নির্বিচার শামুক লুট এখনই থামান
Published: 29th, October 2025 GMT
সুন্দরবন–সংলগ্ন নদী ও খাল থেকে নির্বিচার শামুক-ঝিনুক আহরণ নতুন হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এটি শুধু নদীর জীববৈচিত্র্যকেই বিপন্ন করছে না। এটি সামগ্রিক প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যও এক মারাত্মক হুমকি।
প্রথম আলোর খবর বলছে, প্রতিদিন ট্রলার ও নৌকা নিয়ে শামুক উত্তোলন করে ট্রাকে ও নদীপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় এই কর্মকাণ্ডে লিপ্ত অসাধু চক্র অবৈধ ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করছে। বন ও জলজ সম্পদ সংরক্ষণ আইন অনুসারে নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে শামুক বা ঝিনুক আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয়। তবু আইন কার্যকর হচ্ছে না। প্রশাসনিক তৎপরতার অভাব ও নজরদারির ঘাটতি এই অপরাধকে উৎসাহিত করছে।
শামুক–ঝিনুক নদীর তলদেশের মাটি ও পানির গুণগত মান বজায় রাখে। এগুলো নদীর প্রাকৃতিক ছাঁকনি বা ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। দূষণ কমায়। মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। মাছ, কাঁকড়াসহ জলজ প্রাণীর খাদ্যচক্র ধরে রাখে। এসব শামুক-ঝিনুকের নির্বিচার নিধন চলতে থাকলে খাদ্যচক্রের ক্ষয়, মাছ ও কাঁকড়ার সংখ্যা হ্রাস এবং নদীর পরিবেশের ধ্বংস অবধারিত।
শামুক আহরণে যুক্ত প্রান্তিক জেলেদের মানবিক বাস্তবতা এই সংকটের বিশেষ দিক। কয়রা অঞ্চলে লোনাপানি ঢুকে পড়ায় সেখানকার অধিকাংশ জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চাষাবাদের সুযোগ হারিয়ে বহু পরিবার নিঃস্ব অবস্থায় রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে অসাধু চক্র হতদরিদ্র নারী-পুরুষকে শামুক আহরণের কাজে নামিয়ে দিয়েছে। এতে প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং মানবসৃষ্ট দারিদ্র্য একাকার হয়ে সেখানে ভিন্নমাত্রার সামাজিক ও পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি করছে।
এ সমস্যা সমাধানে নিয়মিত ও ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে অবৈধ শামুকনিধন ঠেকানো এবং আইনের পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বনসংলগ্ন ও উপকূলীয় অঞ্চলে সচেতনতা বাড়িয়ে স্থানীয় জনগণকে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। এর পাশাপাশি দরিদ্র জেলেদের জন্য চাষাবাদ, ইকোট্যুরিজম, চিংড়ি বা ছোট জলজ ফার্মিংয়ের মতো বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করতে হবে, যাতে তঁারা ন্যায়সংগত উপার্জনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী ও মর্যাদাশীল জীবন যাপন করতে পারেন।
সার্বিকভাবে এই উদ্যোগগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করবে না; বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক দায়িত্বের বাস্তব প্রতিফলনও নিশ্চিত করবে। পরিবেশ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের এই সমন্বিত নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে শুধু সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব হবে না, স্থানীয় জনগণও ন্যায়সংগত জীবিকা উপার্জন করতে পারবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে রাসপূজায় পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, হবে না মেলা
সুন্দরবনের দুবলারচরে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ আধ্যাত্মিক উৎসব রাস পূজা ও পুণ্যস্নান। তবে এবারও এ আয়োজনে কোনো মেলা বসবে না এবং পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী তীর্থযাত্রীদের জন্যই উৎসবস্থলে যাতায়াতের অনুমতি থাকবে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, আগামী ৩ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী এই রাসপূজা ও পুণ্যস্নান। তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ চলাচল, বনাঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষা এবং নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে এবারও বন বিভাগ অনুমোদিত রুট নির্ধারণ করেছে।
বন বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তীর্থযাত্রীদের ৩ নভেম্বর দিনের ভাটায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং শুধুমাত্র দিনের বেলাতেই নৌযান চলাচল করা যাবে। নির্ধারিত চেকপোস্ট ছাড়া কোথাও থামা যাবে না। প্রতিটি লঞ্চ ও ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট বা বয়া রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নৌযানে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা ও সিরিয়াল নম্বর স্পষ্টভাবে লেখা থাকবে। তীর্থযাত্রীদের প্রবেশের সময় টোকেন বা টিকিট প্রদান করা হবে, যা সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে। রাসপূজা উপলক্ষে সুন্দরবনের দুবলারচরে বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, শিকার সামগ্রী, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও শব্দদূষণকারী যন্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারো কাছে এসব পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, তীর্থযাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ আবেদন করে অনুমতি নিতে হবে। প্রতিটি নৌযানকে আলোরকোল কন্ট্রোলরুমে রিপোর্ট করতে হবে এবং নির্ধারিত রুট উল্লেখসহ সিলমোহরযুক্ত অনুমতিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
অনুমোদিত পাঁচটি রুট হলো, ১. বুড়িগোয়ালিনী-কোবাদক-বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা খাল-হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর। ২. কয়রা-কাশিয়াবাদ-খাসিটানা-বজবজা-আড়ুয়া শিবসা-মরজাত হয়ে দুবলার চর। ৩. নলিয়ান স্টেশন-শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ৪. ঢাংমারী/চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ-পশুর নদী হয়ে দুবলার চর। ৫. বগী-বলেশ্বর-সুপতি-কচিখালী-শেলারচর হয়ে সুন্দরবনের বাহির পথে দুবলার চর।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “রাস পূজা উপলক্ষে আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন রুটে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিবেশ রক্ষা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে এবারের রাস উৎসব সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।”
তিনি আরো বলেন, “রাস পূজা উদযাপন উপলক্ষে দুবলার চরে কোনো মেলা অনুষ্ঠিত হবে না। শুধুমাত্র পূজার আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন তীর্থযাত্রীরা। এসময় কোনো সাধারণ পর্যটক ও ট্যুর অপারেটরকে অনুমতি দেওয়া হবে না। শুধুমাত্র তীর্থযাত্রীদের বনবিভাগের নিয়ম মেনে অনুমতি দেওয়া হবে।”
ঢাকা/শহিদুল/এস