মানসিক সংস্কার ছাড়া কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 23rd, October 2025 GMT
একটি রাজনৈতিক দল এখন জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি কোনো দলের নাম উল্লেখ না করেন বলেন, ওই দলটির কিছু দাবিদাওয়া আছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সেমিনার এ মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজক ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গতকাল একটি রাজনৈতিক দল বলেছে, জনমতের চাপে অবশেষে বিএনপি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। অথচ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব বিএনপির ছিল।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৭ অক্টোবর। তবে ওই অনুষ্ঠানে যায়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
আজ সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকি সবাই এ (গণভোট) প্রস্তাবে একমত হয়। আমি দুটি রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করছি না। তবে দুটি দলের একটি জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গিয়েছে। অপর একটি রাজনৈতিক দল এখন জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে। তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। সে বিষয়ে আলাপ–আলোচনা এখন যে পর্যায়ে হচ্ছে, আমি আশা করি, হয়তো তাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে একটা যৌক্তিক সমাধানও আসবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি দরকার হলো আমাদের মানসিক সংস্কার। আমরা ঐকমত্য কমিশনে আইনি সংস্কার, সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে কথা বলছি। যত সংস্কারই আমরা করি না কেন, জাতীয় ভিত্তিতে যদি আমাদের মানিসক সংস্কার না হয়, সেই আইনি ভিত্তিকে আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারব না। এটা মোদ্দাকথা।’
আইন জারি করে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের কোনো অধিকার প্রধান উপদেষ্টার নেই বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘অযৌক্তিকভাবে কেউ যদি বলে, আমি কাল বলতে শুনলাম যে এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অর্ডার করে এই সনদকে জারি করতে হবে। বলা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা এটা জারি করতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টা তো সরকারপ্রধান। সরকারপ্রধানের আইন জারি করার কোনো রাইট আমাদের কনস্টিটিউশনে নেই।’
প্রধান উপদেষ্টা আইন জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন—এমন বক্তব্যকে ‘পলিটিক্যাল ইমোশন’ বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কোনো ইমোশনের ওপর চলে না। রাষ্ট্র আইনকানুন, বিধিবিধান ও নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে চলে। তারপরও আমি সংহতি জানাই, তারা তাদের প্রস্তাব গণতান্ত্রিকভাবে পেশ করছে যথাযথ স্থানে।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে মনে সুখ পাওয়ার মতো কোনো প্রস্তাব না দেয়, সেই আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘যাঁর জারি করার কথা, তিনি জারি করলেন না, যথাযথ কর্তৃপক্ষ জারি করল না, সেই বিতর্ক যাতে ভবিষ্যতে না ওঠে, সে জন্য আমরা যেন পলিটিক্যাল ইমোশন থেকে সরে আসি। এ আহ্বান আমি সব পক্ষকে জানাব।’
বাংলাদেশে জমির অনুপাতে জনসংখ্যার হার অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের ম্যান ল্যান্ড রেশিও হিসেবে ইটস ভেরি পিকিউলিয়ার, এটা কোনো স্বাভাবিক ম্যান ল্যান্ড রেশিও না। ইতিমধ্যে আমাদের যে রেশিও হয়েছে, এটা কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে সমাধান করতে হবে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা।’ তিনি মনে করেন, শুধু সরকারিভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলে এ সমস্যার সমাধান হবে ন; বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান ও শাহ শামীম আহমেদ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা একজন স্নাতককে কতটা দক্ষ করে তুলছে, সে প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এর মূল কারণ হলো আমাদের সেক্টরভিত্তিক গ্র্যাজুয়েটদের মান নিশ্চিত করতে না পারা। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি।’
ইউট্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, ‘দক্ষ স্নাতক তৈরিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের কমিউনিকেশন, ক্রিটিক্যাল ও অ্যানালিটিক্যাল দক্ষতা নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করতে হবে।’
জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ বলেন, ‘আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে হবে; পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে; তবেই তা অর্থনীতি ও শিক্ষাকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নেবে।’
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আবদুল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজির বাইরে কোনো ভাষা আয়ত্ত করে না। ফলে তারা পিছিয়ে থাকে। ইন্টারেস্ট ছাড়া যদি শিক্ষার্থীদের লোন দিতে পারি, তাহলে তারা শিক্ষা ও গবেষণায় আরও অনেক বেশি মনোযোগ করতে পারবে।’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসভিত্তিক চাকরির সুযোগ রাখার আহ্বান জানান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তিনি সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি গবেষণার উদ্ধতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার মান এমন স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে এইচএসসিকে সপ্তম এবং স্নাতককে এইচএসসির সমপরিমাণ ধরা যায়। তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে যদি শিক্ষার মান নিয়ে এমন বদনাম থাকে, তাহলে সেটি লজ্জাজনক। তিনি মনে করেন, শিক্ষার মান বাড়াতে হলে কারিকুলামের পরিবর্তন জরুরি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ প রস ত ব ব এনপ র আম দ র ই সনদ
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে গ্যাস ফিল্ডস কর্মকর্তা হত্যায় প্রধান আসামির জামিন নামঞ্জুর
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের কর্মকর্তা ময়নুল হোসেন আয়ানীকে (৫৫) সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মামলার প্রধান আসামি উমর আলী (২২)। বিচারক তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী শামীম আহমদ।
নিহত ময়নুল হোসেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের উপব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর গ্রামের বাসিন্দা। ২০২৪ সালের ১৩ জুন রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিহত হন। তখন সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে প্রচার পায়। এ ঘটনায় তামাবিল হাইওয়ে থানার পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয়েছিল।
ময়নুল হোসেনের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর স্থানীয় মসজিদে এক বৈঠকে একই গ্রামের ইউসুফ আলী (২২) নামের এক তরুণ ময়নুল হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নামও তিনি বলেন। উমনপুর গ্রামে একটি বাড়ি থেকে লিচু চুরি ও সালিসের জেরে ময়নুল হোসেন আয়ানীকে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুনদাফনের দুই সপ্তাহ পর জানা গেল, দুর্ঘটনা নয় হত্যা করা হয়েছিল গ্যাসফিল্ড কর্মকর্তাকে২৮ অক্টোবর ২০২৪ইউসুফ আলীর স্বীকারোক্তির পর নিহত ময়নুলের ভাই নাজমুল হোসাইন ওই বছরের ৭ জুলাই আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। আদালত ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলা রেকর্ড করার আদেশ দেন। ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর জৈন্তাপুর থানায় মামলা রেকর্ড হয়। এতে উমনপুর গ্রামের উমর আলী (২২), সোহেল আহমদ বারেক (২২), ইউসুফ আলী (২২), সুবেদ আলী (২১), হরমুজ আলী (৪২), মোহাম্মদ আলী (৪২), মরম আলী (৬০), তাহের আলী (৪৫) ও সমসুর ইসলামকে (৫৪) আসামি করা হয়। মামলা করার পর আসামিরা পালিয়ে যান।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শামীম আহমদ বলেন, এর আগে উমর আলীর চাচা হরমুজ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আজ উমর আলী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। পরে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেছেন।