রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেবে
Published: 27th, October 2025 GMT
রাশিয়া ২১ অক্টোবর বুরেভেসতনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এটি পরমাণু-শক্তিচালিত দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা বর্তমান বিশ্বের উন্নত সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশ সেনা কমান্ড ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ এই পরীক্ষার ঘোষণা দেন।
গেরাসিমভের মতে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বহু ঘণ্টা আকাশে উড়েছে। নির্ধারিত উল্লম্ব ও অনুভূমিক—সব কৌশল শেষ করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পাল্লাই ক্ষেপণাস্ত্রটির চূড়ান্ত সীমা নয়।
পুতিন এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘বিশ্বের আর কারও কাছে নেই, এমন অনন্য এক পণ্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, পরীক্ষার সব মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য এটিকে প্রস্তুত করতে এখনো ‘অনেক কাজ বাকি আছে।’
পুতিন বলেন, ‘আমাদের আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঠিক করতে হবে—এই নতুন ব্যবস্থাটি কোনো শ্রেণির অস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত, এর সম্ভাব্য ব্যবহার পদ্ধতি কী হতে পারে। এ ছাড়া আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের লক্ষ্যে অবকাঠামো প্রস্তুত করতে হবে।’
এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুরেভেসতনিক পরীক্ষামূলক প্রোটোটাইপের ক্ষেত্র থেকে পরিচালনা করার মতো একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্ব মঞ্চের আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষায় অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন
চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্চাভিলাষী ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু করেন। আধুনিক হুমকি বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক অস্ত্র এবং উন্নত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য একটি বিস্তৃত জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা ছিল এটি।
গোল্ডেন ডোম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ফাঁকগুলো পূরণ করতে এবং বিস্তৃত পরিসরের আকাশভিত্তিক বিপদ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
গেরাসিমভের মতে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বহু ঘণ্টা আকাশে উড়েছে। নির্ধারিত উল্লম্ব ও অনুভূমিক—সব কৌশল শেষ করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পাল্লাই ক্ষেপণাস্ত্রটির চূড়ান্ত সীমা নয়।সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও এমন হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেটাও এই রুশ ক্ষেপণাস্ত্রকে থামাতে পারবে না। ওয়াশিংটন যখন তাদের নতুন ঢাল তৈরির পরিকল্পনায় জোর দিচ্ছে, ঠিক তখনই রাশিয়া এমন একটি অস্ত্রকে ধারণা থেকে বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এটি পৃথিবীতে বিদ্যমান অন্য কোনো অস্ত্রের মতো নয়। এটি হচ্ছে সীমাহীন পাল্লার পরমাণু-শক্তিচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এটি এমন এক হুমকি, যার বিরুদ্ধে গোল্ডেন ডোমকে লড়াই করতে হবে।
বুরেভেসতনিকের মতো নতুন ধরনের এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বিমান প্রতিরক্ষার ধারণাকে মৌলিকভাবে বদলে দিতে পারে।
তাই মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাবিদদের এমন অপ্রচলিত হুমকি নিয়ে আগে থেকে ভাবাটা স্বাভাবিক। এমটি–অ্যান্ডারসনের মতো ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকেরা সম্প্রতি উপগ্রহের চিত্র শেয়ার করেছেন, যাতে বুরেভেসতনিক উৎক্ষেপণের জন্য ভলোগদার কাছে স্থাপনা নির্মাণের সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখা যাচ্ছে। এটি সত্য হলে, বিশ্বব্যাপী কৌশলগত স্থিতিশীলতার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখা একটি অস্ত্রের মোতায়েন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ শুরু হয়েছে বলা চলে।
বুরেভেসতনিকের মতো নতুন ধরনের এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বিমান প্রতিরক্ষার ধারণাকে মৌলিকভাবে বদলে দিতে পারে।বুরেভেসতনিক কীভাবে কাজ করে
দৃশ্যত, বুরেভেসতনিক দেখতে একটি প্রথাগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই, যার ভাঁজ করা ডানা এটিকে সহজে সংরক্ষণে সহায়তা করে। এটি সলিড-ফুয়েল বুস্টার ব্যবহার করে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং ক্রুজিং গতিতে পৌঁছানোর পর এটি একটি বায়ুমণ্ডলীয় পরমাণু-শক্তিচালিত জেট ইঞ্জিনে রূপান্তর হয়। তত্ত্বগতভাবে, এই ইঞ্জিন ছোট একটি পারমাণবিক চুল্লির মাধ্যমে বাইরের বাতাসকে উত্তপ্ত করে, যা ক্ষেপণাস্ত্রটিকে জ্বালানি ছাড়া সপ্তাহ এমনকি মাসব্যাপী আকাশে থাকতে সাহায্য করে।
সূত্রমতে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরিচালন পাল্লা ২২ হাজার কিলোমিটার বলে অনুমান করা হয়েছে। বাস্তবে এটি কার্যত সীমাহীন হতে পারে। এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভাব্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য টহল দিতে পারে। উৎক্ষেপণ করার পাওয়ার পর এটি অপ্রত্যাশিত পথ ধরে লক্ষ্যের দিকে কৌশলগতভাবে এগোতে পারে। ফলে এটিকে বাধা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, ২১ অক্টোবরের পরীক্ষায় ক্ষেপণাস্ত্রটি কয়েক ঘণ্টা ধরে আকাশে ছিল, ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লম্ব ও অনুভূমিক কৌশলগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
কার্যকরভাবে বুরেভেসতনিককে ‘ডুমসডে অস্ত্র’ অর্থাৎ পরমাণু যুদ্ধের ক্ষেত্রে নিশ্চিত পাল্টা আঘাত হানার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করার মতো ডিজাইন করা হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র মত পর ক ষ র জন য র র পর পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
১ মাসেও দায়িত্ব বুজে পাননি বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনার পরও বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুজে পাননি সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: ইসমাইল হোসেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো: মাঈন উদ্দিন সাক্ষরিত এক চিঠিতে (স্মরক নম্বর: ৩৭.০২.০০০০.০০০.১০৫.২৭.০০৪৩.২৩.৯১২) তাকে বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিশেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
স্মারকে উল্লেখ করা হয়, বন্দর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: ইসমাইল হোসেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন।
বর্ণিত বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০২.০০৩.২৪-১০০ তারিখ: ২৩/০৪/২০২৫ খ্রি. মোতাবেক “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এম.পি.ও নীতিমালা-২০২১ এর স্পষ্টীকরণ ও সংশোধন” এর ১১.২২ অনুযায়ী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ০৫/০২/২০২৪ খ্রি. এর পরিপত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করতঃ অত্র অধিদপ্তরকে ১৫ (পনের) কর্মদিবসের মধ্যে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
স্মারকের অনুলিপি দেয়া হয়েছে, পরিচালক, পরিচালকের দপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ঢাকা অঞ্চল, ঢাকা। আঞ্চলিক উপপরিচালক, বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ঢাকা অঞ্চল, ঢাকা।
সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট (অতিরিক্ত দায়িত্ব), ইএমআইএস সেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিস, নারায়ণগঞ্জ। অধ্যক্ষ, বন্দর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ। এবং সংরক্ষণ নথি, বেসরকারি কলেজ শাখা, মাউশি অধিদপ্তর।
উল্লেখিত নির্দেশনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও মো: ইসমাইল হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে পারছেন না। যদিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের জন্য গত ১ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন মো: ইসমাইল হোসেন। কিন্তু তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আতিকুর রহমান জানান, আমি একদিন বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের গিয়েছিলাম। তখন শুনেছি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নতুন একজন নিয়োগ হওয়ার কথা।
পরবর্তীতে কি হয়েছে আমি জানি না। তবে এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেন। তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন। আমি নিজেও খোঁজ নিচ্ছি।
বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার মো: আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, স্কুলের সভাপতি এডিসি জেনারেল। সভাপতি মহোদয় দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার কথা। এ বিষয়ে সভাপতি মহোদয় বলতে পারবেন।
পরে এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আলমগীর হুসাইনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।