অ্যামাজনে ৫ লাখ কর্মীর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে রোবট, কর্মসংস্থানে প্রভাবটা কেমন
Published: 27th, October 2025 GMT
গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্রের ধরন বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যামাজন অদ্বিতীয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অনলাইন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিয়োগদাতা। ১৫ লাখের বিশাল কর্মী বাহিনী খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির। তবে নতুন এক মোড় নিতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যামাজনের শীর্ষ নির্বাহীরা রোবটের মাধ্যমে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের কাজ প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে।
রোবটের মাধ্যমে চাকরি প্রতিস্থাপন
২০১৮ সালের পর থেকে অ্যামাজনের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কর্মী সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ লাখে। কিন্তু কোম্পানির অটোমেশন টিমের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে রোবট ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নেবে। এতে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন এড়ানো যাবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি পণ্য প্যাকেজ ও সরবরাহে এতে সাশ্রয় করবে প্রায় ৩০ সেন্ট।
আরও পড়ুনচাকরির পাশাপাশি যে পাঁচটি কাজ আপনার আয় বাড়াবে২৬ অক্টোবর ২০২৫অটোমেশন ও ভবিষ্যতের লক্ষ্য
গত বছর বোর্ডকে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে অ্যামাজন কর্মকর্তারা বলেছেন, রোবোটিক অটোমেশন তাদের আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কর্মী যোগ না করেই ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দেবে। তাঁরা আশা করছেন, ২০৩৩ সালের মধ্যে পণ্যের বিক্রি দ্বিগুণ হবে অথচ জনবল বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
দ্রুত ডেলিভারির জন্য নকশাকৃত নতুন গুদামগুলোতে অ্যামাজন এমন কাঠামো গড়ে তুলছে, যেখানে মানুষের উপস্থিতি থাকবে ন্যূনতম। কোম্পানির রোবোটিকস বিভাগ দীর্ঘ মেয়াদে তাদের মোট কার্যক্রমের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অটোমেট করার লক্ষ্য স্থির করেছে।
তবে নথিতে দেখা যায়, কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সময় কোম্পানি ‘অটোমেশন’ বা ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শব্দগুলো এড়িয়ে চলে বরং ‘উন্নত প্রযুক্তি’ বা ‘কোবট’ (collaborative robot) শব্দ ব্যবহার করতে চায়—যা মানব-রোবট সহযোগিতার ভাবনা প্রকাশ করে।
আরও পড়ুনডিগ্রি নয় ভবিষ্যতের চাকরিতে কোন যোগ্যতা প্রার্থীকে এগিয়ে রাখবে, জানালেন লিংকডইন সিইও২১ ঘণ্টা আগেবিশেষজ্ঞদের মতামত
অ্যামাজনের মতো করে অটোমেশনকে কাজে লাগানোর এত বড় প্রণোদনা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই—বলছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও এমআইটির অধ্যাপক ড্যারন আসিমোগলু। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ নিয়োগদাতা কোম্পানিটি পরিণত হবে নেট চাকরিনাশক প্রতিষ্ঠানে, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান নয়।’
অ্যামাজনের প্রতিক্রিয়া
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর দেখা নথিগুলো অসম্পূর্ণ এবং তা কোম্পানির সামগ্রিক নিয়োগনীতিকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না বলে মন্তব্য করেছে অ্যামাজন। কোম্পানির মুখপাত্র কেলি ন্যানটেল বলেন, চলতি ছুটির মৌসুমে অ্যামাজন ২ লাখ ৫০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
অ্যামাজনের বিশ্বব্যাপী পরিচালন বিভাগের প্রধান উদিত মাদান বলেন, ‘একটি অংশে দক্ষতা বৃদ্ধিই পুরো প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে না। এটি কোনো নির্দিষ্ট কমিউনিটি কিংবা পুরো দেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা দেখতে হবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে।’
আরও পড়ুনসুইডেনে ৭৫০টি ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ, আবেদন স্নাতকোত্তরে, জীবনযাপন খরচ–ভ্রমণ ব্যয়সহ নানা সুযোগ২৬ অক্টোবর ২০২৫চাকরির ওপর প্রভাবটা কেমন—
যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র কয়েকটি কোম্পানির বেতনভুক্ত ৬ লাখের বেশি কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। ডেলিভারি কোম্পানি ফেডেক্সের আনুমানিক ৫ লাখ ৫০ হাজার কর্মচারী রয়েছেন।
মানুষের কাজ বা মজুরির ওপর রোবটের প্রভাব নিয়ে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় একটি রোবট ১ হাজার কর্মীর কাজ করেছে এবং এতে ওই কোম্পানির মজুরির পেছনে খরচ হ্রাস হয়েছে ০.
তবে অ্যামাজন এক ই–মেইল বার্তায় গণমাধ্যম সি–নেট–কে জানিয়েছে, ‘কর্মসংস্থান তৈরিতে আমাদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবেই থাকবে, বিশেষ করে উচ্চ বেতনের পদের জন্য।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র অ য ম জন র ন কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেসি ম্যানশন: জোহরান মামদানির নতুন ‘রাজপ্রাসাদে’ কী আছে
গ্রেসি ম্যানশন—যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের একটি বাড়ি। নিছক বাড়ি বললে ভুল হবে; বরং মেগাসিটি নিউইয়র্কের সামাজিক–রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নিউইয়র্কের মেয়রের সরকারি আবাস এটি। অর্থাৎ যিনি এ নগরের মেয়র হন, তিনি পরিবার নিয়ে সরকারি এ বাড়িতে থাকতে পারেন। অতীত থেকে সেটাই হয়ে আসছে।
এরই মধ্যে ইতিহাস গড়ে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। ৩৪ বছরের এই তরুণ রাজনীতিক আগামী জানুয়ারিতে শপথ নেবেন। এরপর স্ত্রী রমা দুওয়াজিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেসি ম্যানশনেই উঠতে চান তিনি। বর্তমানে এই দম্পতি কুইন্সের একটি ভাড়া করা ছোট্ট ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন।
নিউইয়র্কে আবাসনসংকট প্রকট। ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ির ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত বেশি। নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় জোহরান মামদানি নিউইয়র্কবাসীর জন্য সাশ্রয়ী জীবনযাপন ও আবাসন খাতে স্থিতিশীলতা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর পক্ষে তিনি ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন।
এ ছাড়া নবনির্বাচিত মেয়র পরিবার নিয়ে সরকারি ভর্তুকির একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন—এটা নিয়েও এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও তাঁদের ফ্ল্যাটটিতে শোবার ঘর মাত্র একটি। মাসে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার ভাড়া গুনতে হয়।
নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি পরিবার নিয়ে সরকারি ভর্তুকির একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন—এটা নিয়েও এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও তাঁদের ফ্ল্যাটে শোবার ঘর মাত্র একটি। মাসে প্রায় ২ হাজার ৩০০ ডলার ভাড়া গুনতে হয়।তাই বলা যায়, নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকে শুরু করে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরও জোহরান মামদানির আবাসস্থল নিয়ে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে কম জলঘোলা হয়নি। অবশেষে নিউইয়র্কের এই প্রথম মুসলিম মেয়র জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ঐতিহাসিক গ্রেসি ম্যানশনে বসবাস করবেন। এ যেন ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে ‘রাজপ্রসাদে’ থিতু হওয়া।
জোহরান মামদানি বলেছেন, দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে গ্রেসি ম্যানশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একটি হলো পরিবারের সুরক্ষা। দ্বিতীয়টি নিউইয়র্কবাসীর জন্য ‘সাশ্রয়ী জীবনযাপন কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করা।
নদীর ধারে পুরোনো বাড়ি
ম্যানহাটানের আপার ইস্ট সাইডের কার্ল শুরজ পার্কের ভেতর গ্রেসি ম্যানশন অবস্থিত। হলুদ রঙের এ বাড়ি কাঠের তৈরি। নকশা ফোডারেল স্টাইলের। ১৭৯৯ সালে গ্রেসি ম্যানশন তৈরি করা হয়। ১৯৪২ সাল থেকে এটি নিউইয়র্কের মেয়রের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক বাড়িগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা হিস্টোরিক হাউস ট্রাস্ট জানিয়েছে, ইস্ট রিভারের পাশে দোতলা কান্ট্রি ভিলা হিসেবে গ্রেসি ম্যানশনের নকশা করা হয়েছিল। গ্রীষ্মে বাড়ির বারান্দা থেকে ইস্ট রিভারের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
জোহরান মামদানি বলেছেন, দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে গ্রেসি ম্যানশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একটি হলো পরিবারের সুরক্ষা। দ্বিতীয়টি নিউইয়র্কবাসীর জন্য ‘সাশ্রয়ী জীবনযাপন কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করা।বাড়িটিতে পাঁচটি শোবার ঘর ও পাঁচটি বাথরুম রয়েছে। উঁচু সিলিংয়ের এ বাড়িতে রয়েছে বড় ফায়ারপ্লেস। রয়েছে পৃথক বসার ঘর ও একটি খাবার ঘর। দাপ্তরিক কাজকর্ম সাড়ার সুব্যবস্থাও রয়েছে বাড়িটিতে।
১৯৬০–এর দশকে গ্রেসি ম্যানশনের মূল ভবনের পাশে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জায়গা বানানো হয়। নিউইয়র্ক সিটি পার্ক অ্যান্ড রিক্রিয়েশন বিভাগের তথ্য বলছে, সব মিলিয়ে গ্রেসি ম্যানশনে ১২–১৩ হাজার বর্গফুট (প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার) জায়গা রয়েছে। বাড়িটি নিউইয়র্ক নগরের মালিকানাধীন সম্পদ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
আরও পড়ুনমামদানি উঠছেন ‘গ্রেসি ম্যানশনে’, কারণ পরিবারের নিরাপত্তা২১ ঘণ্টা আগে‘গ্রেসি ম্যানশন’ নাকি ‘পিপলস হাউস’
আর্চিবল্ড গ্রেসি ছিলেন একজন স্কটিশ–আমেরিকান জাহাজ ব্যবসায়ী। ১৭৯৯ সালে তিনি এই বাড়ি নির্মাণ করেন। আর তাঁর নামানুসারে বাড়ির নাম হয় গ্রেসি ম্যানশন। নিরিবিলি পরিবেশে পরিবার নিয়ে বসবাস করার জন্য বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন খ্যাতিমান এই ব্যবসায়ী। তখন বাড়িটি শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিল।
ধনী ব্যবসায়ী আর্চিবল্ড গ্রেসি একসময় তীব্র অর্থসংকটে পড়েন। তখন বাড়িটি তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়। যদিও পরের সময়গুলোয় এ বাড়ি তাঁর নামেই পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের শেষের দিকে ঐতিহাসিক এ বাড়ি নগর কর্তৃপক্ষের হাতে আসে। তখনো এ বাড়ির নাম বদলায়নি।
১৮৯৬ সালে বাড়িটি নগর কর্তৃপক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলে এটি সরকারি সম্পত্তি হয়। পরে নিউইয়র্ক সিটি জাদুঘরের সাময়িক কোয়ার্টার হিসেবেও গ্রেসি ম্যানশন ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৪২ সালে নিউইয়র্ক সিটি পার্ক কমিশনার রবার্ট মোজেস তৎকালীন মেয়র ফিওরেলো লা গার্ডিয়াকে বাড়িটিকে মেয়রের সরকারি বাসভবন হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ করেন। ওই সময়ে নিউইয়র্ক নগরের মেয়রের জন্য সরকারি কোনো বাসভবন বরাদ্দ ছিল না।
স্ত্রী রমা দুওয়াজির সঙ্গে জোহরান মামদানি