জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবের কারণে পরিবার দেউলিয়া, তাই খুন করেছেন: আসামির স্বীকারোক্তি
Published: 28th, October 2025 GMT
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত হামলাকারী তাৎসুইয়া ইয়ামাগামি। টোকিওর একটি আদালতে বিচার শুরুর প্রথম দিনই ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, ‘সবই সত্য।’ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
২০২২ সালে জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় নারা শহরে নির্বাচনী প্রচারের সময় শিনজো আবেকে স্থানীয়ভাবে তৈরি বন্দুক দিয়ে গুলি করেন ইয়ামাগামি। কয়েকটি গুলি তাঁর শরীরে লাগে। পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ৬৭ বছর বয়সী আবে। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
আরও পড়ুনশিনজো আবে মারা গেছেন০৮ জুলাই ২০২২এ হত্যাকাণ্ডের পর আবের দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও ইউনিফিকেশন চার্চের (যা মুনিজ নামে বেশি পরিচিত) মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।
অভিযুক্ত ইয়ামাগামি তদন্তকারীদের বলেন, শিনজো আবে ওই গির্জার জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন। তাই তাঁর মা ওই চার্চে বিপুল অর্থ দান করেন। আর এ কারণেই তাঁদের পুরো পরিবার দেউলিয়া হয়ে যায়।
ইয়ামাগামির অভিযোগ, গির্জার প্রতি আস্থার প্রমাণ দিতে তাঁর মা প্রায় ১০ কোটি ইয়েন (প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার) দান করেছিলেন। এ অভিযোগের জেরে গির্জার কর্মকাণ্ডের ওপর তদন্ত হয়। চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। চলতি বছরের মার্চে টোকিও আদালত গির্জাটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুনশিনজো আবের হামলাকারীকে নিয়ে নানা তথ্য ০৮ জুলাই ২০২২তবে ইয়ামাগামির মা এখনো ওই গির্জার প্রতি অনুগত। ছেলের কর্মকাণ্ড তাঁর বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে বলেও তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন।
ইয়ামাগামির বিচার আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চলতে পারে। তিনি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তাঁর আইনজীবীর দাবি, যে অস্ত্র তিনি তৈরি করেছিলেন, তা আইন অনুযায়ী ওই শ্রেণিতে পড়ে না।
জাপানে বন্দুক সহিংসতার হার খুবই কম। আবে হত্যাকাণ্ডের পর দেশটি ঘরে তৈরি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন আরও কড়াকড়ি করেছে।
আরও পড়ুনকঠোর অস্ত্র আইনের জাপানে আবের হত্যা কীভাবে০৮ জুলাই ২০২২.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে থাকা শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি এই প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে দেখিয়ে আবাসন বৃত্তি থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছে, এমন অভিযোগে আজ বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে অবস্থান নেন।
এর আগে দুপুর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাঁদের স্লোগানের মধ্যে ছিল: ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, ভুজুংভাজুং ছেড়ে দে’, ‘এক দুই তিন চার, বৃত্তি আমার অধিকার’ এবং ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, নইলে গদি ছেড়ে দে’।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নীতিমালায় আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে তাঁরা আবাসন বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি বেসরকারি হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হল না হওয়ায় তাঁদের বৃত্তি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো হল নেই। আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের মেধাবী প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্প আমাদের জন্য করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যত কোনো হল নয়।’
শিক্ষার্থী সুমন আরও বলেন, ‘বৃত্তি নীতিমালায় সুকৌশলে আস–সুন্নাহ প্রজেক্টকে হল হিসেবে উপস্থাপন করে বৃত্তি থেকে আমাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এ পাঁয়তারাকে রুখে দিতে প্রতিবাদ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্প থেকে যখন আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাবে, তখন তাদের আশ্রয়স্থল কোথায়? আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আরও কঠিন আন্দোলন করব।’
শিক্ষার্থীরা প্রায় বিকেল চারটা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে থাকেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে ফিরে যান।
জানা যায়, আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত মেধাবী প্রকল্পের আওতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে থাকেন। এই প্রকল্পে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।