছেলেদের খেলা থাকে। এরকম একটা যেহেতু সুযোগ পেয়েছি তাই ব্যাটসম্যানদের স্কিলের আরেকটু উন্নতি…।’’ 

কোন দিকগুলো নিয়ে কাজ করছেন সেগুলো খোলাসা করলেন সালাহউদ্দিন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যেসব লাগবে, অনেক সময় হয়তো আমরা ভালো শট খেলি কিন্তু হয়তো ওগুলা হাতে চলে যায়। কিভাবে গ্যাপে মারতে হয়, কিভাবে বল ইউজ করতে হয়, পেসটা ইউজ করতে হয় এবং যদি নিজেকে আরেকটু ডেভেলপ করতে পারে, কম রিস্ক নিয়ে কিভাবে আসলে বাউন্ডারি আদায় করা যায় এবং কিভাবে আসলে সিঙ্গেলস ডেভেলপও করা যায়।’’

আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চিন্তা মাথায় রেখেই সালাহউদ্দিন প্রস্তুত করছেন ক্রিকেটারদের। যার পরীক্ষা হবে আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)।  ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল কোচ সালাহউদ্দিন। জাতীয় দলে যুক্ত থাকায় এ বছর তার কাজ করা হবে না। তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাখির চোখে পরখ করবেন তিনি। 

প্রধান কোচ ফিল সিমন্স দেশে থাকবেন না। দেশে ক্রিকেটারদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করবেন সালাহউদ্দিন। বিপিএলের পরপরই বিশ্বকাপ। ক্রিকেটাররা যেন পর্যাপ্ত অনুশীলন, ম্যাচ এবং সঠিক গাইডলাইন অনুযায়ী চলতে পারেন তা নিশ্চিত করবেন তিনি,

‘‘তাদের (ক্রিকেটারদের) সব দিকেই নজর রাখা হবে কারণ তাদের মানসিক অবস্থা কি রকম আছে, তাদের শারীরিক অবস্থা কিরকম আছে, তারা টেকনিক্যালি কি রকম করছে সবকিছুই তাদের নজর রাখতে হবে। কে কোথায় কিভাবে কাজ করছে দেখতে হবে। এখানে জাতীয় দলে একজন ট্রেনার যেভাবে ট্রেনিং করাচ্ছে, হয়তো বিপিএল এসে সে ওই ট্রেনিং পাচ্ছে না। ফিটনেস ডাউন হলে তো পরবর্তীতে আমাদেরই আবার এটা রিকভার করে তাকে ফিট করে নিয়ে আসতে হবে। এই জিনিসগুলো পুরো লক্ষ্য রাখা হবে, তারা যেন প্রতিটা সেক্টরেই তারা যেন বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকেন। কারণ খুব বেশি সময় থাকবে না।’’

বিশ্বকাপের আগে বিপিএলকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা বলে মনে করছেন সালাহউদ্দিন, ‘‘ছেলেরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ পরিবেশে একটা টুর্নামেন্ট খেলবে।  ভালো বোলাররা আসবে। ব্যাটসম্যানরা তাদের ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। আমি বলবো ভালো অনুশীলন হবে বিশ্বকাপের আগে। যেহেতু ফর্মটাই বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারবে। তারা যদি ভালোভাবে সুযোগ ব্যবহার করতে পারে তাহলে দলের জন্য ভালো হবে।’’

জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকায় বিপিএলে নির্দিষ্ট কোনো ফ্রাঞ্চাইজিতে কাজ করা হবে না সালাহউদ্দিনের। কোচ হিসেবে বিপিএলকে কি মিস করবেন তিনি? উত্তর দিয়েছেন সোজাসাপ্টা,‘‘আমি সচরাচর কোনো কিছু মিস করি না।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ