সাভার পৌরসভা ও আশুলিয়াকে একত্র করে ‘সাভার সিটি করপোরেশন’ এবং কেরানীগঞ্জকে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা বা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা। এ মাসের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মু.

মাহমুদ উল্লাহ মারুফ স্বাক্ষরিত এক পত্র থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

সাভার উপজেলার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানা এলাকা নিয়ে গঠিত হবে ‘সাভার সিটি করপোরেশন’। এর ফলে সাভার পৌরসভাসহ দুই থানার অধীন ইউনিয়নগুলোর বিলুপ্তি ঘটবে। 

বর্তমানে দেশে ১২টি সিটি করপোরেশন আছে। সেগুলো হলো—ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ। সাভার সিটি করপোরেশন হলে এটি হবে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৩০টি পৌরসভা আছে। কেরানীগঞ্জ পৌরসভা হলে সেটি হবে ৩৩১তম।

ঘোষণার পর থেকেই সাভারে আনন্দ ও নিন্দা দুটোই চলছে। অনেকে মিষ্টিমুখ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে, কেউ কেউ সমালোচনাও করছেন। অনেকে লিখেছেন—“সাভার সিটি কর্পোরেশন নামটা বড়, সুবিধা কই? সাভারকে সিটি কর্পোরেশন করা মানে উন্নয়ন নয়, বোঝা বাড়ানো। ট্যাক্স বাড়বে, খরচ বাড়বে, কিন্তু সুবিধা আগের মতোই থাকবে—রাস্তা ভাঙা, ড্রেন বন্ধ, ময়লা সব জায়গায়। সিটি কর্পোরেশন হলে উন্নয়ন হবে শুধু কাগজে, ভোগান্তি বাস্তবে।”

সাভারবাসীর বেশিরভাগই সিটি করপোরেশন ঘোষণায় খুশি। তবে, কর বৃদ্ধি ও নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ওয়াসার পানি নিয়ে আপত্তি।

নাজমা আক্তার নামে পৌর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “সিটি কর্পোরেশন হলে সাভার আরো উন্নত হবে। কিন্তু, ওয়াসার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আমরা ব্যবহার করতে পারব না। আমরা ওয়াসামুক্ত সিটি কর্পোরেশন চাই।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে একই সুর শোনা যায়। অনেকে বলছেন, সাভারের সুমিষ্টি পানিই আমরা পান করব। ওয়াসার পানি পান করব না।

অনেকে মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর সাভার-আশুলিয়া আরো উন্নয়নের পথে হাঁটবে। তবে তাদেরও একই বক্তব্য—“আমরা ওয়াসার বিরুদ্ধে। সাভারের পানি পান করে যে শান্তি, আমরা এর থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।”

ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়ন মো. খোরশেদ আলম বলেছেন, “আমরা যারা পৌরসভায় বসবাস করি, নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই নাই। তবে, সিটি কর্পোরেশন হলে নাগরিক সুবিধা বাড়বে, এটা নিশ্চিত। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা সবার আগে নিতে হবে। একটা সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করলেন জনগণের ঘাড়ে ট্যাক্সের বোঝা চাপল, কিন্তু নাগরিক সুবিধা পাইল না; এমন সিটি কর্পোরেশন আমারা আশা করতে পারি না।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা সাভারের পানি খেয়ে অভ্যস্ত। সিটি কর্পোরেশন হলে আমরা ওয়াসাকে স্বাগত জানাতে পারি না। আমরা ওয়াসামুক্ত সিটি কর্পোরেশন চাই। আমরা সাভারের যে পানি পান করে অভ্যস্ত, সাভারবাসী যেন সেই পানিই পান করতে পারেন।”

সাভার পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছামছুদ্দিন বলেছেন, “সাভার সিটি কর্পোরেশন হলে নাগরিক সেবার ওপর কোনো প্রভাব পরবে না। তবে, সিটি কর্পোরেশন হলে শত শত কোটি টাকার বিদেশি যেসব প্রজেক্ট আছে, সেগুলোর আওতায় আসবে।” 

ওয়াসার পানির বিষয়ে তিনি বলেন, “সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পরে মেয়র ও কাউন্সিলররা যদি মনে করেন, ওয়াসার পানি সাভারবাসীর প্রয়োজন; তাহলে নেবেন, আর তারা না চাইলে নেবেন না।”

স্থানীয়দের মতে, পৌরসভা থাকায় সাভারে যানজট, জলাবদ্ধতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এবং নাগরিক সেবার ঘাটতি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিভিন্ন সংস্থারকাজে সমন্বয়হীনতা, রাজস্ব আদায়ে ধস, অকার্যকর নাগরিক সেবা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং আর্থিক অব্যবস্থাপনা এর মূল কারণ। তবে, সিটি করপোরেশন হলে এসব সমস্যা থেকে সাভারবাসী পরিত্রাণ পাবে বলে আশা করছেন অনেকে।

সরকারি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র এবং জনসংখ্যার চাপ মিলিয়ে সাভার এখন এক বিশাল নগর এলাকায় পরিণত হয়েছে। পৌরসভার সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, আশুলিয়া অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক পোশাক কারখানা, শ্রমিকবসতি এবং আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে পরিকল্পিত নগরায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুবিধা, নিরাপদ পানি সরবরাহ কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণের মতো নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার সক্ষমতাও নেই। ফলে, আশুলিয়া এলাকার জনগণ যানজট, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

অন্যদিকে, ঢাকা শহরের প্রসার ও জনসংখ্যার চাপে কেরানীগঞ্জ উপজেলা অপরিকল্পিতভাবে দ্রুত নগরায়নের মুখোমুখি হচ্ছে। পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠান না থাকায় সড়ক, ড্রেনেজ, পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিংবা স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক নাগরিক সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। কেরানীগঞ্জে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে রাজধানীর পাশে একটি আধুনিক ও প্রাণবন্ত উপশহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ভ রব স র প রসভ প ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের পরামর্শ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের উচিত গণভোটের আয়োজন করা। একইসঙ্গে এ বিষয়ে দ্রুত আদেশ জারি করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ধাপগুলো তুলে ধরেন তিনি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কিছু সুপারিশ আছে, যেগুলো বাস্তবায়নে সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন, সেগুলো গণভোটের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। যেসব বিষয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব, সরকার তা দ্রুত করবে। এছাড়া, যেসব বিষয়ে ভিন্নমত নেই এবং দাপ্তরিক নির্দেশেই কার্যকর করা যায়, সেগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, তিন ধারায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ