জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীদের কী হবে, তা নিয়ে অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত্র উল্লেখ করে এ বিষয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।
স্থানীয় সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলোতে ‘বাংলাদেশ আমেরিকান কমিউনিটি, বাফেলো’ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত্র, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মা–বোনদের কী হবে? যারা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ তাদের কী হবে?’

এর জবাব দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা আমাদের মাদেরকে মা হিসেবে দেখি। আমার পার্সোনাল (ব্যক্তিগত) অনুভূতি। আল্লাহ তাআলা মানুষের গর্ভে মেয়েসন্তানও দেন, ছেলেসন্তানও দেন। এই মেয়েসন্তানটা যখন বড় হয়ে পরিণত বয়সে পৌঁছে যায়, তখন তাকে পরিবার গঠনের জন্য অন্য একটা পরিবারের হাতে একটা মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই যে মেয়েটা গর্ভে নেওয়া, বুকের দুধ খাওয়ানো, বুকের বিছানায় তাকে আশ্রয় দেওয়া, মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লালন–পোষণ করা, বিয়ের বয়স হওয়া পর্যন্ত সে কর্ম উপযোগী হওয়া পর্যন্ত মা-বাপ তো শুধু তার সেবাই করে গেল। কিন্তু সে যখন সেবা দেওয়ার বয়সে উপনীত হলো, তখন ওই মা-বাপ তার সেবা নিলেন না। বরঞ্চ একজন যুবকের হাতে তাকে তুলে দিলেন উপহার হিসেবে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘দুনিয়ায় মানুষ উপহার দিয়ে খুব খুশি হয়।.

..ফুল দিয়ে আবার ফটো পিক করলে খুশি হয়। আনন্দের বন্যা বয়ে যায় অনেকের। কিন্তু একটামাত্র উপহার। এই উপহার দেওয়ার সময় মানুষ খুশি হতে পারে না। হাসে না। কান্নার বাঁধভাঙা জোয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পড়ে। এটি হচ্ছে ওই যে গোলাপের চারাটা উনি লাগিয়েছিলেন, যার নিচে তিনি সার দিয়েছেন, পানি দিয়েছেন, আগাছা নিংড়িয়েছেন, কীটপতঙ্গ থেকে তিনি হেফাজত করেছেন—আজকে সেই গোলাপ গাছে ফুল ফুটেছে। সেই ফুলটা এখন যুবকের হাতে তুলে দেওয়ার সময় মা-বাপের অনুভূতি হচ্ছে, বাবা আদরে–যত্নে ভালোবাসায় যে গোলাপ ফুল আমার বাগানে ফুটেছিল ও গোলাপটা আজকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। আমার গোলাপটাকে তুমি বাবা যত্নে রেখো। কী হবে আমাদের? আমার এই গোলাপ, যাকে আমি বুকে আগলে রেখেছিলাম। এখন নতুন একটা পরিবেশে যাচ্ছে। ওই পরিবেশের লোকেরা কি আমার এই গোলাপের মর্যাদা বুঝবে, কেমন থাকবে, আমার মেয়েটা, আমার বোনটা? এই চিন্তায় মানুষের চোখ দিয়ে পানি ঝরে।’

একজন পুরুষ যদি ওই মুহূর্তের ওই দৃশ্যটা স্মরণ রাখে, আজীবন ‘এই গোলাপের’ প্রতি কোনো ধরনের অবিচার করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আমার শ্বশুর–শাশুড়ি কেঁদে কেঁদে তাঁর, তাঁদের গোলাপ আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমরা আমাদের মা–বোনদেরকে এই মর্যাদায় দেখতে চাই। আমরা দেখতে চাই, মায়ের জাতি মাকে যেমন সম্মান করি, গোটা নারীসমাজকেও তেমন মা হিসেবে সম্মান করি।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘এক চালাক সহকর্মী একদিন প্রশ্ন করে যে বুঝলাম মেয়েকে–মাকে মা হিসেবে দেখব? স্ত্রীটাকে কী হিসেবে দেখব। আমি জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি কোথায়? কয় ফেনীতে? বুদ্ধিমান এলাকার মানুষ। বুদ্ধির প্রশংসা করতে হলো। আমি বললাম হ্যাঁ, স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে দেখবেন আর সন্তানের মা হিসেবে দেখবেন। আপনি যেমন আপনার মাকে সম্মান করেন। ভালোবাসেন। আপনার সন্তানেরাও দেখতে চায় কারা কারা তার মাকে সম্মান করে এবং ভালোবাসে। আমরা মায়ের জাতিকে সেইভাবেই দেখতে চাই। বলে যে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে তাদেরকে দরজা বন্ধ করে রেখে দেবে না তো তালাবদ্ধ করে? আমরা বলি যে এত কোটি কোটি তালা কেনার টাকা আমাদের হাতে নাই।’

নারীদের চাকরি প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সমাজের বনিয়াদ পরিবার আমরা মায়েদেরকে সেই জায়গায় দেখতে চাই। বলবেন তাইলে তো আর কোনো চাকরিবাকরি করতে পারবে না। সব পারবে। যার মেধা আছে, প্রয়োজন আছে, সমাজে সব করবে, সভ্যতার চাকা ঘোরানোর জন্য সমানতালে তারা অংশগ্রহণ করবে। তার সঙ্গে তারা দুইটা বাড়তি জিনিস ভোগ করবে, যেটা এখন তাঁরা পান না, একটা সমাজে তাঁদের প্রাপ্ত সম্মানটুকু দেওয়া হয় না আরেকটা কর্মক্ষেত্রে তাঁদের কোনো নিরাপত্তা নাই। ইনশা আল্লাহ সম্মান এবং নিরাপত্তা দুটোই তাদেরকে নিশ্চিত করা হবে। তাঁরা উচ্চশিক্ষা নেবেন তাঁদের মেধা অনুযায়ী, সমাজের অগ্রগতি উন্নতিতে কাজ করবেন তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী।’

জামায়াতের আমির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০১২ সালে তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য ভিসা দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেননি। দ্বিতীয়বার ভিসা পেলেও যেতে পারেননি।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি পরে জানতে পেরেছি, আমার বিরুদ্ধে বিশেষ একটি দেশ এবং তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার হাজার জাতের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) গোটা দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছিল, যার কারণে আমি আসতে গিয়েও আসতে পারিনি। যদি ৫ আগস্ট এই পরিবর্তন না হতো, হয়তোবা আজকেও আপনাদের সামনে আমার দাঁড়ানোর সুযোগ হতো না।’

এ সময় প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘যত বাংলাদেশি প্রবাসী নিবাসী এখানে আছেন, তাঁদের সবাইকে ভোট নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবেন। এটা দেখবেন না সে কোন ধর্মের, কোন দলের। আমরা সবার অধিকারটা দিতে চাচ্ছি।’

বাংলাদেশের যত শতাংশ নাগরিক প্রবাসে থাকেন, জাতীয় সংসদে সেই শতাংশ প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করবেন বলে জানান শফিকুর রহমান।
জামায়াতে ইসলামী সন্তানদের উদ্যোক্তা কিংবা দেশের সেবক হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষা দিতে চায় উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, ‘আমরা এমন শিক্ষা আমাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিতে চাই, শিক্ষার পাট চুকালে তার হাতে তার সার্টিফিকেট আসার আগে তার কাজ চলে যাবে। ইনশা আল্লাহ, সে একজন উদ্যোক্তা হবে, না হয় দেশের একজন সেবক হয়ে সে বিভিন্ন জায়গায় সার্ভিসে নিজেকে নিয়োজিত করবে। যার যেমন যোগ্যতা, তার যোগ্যতা অনুযায়ী সে (কাজ) পাবে। বেকারের মিছিল আর দীর্ঘ হবে না, সেই শিক্ষাটা আমরা এস্টাবলিশ (প্রতিষ্ঠিত) করতে চাই।’

সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় গেলাম কি গেলাম না, এটাও এখানেও বিবেচ্য বিষয় নয়। দুর্নীতি বাংলাদেশ থেকে বিদায় না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘গ্রাম্য আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট কোথাও আমাদের দেশে ন্যায়বিচার পাই না। আমরা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঘোষণা দিয়েছি।

কোরআন যে ন্যায়বিচার এই জাতিকে, বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হবে ইনশা আল্লাহ। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী তিনিও যদি কোনো অপরাধ করেন, তাঁর মুখের দিকে আইন তাকাবে না। আইন তাঁর অপরাধকে দেখবে, তাঁকে দেখবে না। ঠিক। আইন সমাজের মর্যাদা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হবে না। আইনের পাল্লা সমান হবে ইনশা আল্লাহ।’

দেশের ব্যাংক, বিমা, করপোরেশন, সেক্টর, মিল, ফ্যাক্টরি ও ইন্ডাস্ট্রি তছনছ করে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘লুটেরা বাহিনী সব লুট করে নিয়ে গেছে। এখন ব্যাংকে আপনারা দেখেন খবর শোনেন ক্লায়েন্টরা সেখানে তাঁর নিজের রাখা টাকা আনতে যান কিন্তু ব্যাংক তাঁকে টাকা দিতে পারে না। এই জায়গায়ও হাত দিতে হবে।’

দল ক্ষমতায় গেলে অর্থনীতি চাঙা করা হবে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা যদি অর্থনৈতিক সেক্টরের কঙ্কালটাও পাই, ইনশা আল্লাহ, গোশত ও চামড়া আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে লাগাবেন, ইনশা আল্লাহ। এই বিধ্বস্ত অসুস্থ রুগ্‌ণ অর্থনীতিকে আবার ইনশা আল্লাহ চাঙা করে তোলা সম্ভব। শুধু সদিচ্ছা ও সততার প্রয়োজন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ক ষমত য আল ল হ সন ত ন ক জ কর র জন য আম দ র প রব স উপহ র

এছাড়াও পড়ুন:

কালিজিরা খেতে কেন বলেছেন নবীজি (সা.)

নবীজির (সা.) হাদিসে কালিজিরাকে বলা হয়েছে ‘সব রোগের ওষুধ’। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম Nigella sativa, আরবিতে হাব্বাতুস সাওদা (الحَبَّةُ السَّوْدَاءُ)। এটি একাধারে খাদ্য, ওষুধ ও প্রতিষেধক। নবীজির বাণী আজ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কালিজিরা খাও, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২১৫)

যদিও কোরআনে সরাসরি কালিজিরার নাম উল্লেখ নেই, তবে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি প্রতিটি রোগের জন্য নিরাময় সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা শু‘আরা, আয়াত: ৮০)

প্রাকৃতিক উপাদানে আল্লাহ নিরাময়ের গুণ রেখেছেন, কালিজিরা সেই নিরাময়ের এক অনন্য উদাহরণ।

নবীজির (সা.) খাদ্যাভ্যাসে কালিজিরার স্থান

নবীজি (সা.) সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তিনি খেজুর, যব, মধু, দুধ, কালিজিরা ও অলিভ তেল নিয়মিত ব্যবহার করতেন। কালিজিরা ছিল তাঁর ঘরোয়া চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, কালিজিরায় মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮)

এই হাদিসে ‘মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য’ কথাটি বোঝায় যে আল্লাহ তাআলা কালিজিরায় এমন প্রাকৃতিক গুণ রেখেছেন, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা জাগ্রত করে। তবে এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং প্রাকৃতিক প্রতিষেধক ও পরিপূরক খাদ্য।

আরও পড়ুনহালাল খাদ্যাভ্যাস কেন গুরুত্বপূর্ণ৩১ আগস্ট ২০২৫কালিজিরা ঠান্ডা-গরম দুই ধরনের রোগেই উপকারী

সম্পর্কিত নিবন্ধ