Prothomalo:
2025-12-10@08:56:43 GMT

নামাজ না পড়ার পরিণতি

Published: 25th, October 2025 GMT

নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য, আর ইবাদতের সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করে, সে আসলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮২)

অর্থাৎ নামাজ ছেড়ে দেওয়া মানে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া।

কোরআনে নামাজ না পড়ার শাস্তি

আল্লাহ তাআলা অনেক আয়াতে নামাজ প্রতিষ্ঠার আদেশ দিয়েছেন এবং নামাজ ত্যাগকারীদের সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন।

১️.

সুরা মারইয়াম: ‘তাদের পর এমন এক প্রজন্ম এল, যারা নামাজ নষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। তারা শিগগিরই গোমরাহির শাস্তির সম্মুখীন হবে।’ (আয়াত: ৫৯)

২️. সুরা মুদ্দাসসির: ‘তোমাদেরকে কী জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে?’ তারা বলবে, ‘আমরা নামাজ আদায় করতাম না।’ (আয়াত: ৪২-৪৩)

এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, নামাজ না পড়া জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

৩️. সুরা ত্বাহা: ‘আমার স্মরণের জন্য নামাজ কায়েম করো।’ (আয়াত: ১৪) অর্থাৎ, নামাজ না পড়া মানে আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।

আরও পড়ুন‘যাও, আবার নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি’১৮ অক্টোবর ২০২৫হাদিসে নামাজ না পড়ার শাস্তি

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ ছেড়ে দিলে মানুষ কুফরির কাছাকাছি চলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮২)

‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে, তার ওপর আল্লাহর কোনো দায়িত্ব নেই।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০২৩)

অর্থাৎ সে আল্লাহর রহমত ও রক্ষার বাইরে চলে যায়।

আরেক হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ প্রথমে নামাজের হিসাব নেবেন। যদি নামাজ ঠিক থাকে, তবে বাকি কাজও ঠিক থাকবে; আর যদি নামাজ নষ্ট হয়, তবে সব কাজই নষ্ট হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪১৩)

দুনিয়ায় নামাজ না পড়ার পরিণতি

১️. হৃদয়ের কঠোরতা: আল্লাহর ভয় ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।

২️. অশান্তি ও হতাশা: নামাজ আল্লাহর স্মরণ; তা না থাকলে মন অশান্ত থাকে।

৩️. রিজিকে অবারকতা: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ রিজিক বৃদ্ধি করে।’ নামাজ না পড়লে তার উল্টো ঘটে।

৪️. অন্ধকার ও হতাশ মৃত্যু: হাদিসে এসেছে, ‘নামাজ হলো কবর ও আখিরাতে আলো।’ (সহিহ মুসলিম, ২২৩)

পরকালে নামাজ না পড়ার শাস্তি

১️. জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নামাজ আদায় করে না, তাদের জন্য আফসোস! (ওয়াইল)’ (সুরা মাউন, আয়াত: ৪–৫)

২️. হিসাবের দিন প্রথম প্রশ্নেই ব্যর্থতা: নামাজ ঠিক না থাকলে সব আমল বাতিল হবে।

৩️. চিরন্তন আফসোস: কিয়ামতের দিন তারা বলবে: ‘হায়, যদি আমি নামাজ আদায় করতাম, তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না!’

আরও পড়ুন‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’১৭ অক্টোবর ২০২৫ফকিহদের বিশ্লেষণ

ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রহ.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে, সে কাফের।’ (আল-মুগনি, খণ্ড ২, পৃ. ৪৪৩)

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, ‘যে নামাজ ছেড়ে দেয়, তাকে তাওবা করতে বলা হবে; তাওবা না করলে শাস্তি দেওয়া হবে, তবে কাফের গণ্য হবে না।’ (ফাতহুল কাদির, খণ্ড ১, পৃ. ২৯৪)

ইমাম শাফেয়ি ও মালেকি মত অনুযায়ী, ‘নামাজ না পড়া বড় গুনাহ, তবে ঈমান অস্বীকার না করলে সে ইসলাম থেকে বের হয় না।’ (আল-মাজমু, খণ্ড ৩, পৃ. ১২)

 নামাজ ত্যাগকারীর জন্য উপদেশ

আল্লাহর দরজা সর্বদা খোলা। যে ব্যক্তি তাওবা করে আবার নামাজে ফিরে আসে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।’ (সুরা যুমার, আয়াত: ৫৩)

নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, মুসলমানের জীবনের মেরুদণ্ড। যে নামাজ পড়ে, সে আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকে; আর যে নামাজ ত্যাগ করে, সে নিজের জীবনের আলো নিভিয়ে দেয়।

তাই আসুন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, আজ থেকেই নিয়মিত নামাজ পড়ব, কারণ নামাজই আমাদের কবরের আলো, দুনিয়ার শান্তি, আর আখিরাতের মুক্তির চাবিকাঠি।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত য গ কর আল ল হ বল ছ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিস্তৃত প্রশ্ন, উত্তরও বড় হবে

বাংলা: প্রশ্ন নম্বর–৮

প্রাথমিক বিদ্যালয়–শিক্ষার্থী মেধা যাচাই পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে ৮ নম্বর প্রশ্ন থাকবে বিস্তৃত উত্তর প্রশ্নের ওপর। ৩টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নম্বর থাকবে ১৫।

প্রশ্ন: দেশকে কেন ভালোবাসতে হবে? 

উত্তর: দেশ মানে এর মানুষ, নদী, আকাশ, প্রান্তর, পাহাড়, সমুদ্র ইত্যাদি সবকিছু। তাই দেশ আমাদের কাছে মায়ের মতো। মা যেমন স্নেহ–মমতা দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখেন, দেশও তেমনই আলো, বাতাস ও সম্পদ দিয়ে আমাদের আগলে রাখে। তাই মায়ের মতো এই দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশকে ভালোবাসলেই তবে জীবন সার্থক হবে।

প্রশ্ন: রাজকীয় বাঘ কোনটি? এটি সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: বাংলাদেশের নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রাজকীয় বাঘের নাম হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই বাঘ থাকে সুন্দরবনে। এ বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই আবার
ভয়ংকর। এর চালচলনও রাজার মতো। সুন্দরবনের ভেজা স্যাঁতসেঁতে গোলপাতার বনে এ বাঘ ঘুরে বেড়ায়।

প্রশ্ন: বৈশাখী মেলায় কী কী পাওয়া যায়?

উত্তর: বৈশাখী মেলায় নিত্যদিনের দরকারি জিনিসের পাশাপাশি নানা রকম শৌখিন জিনিস পাওয়া যায়। যেমন—কুলা, ডালা, ঝুড়ি, চালনি, মাছ ধরার চাঁই, খালুই ইত্যাদি। দোকানে পাওয়া যায় বাঙ্গি, তরমুজ, মুড়ি–মুড়কি, জিলাপি, বাতাসা ইত্যাদি। বৈশাখী মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো মাটির তৈরি জিনিসপত্র। মাটির তৈরি জিনিসের মধ্যে রয়েছে নানা রঙের ফুল, পাতা ও মাছের ছবি আঁকা বিচিত্র সব হাঁড়ি। এ ছাড়া মাটির তৈরি টেপাপুতুল, ঘোড়া, হাতি, ষাঁড়, মাছ, কলসি, সরা, বাসনকোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা, পিঠা তৈরির নানা ছাঁচ ইত্যাদি।

প্রশ্ন: হাতির করুণ পরিণতির পাঁচটি কারণ লেখ।

উত্তর: হাতির করুণ পরিণতির পাঁচটি কারণ নিচে দেওয়া হলো—

১. অহংকারী হয়ে ওঠা।

২. অন্য প্রাণীদের তুচ্ছ ভাবা।

৩. বনের প্রাণীদের অত্যাচার করা।

৪. নিজেকে অসীম শক্তিশালী ভাবা।

৫. নিজেকে বনের রাজা ভাবতে শুরু করা।

প্রশ্ন: প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা কীভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারি?

উত্তর: প্রকৃতি এক বিশাল পাঠশালা। এর প্রতিটি উপাদানে রয়েছে শেখার উপকরণ। আকাশ যেমন উদার হতে শিক্ষা দেয়, তেমনই পাথর শিক্ষা দেয় কঠোর হতে। পাহাড়–মাটি, চাঁদ–সূর্য, বাতাস–মাঠ প্রতিটিই বিভিন্নভাবে আমাদের শিক্ষা দেয়। উদারতা, সহিষ্ণুতা, কর্মপরায়ণতা, নীরবতা, মহানুভবতা ইত্যাদির শিক্ষা আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে পেয়ে থাকি। এভাবে প্রকৃতির দিকে গভীরভাবে তাকালে বিনা পরিশ্রমে, কোনো ধরনের কৃত্রিমতা ছাড়াই আমরা এসব প্রকৃতি থেকে লাভ করতে পারি। 

প্রশ্ন: মৃৎশিল্পের ওপর নকশাগুলো কীভাবে করা হয়? 

উত্তর: আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হলো মৃৎশিল্প। এই মৃৎশিল্পের ওপরের সুন্দর নকশা, রং সবই গ্রামের শিল্পীরা করে থাকেন। নকশাগুলো তাঁরা মন থেকে আঁকেন। আর রং তাঁরা নিজেরা তৈরি করে নেন শিম, সেগুনপাতার রস কিংবা কাঁঠালগাছের বাকল থেকে। তবে আজকাল বাজার থেকে কেনা রংও লাগানো হয়।

প্রশ্ন: ‘আমরা একে অপরের উৎসবে সহযোগিতা করি।’—এ কথার দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব মানুষ মিলেমিশে বাস করে। প্রতিটি ধর্মের মানুষের রয়েছে আলাদা আলাদা উৎসব। যুগ যুগ ধরে সব ধর্মের মানুষ এ দেশে একত্রে বসবাস করে আসছে। এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের উৎসবে আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। উৎসব পালনে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করি, প্রশ্নের উক্তিটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন: যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে মানুষ ঘুরছে বলতে কী বোঝ? বর্ণনা করো।

উত্তর: কবিতায় ‘যুগান্তর’ বলতে সময়ের পরিবর্তন এবং ‘ঘূর্ণিপাক’ বলতে এর দ্রুততাকে বোঝানো হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। নতুন নতুন রহস্য ও ঘটনার সৃষ্টি হয়। সময়ের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও এগিয়ে চলে রহস্য অনুসন্ধান ও ঘটনার মূল উদ্​ঘাটনের জন্য। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের এই এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতাকে বোঝানোর জন্যই বলা হয়েছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরছে।

প্রশ্ন: পশুপাখি জীবজন্তু না থাকলে প্রকৃতির কী বিপর্যয় ঘটবে বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: পশুপাখি, জীবজন্তু যেকোনো দেশের স্বাভাবিক প্রকৃতির পরিবেশ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। যদি পৃথিবীতে পশুপাখি না থাকত, তাহলে প্রকৃতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ত
এবং পরিবেশের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটত। ফলে দেখা দিত নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা মানুষের জীবনধারণকে হুমকির মধ্যে ফেলত। তাই এদের যত্ন ও সংরক্ষণে আমাদের সচেতন হতে হবে। 

প্রশ্ন: ‘মাটির শিল্পকলা’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: যখন কোনো কিছু সুন্দর করে আঁকা বা বানানো হয়, তখন তাকে শিল্প বলে। শিল্পের এ কাজকে বলে শিল্পকলা। মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পকে বলা হয় মাটির শিল্পকলা। আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মাটির শিল্প। এ দেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এই শিল্পকলা ধরে রেখেছে। 

প্রশ্ন: সুন্দরবন সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ।

উত্তর: বাংলাদেশের দক্ষিণে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা বিশাল বন হলো সুন্দরবন। এই বনে যেমন রয়েছে প্রচুর গাছপালা, তেমনই রয়েছে নানা প্রাণী ও জীবজন্তু, যা আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সর্বোপরি সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। 

প্রশ্ন: পরস্পর মিলেমিশে থাকার পাঁচটি সুফল লেখ।

উত্তর: পরস্পর মিলেমিশে থাকার চারটি সুফল হলো—

১. একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। 

২. বিপদ–আপদে একে অন্যকে সাহায্য করা যায়। 

৩. একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়। 

৪. সমাজে সাম্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। 

৫. দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়।

*লেখক: খন্দকার আতিক, শিক্ষক, উইল্​স লিট্​ল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ