ঐক্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই: ফখরুল
Published: 25th, October 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “ঐক্যের মাধ্যমে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই।”
শনিবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দৈনিক নয়া দিগন্তের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় সাংবাদিকের ওপর জামায়াত নেতাকর্মীদের হামলা
সাংবাদিক হেনস্তা: একজনকে শাস্তি দিল বিএনপি
তিনি এ সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংস্কার সনদে স্বাক্ষরিত দলগুলোর ঐক্যের মাধ্যমে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। ছোটখাটো সমস্যা দূরে রেখে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে সব রাজনৈতিক দলকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “১৯৭৫ সালের বাকশাল শাসনের সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের দুঃসময়। তখন সাংবাদিকরা বেকার হয়েছিলেন, অনেকে রাস্তায় হকারি করেছেন। পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্রকামী শক্তিগুলোর ওপর ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়নের কথা জাতি ভুলে যায়নি। ৬০ লাখ কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা, ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ড ও গুমের শিকার হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নয়া দিগন্তের মালিক মীর কাসেম আলী, সালাউদ্দিন কাদেরসহ অনেক আলেম ওলামাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে মিথ্যা মামলায়। এসব এই জাতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়।”
তিনি বলেন, “এই দেশবাসী একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায়-এমন বাংলাদেশ, যা কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে নয়, জনগণের ইচ্ছায় পরিচালিত হবে।”
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, “নয়া দিগন্ত আমাদের কাছে সংগ্রামের আরেক নাম। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে এই পত্রিকার সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশক ও কর্মীরা অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তবুও তাঁরা ধৈর্য, সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চালিয়ে গেছেন।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র গণতন ত র ফখর ল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনে চায় না বিএনপি, সিইসিকে জানালে মঈন খান
প্রশাসন ও সরকারি বিতর্কিত কর্মকর্তারা যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারেন সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলে তাদের জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আব্দুল মঈন এসব কথা বলেন। আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মঈন খান বলেন, গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি রাজনৈতিক দলে অনুগতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে অতীতের তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রহসনের শিকার হয়েছেন, তা সবারই জানা। এই বাস্তবতার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত না হতে পারেন। কমিশন যেন এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেন, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, অতীতের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা বাস্তবসম্মত নয়। বরং তাদের মধ্যে যারা অতীতে চাপ বা ভয়ের কারণে অন্যায় করেছে, তাদের এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ অন্তরে গণতান্ত্রিক। যখন তারা বুঝবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তখন এটি উৎসবমুখর একটি ঘটনার রূপ নেবে।
আব্দুল মঈন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ নয়— জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আমরা চাই— ১৮ কোটি মানুষ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, আর ১২ কোটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি যেন তারা একটি উদাহরণ স্থাপন করে, যাতে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে— বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।’ মঈন খান মনে করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত, তবুও একটি দিনে সারা দেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও তিন লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই জনবল সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আসে। ফলে এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে যাতে জনগণ বিশ্বাস করে যে তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দৃশ্যমানভাবে সেই নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে।
একই সঙ্গে মঈন খান বলেন, বিএনপি আগেই নির্বাচনী সংস্কার সংক্রান্ত তাদের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন যদি সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
শেষে তিনি বলেন, আমরা চাই, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যাতে বিশ্ব বুঝতে পারে— বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ , সাবেক সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া এ সময় মঈন খানের সঙ্গে ছিলেন।