শিক্ষার্থীদের দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জন্য প্রদেয় ফান্ডের টাকা এর নেতৃবৃন্দের কাছে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ঘেরাও করা হয়েছে।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ঘেরাও করে এ বিক্ষোভ করেন ডাকসু ও হল সংসদের নেতৃবৃন্দ।

আরো পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে রংপুরে জামায়াতের বিক্ষোভ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে ববিতে বিক্ষোভ 

ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জোবায়ের, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ ও বিভিন্ন হল সংসদের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২০১৯ সালের পর থেকে ডাকসু ও হল সংসদ ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা হস্তান্তর ও ডাকসুর অতীতের সব ফান্ডের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করে বাজেট স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন; নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস থেকে টোকাই, ভবঘুরে ও মাদকচক্র নির্মূল; জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মিছিলে নেতৃত্বদানকারী ডেপুটি রেজিস্ট্রার রুহুল আমিনসহ সব ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করে বিচারের মুখোমুখি করা।

প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও চলাকালে রেজিস্ট্রি বিল্ডিংয়ের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.

এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কক্ষে প্রবেশ করে ৩ দফা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ঘটনাস্থলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হন।

এ বিষয়ে ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাস পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো আমাদের বাজেট বুঝিয়ে দিতে পারেনি। এজন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গালি খেতে হচ্ছে। এছাড়াও, গতকাল (শুক্রবার) আমরা ক্যাম্পাস থেকে হকারদের উচ্ছেদ করলে বামরা বহিরাগত এনে ক্যাম্পাসে মিছিল করে। কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার ভুমিকা পালন করছে।”

তিনি বলেন, “২৪ এর ৩ আগস্ট খুনি হাসিনার পক্ষে মিছিল করে কোষাধ্যক্ষ অফিসের কর্মকর্তা রুহুল আমিন। কিন্তু তিনি এখনো বহাল তবিয়তেই আছে। এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি নিয়মিত অফিস করে যাচ্ছে। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য লজ্জার।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য

এছাড়াও পড়ুন:

এই আবুল কালাম তো আরেকদিন আপনি কিংবা আমিও হতে পারি

সকাল মানে একটা দিনের শুরু। নতুন স্বপ্ন। নতুন সম্ভাবনা। নতুন যাত্রা। আবুল কালাম আজাদ ঢাকা শহরে এসেছিলেন কোন স্বপ্ন নিয়ে? বাড়ি শরীয়তপুর হলেও স্ত্রী–সন্তান নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর তখন। ফার্মগেটে টংদোকানে বসে চা খেতে খেতে কোন যাত্রার কথা ভাবছিলেন তিনি। পকেটে ছিল তাঁর পাসপোর্ট। তাঁর কোনো সম্ভাবনার কথাই আমাদের আর জানার সুযোগ নেই। টাইলসের ফুটপাতে লাল রক্তের সঙ্গে গড়িয়ে গেছে তা, যে রক্ত আবুল কালামেরই।

সরি, পাঠক—এমন নির্মম বর্ণনা মানসিকভাবে কারোরই নিতে পারার কথা নয় জানি। নিজের রক্তের ওপর নিথর দেহ নিয়ে প্রাণহীন আবুল কালাম শুয়ে আছেন—এমন দৃশ্য কোনোভাবেই মাথা থেকে সরছে না। আমি নিজেও ফার্মগেটের সেই একই ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে টংদোকানের চা খেয়েছি কতবার। আমার মতো অনেকেও।

আবুল কালাম টংদোকান থেকে চা নিয়ে মাত্র কাপে চুমুক দিয়েছেন। কিছু বোঝার আগেই মুহূর্তের মধ্যে মেট্রোরেলের পিলারের একটি ভারী যন্ত্রাংশ ছিটকে এসে তাঁর মাথায় পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু। আচমকা কোনো গুলি এসে তাঁর প্রাণটা কেড়ে নিল যেন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই দুনিয়ায় তাঁর জীবনখাতা বন্ধ হয়ে গেল।

আরও পড়ুনএই ঢাকা শহরে আমরা যে রকমভাবে বেঁচে আছি২৮ নভেম্বর ২০২৪

এ শহরের মানুষের মৃত্যু আসলে এমনই সস্তা। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের এ শহরের মানুষের প্রাণটাই সবচেয়ে কম দামি। একটি লোহার রড পড়েও এ শহরে মানুষের মৃত্যু হয়। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় ভবনের ওপর থেকে একটি ফুলের টব পড়েও।

আপনাদের নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা দীপান্বিতা বিশ্বাস দীপুর (দীপু সানা) কথা মনে আছে। অফিস থেকে ফেরার সময় বাচ্চার জন্য মুড়ির মোয়া কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাসায়। শান্তিনগর এলাকায় উড়ালসড়ক থেকে আচমকা ইট উড়ে এসে তাঁর মাথায় লাগে। এতেই মৃত্যু।

চব্বিশের জানুয়ারির ঘটনা। তখন তাঁকে নিয়ে লিখেছিলাম: ইট পড়েও এই ‘জাদুর শহরে’ মানুষ মারা যায়! এখনো জানা যায় না, সেই ইট কোত্থেকে কীভাবে উড়ে এল। আমরা শুধু জানি, একটি শিশু তার মাকে হারিয়ে ফেলল চিরতরে। আজ যেভাবে আবুল কালামের দুই শিশু এতিম হয়ে গেল। তিনিও শৈশবে মা-বাবা হারিয়ে অনেক কষ্টে বড় হয়েছিলেন।

যানজটের মারি লাগা এই শহরে কত কত উড়ালসড়ক করা হলো, তাতে মারি কমে না, আরও বেড়ে মহামারিই রূপ নেয়। এরপর করা হলো মেট্রোরেল। নাগরিক জীবনে একটু স্বস্তি এনে দিল এ যান।

এই দম বন্ধ হওয়া শহরে মেট্রোরেল কি এক টুকরা আশীর্বাদও নয়! হোক না, আকাশ বন্ধ করে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি খরচে বানানো। ফলে মেট্রোরেল নিয়ে আমাদের মধ্যবিত্তীয় আবেগেরও শেষ নেই। আজ সেই আবেগে রক্তের দাগ লেগে গেল।

গরিব-ছিন্নমূল-নিম্ন আয়ের মানুষকে বাদ দিলে এ ঢাকা শহরে কে মেট্রোরেলের যাত্রী নয়? যে কারণে আবুল কালামের মৃত্যু আরও বেশি স্পর্শ করে যায় আমাদের, ক্ষুব্ধ করেও তোলে।

আবুল কালামের মৃত্যু কি কাঠামোগত হত্যা নয়? এর জন্য দায়ী কে? এ মৃত্যুর জন্য তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে আবুল কালামের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে সরকার। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে? কোটি কোটি টাকা দিলেও একটি প্রাণের মূল্য হয় না জানি। কিন্তু এর জন্য কি কারও কোনো শাস্তি হবে না? নিছক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে চালিয়ে দিলেই দায় সারা হয়ে যাবে?

আবুল কালামের মৃত্যু কোনোভাবে মানতে পারছে না পরিবার। আসলে কীভাবে মেনে নেওয়া যায়! বোধজ্ঞান হারিয়ে এক স্বজন বলছেন, আবুল কালাম তাঁর বাচ্চাদের এতটা ভালোবাসতেন, পৃথিবীর কেউ এমনটা ভালোবাসে না। রাজকীয়ভাবে তাদের লালনপালন করতেন তিনি। আসলে পৃথিবীর সব বাবাদের কাছেই তো তাদের বাচ্চারা রাজপুত্র-রাজকন্যাই। আবুল কালামের বাচ্চারা এতটাই অবুঝ, হায়, এখনো বুঝতেই পারছে না, কী তারা হারিয়েছে! স্ত্রী বলছেন, আজকে বাসা থেকে বের হতে দিতে চাইছিলেন না। জোর করে বের হয়েছেন আবুল কালাম। মৃত্যু আসলে কীভাবে মানুষকে ডেকে নিয়ে যায়!  

উন্নয়ন বলতে আমরা বুঝি দেশ ও দশের ভাগ্য পরিবর্তন। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়। উন্নয়ন মানে এখানে অপ-উন্নয়ন। সেটিই তো আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখলাম। সামনেও হয়তো তেমনটি দেখে যেতে হবে।

আজকেই দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় খবর বের হলো, জাইকার অর্থায়নে দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ খরচ দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। আরও দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোর খরচই সবচেয়ে বেশি—ভারতের তুলনায় পাঁচ গুণ, এমনকি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চেয়েও বেশি।

আরও পড়ুনএ শহরে আগুনে পুড়ে মানুষ মরে, আমাদের কোনো অনুভূতি নেই১৫ অক্টোবর ২০২৫‘এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোর খরচই সবচেয়ে বেশি—ভারতের তুলনায় পাঁচ গুণ, এমনকি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চেয়েও বেশি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ