ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে অবৈধ দোকান, উদ্বাস্তু, ভবঘুরে ও নেশাগ্রস্তদের উচ্ছেদ করা নিয়ে বামপন্থীদের নেতৃত্বে হকার এবং ডাকসু নেতাদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত চার দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)- এর যৌথ উদ্যোগে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। 

তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় টিএসসি মেট্রোরেল স্টেশন এলাকা থেকে শুরু করে চারুকলা অনুষদ পর্যন্ত এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘গ্রীন ফিউচার’-এর সদস্যরা অংশ নেন।

অভিযান চলাকালে গাঁজা ও ড্যান্ডিসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি যুবায়ের। 

তিনি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ঘটে। এর মধ্যে অনেকে মেট্রোর নিচে বা আশপাশের এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তাদের একটি অংশ মাদক সেবন ও বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত। রাত হলে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তারা।”

তিনি আরো বলেন, “এই ভবঘুরেদের আশ্রয়কে কেন্দ্র করেই মাদক কারবারি ও অপরাধচক্রগুলো সক্রিয় থাকে। তাই আমরা ডাকসুর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, শাহবাগ থানা পুলিশ ও মেট্রোরেল পুলিশের সহযোগিতায় এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি।”

অভিযানের সময় একজনের কাছ থেকে গাঁজা এবং আরেকজনের কাছ থেকে ড্যান্ডি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়ে যুবায়ের বলেন, “এটি ছিল ডাকসুর পক্ষ থেকে একটি প্রাথমিক অভিযান। ভবিষ্যতে আমরা স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে চাই, যেন ক্যাম্পাসে নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকে।”

এদিকে এই উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন একে অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে উদ্ভাস্তু, হকারদের নিয়ে ভিসি চত্বর, টিএসসি মোড়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে ক্যাম্পাসের বামপন্থী কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় বিক্ষোভ-মিছিলে বাঁধা দিলে প্রক্টরিয়াল টিম তাদেরকে বাঁধা দিলে আহত হয় কয়েকজন সদস্য। 

মিছিলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, সাধারণ সম্পাদক আকাশ আলী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ ও ইসরাত জাহান ইমু, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক নাইম উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানুষ হতে শেখায়। অথচ আজ উচ্ছেদের অভিযানের নামে যা করা হলো তা ঠিক না। যেসব উদ্বাস্তু বা হকাররা ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন আছে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এমন উচ্ছেদ অভিযান ভালো কিছু আনবে না।”

তবে, ক্যাম্পাসে অবৈধ মাদক ব্যাবসা ও চাঁদাবাজের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদের। তিনি এ সংক্রান্ত এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “ক্যাম্পাসের স্টেকহোল্ডার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর বাইরে কোনো মাদক ব্যবসায়ী, অনিবন্ধিত দোকানদার কিংবা হকারদের কোনো ইস্যুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বহিরাগত উচ্ছেদে যাদের পুরনো মাদক ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের সিন্ডিকেট ভেঙে যাচ্ছে, তারা আজ নতুন বয়ান হাজির করার চেষ্টা করল এবং মিছিলেরও আয়োজন করল।”

তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কথা একটাই- হয় ডাকসু থাকবে, নতুবা অবৈধ ব্যবসা-মাদক সিন্ডিকেট থাকবে; দুটো একসাথে চলতে দেবো না।’

বামপন্থীদের বিক্ষোভ শেষে ক্যাম্পাসে টোকাই ও নেশাগ্রস্তদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সাথে আলোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের নেতৃত্ব দেন ব্যবসার সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের ও কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমা।

আলোচনায় উপস্থিত সহকারী প্রক্টরদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলায় হকারদের নেতৃত্ব দেওয়া বামপন্থী শিক্ষার্থীদের সকল দেওয়ার দাবি জানানো হয়। একই সাথে তদন্ত কমিটি গঠন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ৬ মাসের বহিষ্কারাদেশ প্রদানের জন্য দাবি জানানো হয়। 

এদিকে আজ রবিবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি বিল্ডিংয়ে বিগত বছরগুলোতে ডাকসু ও হল সংসদের জন্য জমে থাকা ফান্ড পুনরুদ্ধার ও উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে হকারদের নেতৃত্ব দেওয়া বামপন্থী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের ও সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ।

ঢাকা/সৌরভ/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব মপন থ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের ‘বৃদ্ধ শিশু’ লাওৎসি

চীনের ‘বৃদ্ধ শিশু’ হিসেবে পরিচিত প্রকৃতিবাদী দার্শনিক লাওৎসি। যিনি মনে করতেন, মানুষকে একবার ব্যক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে উঠে আসতে হবে, তবেই শান্তি আসবে। তার এমন ভাবনার জন্য ‘বৃদ্ধ শিশু’ বলা হয়ে থাকে। 

যদিও চৈনিকরা মনে করে থাকেন তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকে জন্মে ছিলেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে তিনি আসলে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম-৪র্থ শতকের মানুষ।

আরো পড়ুন:

মানুষ উড়তে পারবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার

পাখির বাসা দেখে কী বোঝা যায় বৃষ্টি বেশি হবে নাকি কম হবে?

লাওৎসি তাওবাদের প্রবক্তা। তিনি ছিলেন চু প্রদেশের রাজকীয় লাইব্রেরির তত্ত্বাবধায়ক এবং প্রকৃতিবাদী দার্শনিক। লাওৎসি বিশ্বাস করতেন, ‘‘এই পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই ভারসম্যমূলক নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে। ’’

কিন্তু মানুষের কারণেই যখন চীনে দুর্নীতি বাড়ছিলো তিনি তখন দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিজ ইচ্ছায় যেতে চান নির্বাসনে।  পথে ঘটেছিলো বিষ্ময়কর এক ঘটনা।

লাওৎসি যখন চীনের পশ্চিম সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন সীমান্ত সীমান্তরক্ষীদের প্রধান ইন সি তার পথ আটকে দাঁড়ান। ইন সি লাওজুকে চিনতে পেরেছিলেন। তিনি লাওজুকে বলেন, চিরতরে দেশ ত্যাগ করার আগে কিছু উপদেশ দিয়ে যান। ইন সি তার জীবন সহজ করার উপদেশ চেয়েছিলেন।

অনেক ভেবে রাজি হলেন লাওৎসি। লিখিত আকারে শুরু করলেন জীবন সহজ করার উপায় লেখা। সীমান্তরক্ষীর পাশে একটা পাথরের ওপর বসলেন তিনি। লিখে ফেললেন তাওবাদের মহাগ্রন্থ তাও তে চিং। 
লেখা শেষ করে ইন সির হাতে তুলে দেন গ্রন্থটি। তারপর পশ্চিমের কুয়াশায় চিরতরে হারিয়ে গেলেন লাওৎসি। ইন সিই পরে তা অনুলিপি তৈরি করেন ও প্রচারে ভূমিকা রাখে।

তাওবাদ অনুসারে, মানুষ প্রকৃতপক্ষেই ভেতর থেকে ভালো। শুধু সেই ভালোত্বকে জাগিয়ে তুলতে হয় মন্দত্বকে ছাপিয়ে।

তাও তে চিং তাওবাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত। এটি ধর্মগ্রন্থ নয়। এতে স্থান পেয়েছে দার্শনিক কবিতার মাধ্যমে জীবন যাপনের নির্দেশিকা। বইটির শুরুর দুই লাইন অনেক জনপ্রিয়। ‘‘তাও ক তাও ফেই ছাং তাও, মিং ক মিং ফেই ছাং মিং”। যার বাংলা অর্থ ‘‘যে তাওকে মুখে প্রকাশ করা যায়; তা চিরন্তন তাও না। আর যে নামকে নামে আবদ্ধ করা যায়; তা চিরন্তন নাম না।’’

তাওবাদ-এ স্বীকার করা হয়েছে,‘‘ মানুষ প্রকৃতপক্ষে ভেতর থেকে ভালো। শুধু সেই ভালোত্বকে জাগিয়ে তুলতে হয় মন্দত্বকে ছাপিয়ে। সঠিক নির্দেশনা এবং শিক্ষা প্রদান করা হলে যে কাউকে মহৎ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।’’

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ