কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে খেলা শেষে খালপাড় ঘেঁষে বাড়ি ফেরার পথে একই পরিবারের তিন শিশু পানিতে পড়ে মারা গেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের আলীনগর পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। তারা পরস্পরের চাচাতো ভাই।

মারা যাওয়া শিশুরা হলো আলীনগর পশ্চিমপাড়ের মাসুক মিয়ার ছেলে মাহিন মিয়া (৬), আবদুস সাত্তারের ছেলে নাজমুল হাসান (৫) ও আবুল কালামের ছেলে মিশকাত মিয়া (৪)।

ফায়ার সার্ভিস ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওরে বর্ষাকালে প্রতিটি বাড়ির কাছে পানি থাকে। তবে শুকনা মৌসুমে পানি অনেক দূরে চলে যায়। আলীনগর পশ্চিমপাড়ে শিশুদের বাড়ির পাশে একটি খাল আছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিন ভাই খালপাড়ে খেলছিল। মাগরিবের আজান হওয়ার পর তারা হেঁটে বাড়ি আসছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে একজন পানিতে পড়ে যায়। তাকে ডুবে যেতে দেখে অপর দুজনও পানিতে নামে। তখন তারা দুজনও ডুবে যায়। স্থানীয় লোকজন প্রথমে মাহিন ও মিশকাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই দুজনের মৃত্যু হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা নাজমুলকে খাল থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আমিনুল হক বলেন, ‘তিনজনের কাউকে আমরা জীবিত অবস্থায় পাইনি।’

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, হাওরে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনার পেছনে অসচেতনতা দায়ী। হাওরের শিশুদের নিরাপত্তায় অভিভাবকদের আরও সচেতন থাকতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে অধ্যাদেশ জারির দাবি 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ব্যাতীত ২৫ ক্যাডারের বৈষম্যের শিকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও সুবিধা প্রদান এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে অধ্যাদেশ জারির দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ।

একইসঙ্গে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ৭ কলেজের স্বকীয়তা বজায় রেখে শিক্ষার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল সংগঠনটির পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের বঞ্চনা লাঘবের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত ও প্রয়াত মিলে প্রায় ৭৭৮জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ বাকি ২৫টি ক্যাডারের বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত মাত্র ৭২জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়। যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রকৃতপক্ষে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা কোনো কারণ ছাড়াই বাদ পড়ে যান। অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাগণের পদোন্নতির আদেশেও বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। 

এ সময় তারা ২৫ ক্যাডারের বঞ্চিত সকল কর্মকর্তাদের আবেদন পুনর্বিবেচনা এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো ভুতাপেক্ষ বেতন ভাতাসহ সকল আর্থিক সুবিধা প্রদানের জোর দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ আড়াল করে, অত্যন্ত কম গুরুত্বপূর্ণ ও অযৌক্তিক কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করে জুলাই সনদকে দুর্বল করা হয়েছে। এর একটি হলো- সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন। [সরকারি কর্মকমিশন (সাধারণ); সরকারি কর্মকমিশন (শিক্ষা) ও সরকারি কর্মকমিশন (স্বাস্থ্য)] এবং অপরটি হলো- হিসাব বিভাগ থেকে নিরীক্ষা বিভাগ আলাদাকরণ। যদি হিসাব বিভাগকে নিরীক্ষা বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়, তবে প্রি-অডিট কার্যক্রম বিলুপ্ত হবে, যা আর্থিক জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করবে।

তারা বলেন, একটি মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনে উপসচিব পদে কোটা বাতিল করে সকল ক্যাডার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে অনেকেই। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পর্যায়ের মোট পদের প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% এবং অবশিষ্ট ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০% পদ রাখার সুপারিশ করেছে, যা জুলাই বিপ্লবের সাথে সাংঘর্ষিক। জুলাই সনদেও এ বিষয়ের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তারা বলেন, ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ নিয়ে শিক্ষাখাতে নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। দেশসেরা কলেজগুলো বন্ধ করে অনুমান নির্ভর বা পরীক্ষামূলক কোর্স পরিচালনা সঠিক নয়। তাই, শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণের সুপারিশের আলোকে এবং অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সীমাহীন কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব সিভিল সার্ভিসের অভ্যন্তরে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে এবং একটি গণমুখী, সেবাধর্মী, জনবান্ধব জনপ্রশাসন গড়ে তোলার প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করতে সরকারের প্রতি তারা আহ্বান জানান।  

এ সময় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ও বিসিএস ইনফরমেশন এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি স ম গোলাম কিবরিয়া, ঢাকা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও বিসিএস জেনারেল এডুকেশন এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যক্ষ আই কে সেলিমুল্লাহ খন্দকার, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কফিলউদ্দিন ও অধ্যাপক এম এ সামাদ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্তন পরিচালক ও অবসরপ্রাপ্ত বিসিএস লাইভস্টক এসোসিয়েশনের সহসভাপতি ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রাক্তন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ, বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার নকীব আহসান, পেটেন্ট অধিদপ্তরের প্রাক্তন কর্মকর্তা প্রকৌশলী এসএম এনামুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ