ইউরোপের প্রতি কেন এতটা ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, এতে লাভ হচ্ছে কার
Published: 10th, December 2025 GMT
রাশিয়ার মস্কোয় গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা ইউক্রেন শান্তিচুক্তি–সংক্রান্ত আলোচনায় তেমন অগ্রগতি করতে পারেননি। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে ওয়াশিংটন ও ইউরোপের মধ্যে দূরত্ব যত গভীর হচ্ছে, তা রাশিয়ার জন্যই লাভজনক হয়ে উঠছে।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবারও ইউরোপের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ইউরোপ তাদের অভিবাসন নীতির কারণে ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ছে। অঞ্চলটি ক্রমেই পতনের দিকে যাচ্ছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাশিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তিনি মনে করেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাঁকেই ‘বিভিন্ন বিষয় মেনে নেওয়া শুরু’ করতে হবে। কারণ, তিনি পরাজিত হতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করেছে। সেখানে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। নথিতে বলা হয়েছে, ‘ইউরোপীয় কর্মকর্তারা যুদ্ধ নিয়ে বাস্তববাদী নন, তাঁরা শান্তিচুক্তির পথে বাধা তৈরি করছেন।’
নথিতে আরও বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ইউরোপীয় মানুষ শান্তি চান। কিন্তু সে আকাঙ্ক্ষাটুকু নীতিতে রূপান্তর করা হয় না।
গতকাল জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস নিরাপত্তা কৌশলটির সমালোচনা করেছেন। এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এর (নিরাপত্তা কৌশল) কিছু অংশ বোঝা যায়, কিছু অংশ গ্রহণযোগ্য, আর কিছু অংশ আমাদের জন্য ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়।’
ফ্রিডরিখ আরও বলেন, ইউরোপের গণতন্ত্র রক্ষা করতে ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্থিতিশীল সম্পর্কের পথে ইউরোপকে একটি অগণতান্ত্রিক বাধা হিসেবে দেখাতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। আর তা রাশিয়ার কর্মকর্তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে।
রাশিয়ার ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (ডিআইএফ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিরিল দিমিত্রিয়েভ এই সুযোগকে কাজেও লাগিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি ইউরোপকে নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনাগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছেন।
ইউরোপীয় অনলাইন কনটেন্ট বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকেরা গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সকে ১৪ কোটি ডলার জরিমানা করেছে। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ইউরোপকে নিয়ে নানা সমালোচনা করেন।
জরিমানা করার প্রতিক্রিয়ায় এক্সের মালিক ইলন মাস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘বিলুপ্ত’ করার আহ্বান জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউর প য় ইউর প র ইউক র ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই শঙ্কা এখনো কাটছে না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
নির্বাচন ক্রমান্বয়ে একটি অবধারিত বিষয়ে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে শঙ্কা দূর করে মানুষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। নির্বাচন হবে—বিষয়টি সবাই মেনে নিলেও ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই শঙ্কা এখনো কাটছে না। প্রধান উপদেষ্টা ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন করে দেখানোর কথা বলেছেন, যার অপেক্ষায় সবাই।
আজ বুধবার দুপুরে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক্-নির্বাচনী উদ্যোগ ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’ শেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকার একটি হোটেলে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভা শেষে প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনের পক্ষে প্রায় সবাই আছেন। রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, নাগরিক সম্প্রদায়, সেনাবাহিনী, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও নির্বাচন চায়। তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার বিষয়ে যে শঙ্কা, তা দূর হচ্ছে না।
আজ আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় চট্টগ্রামের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নারী অধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। সুষ্ঠু নির্বাচন, প্রয়োজনীয় সংস্কার, দুর্নীতির দমন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিসহ নানা প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন অংশগ্রহণকারীরা।
সভার আলোচ্য বিষয়গুলোর প্রসঙ্গ টেনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিকেরা সুশাসন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি, আইনের শাসন, নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যাশা জানিয়েছেন। সবাই একটি দক্ষ প্রশাসন, একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং একটি নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চায়। এই দাবিগুলো রাজনীতিবিদেরা তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারের ভেতরে কীভাবে স্থান দেবেন, তা জানার জন্য নাগরিকেরা অপেক্ষায় আছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেড় বছর ধরে দেশে এত সংস্কারের আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিষয়ে কোনো বড় আলোচনা হয়নি। রাজনীতিবিদ, সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন—কারও তরফ থেকেই এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যায়নি। চট্টগ্রামেও রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রায়ণ, দুর্নীতিমুক্ত থাকা এবং জবাবদিহির দাবিটি খুব বড়ভাবে এসেছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে সামনে আনা এবং তাঁদের পরিবারের আত্মীয়স্বজনের সহায়সম্পত্তির বিষয়টিও ঘোষণার দাবি উঠেছে। বিগত ও বর্তমান সরকার তাদের মন্ত্রিপরিষদের বা সরকারপ্রধানের সম্পত্তির হিসাব দেবে—এমন ঘোষণা দিলেও তা পরিপূরণ না করায় মানুষের মধ্যে অনেক বড় হতাশা রয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই ব্যর্থতা আগামী সরকারকেও তা না করার ক্ষেত্রে উৎসাহ জুগিয়ে গেল কি না।
এর আগে পরামর্শ সভায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, নাগরিকদের অধিকারসচেতন হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের জবাবের মুখোমুখি করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে সভায় জানান ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে যাওয়ার সময় মবের শিকার হব কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’