সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা: সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে কিছু ধারা বাদ পড়ছে
Published: 29th, October 2025 GMT
সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষায় নতুন একটি অধ্যাদেশ (আইন) করতে যাচ্ছে সরকার। তবে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রণীত খসড়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রাথমিক খসড়ায় রাখা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের খসড়া বাস্তবায়িত হলে এটি সাংবাদিকদের কার্যকর পেশাগত সুরক্ষা দিতে পারবে না এবং সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা ও সুরক্ষা প্রশ্নে উদ্বেগ থেকেই যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মত, এসব ধারা বাদ দিয়ে অধ্যাদেশ হলে তাতে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য হোঁচট খাবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এখনো খসড়াটি চূড়ান্ত হয়নি। এটি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে প্রাথমিক একটি খসড়া করা হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে বলা যাবে না।
আরও পড়ুনবাংলাদেশের গণমাধ্যম: সংকট থেকে বের হয়ে আসার পথ কী০৩ মে ২০২৫গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ মনে করেন, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশে তথ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে সংশোধনী আনতে চাইছে, তাতে সংস্কারের মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না।প্রস্তাবিত ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর উদ্দেশ্য অংশে বলা হয়েছে, পেশাগত কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীরা প্রায়ই সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানির শিকার হন বা আশঙ্কা থাকে। তাই তাঁদের পর্যাপ্ত আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
অধ্যাদেশে ‘সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক সাংবাদিক, সম্পাদক, সম্পাদকীয় লেখক, বার্তা সম্পাদক, উপসম্পাদক, সহসম্পাদক, ভিডিও সম্পাদক, ফিচার লেখক, রিপোর্টার, সংবাদদাতা, খণ্ডকালীন সাংবাদিক, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও বিদেশি গণমাধ্যমের প্রদায়ক, কপি টেস্টার, কার্টুনিস্ট, সংবাদ চিত্রগ্রাহক, গ্রাফিক ডিজাইনার ও নিবন্ধিত গণমাধ্যমের সংবাদকর্মে নিয়োজিত কর্মীদের বোঝানো হয়েছে।
আরও পড়ুনগণমাধ্যমের মালিকদের জন্যও নৈতিকতার গাইডলাইন থাকা জরুরি২৬ আগস্ট ২০২৫গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রণীত খসড়াটি সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষায় একটি ‘সুরক্ষাবলয়’ তৈরি করতে পারত। কিন্তু মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা বাদ দেওয়ায় মূল উদ্দেশ্য অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে।যেসব ধারা-উপধারা বাদতথ্য মন্ত্রণালয়ের করা খসড়ার ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীকে সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা সরকারের। তবে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত দুটি উপধারা এখানে বাদ গেছে। এর মধ্যে একটির মূল কথা ছিল, কোনো ব্যক্তি এমন কিছু করবেন না, যাতে সাংবাদিকের ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হয়। অন্যটিতে বলা হয়েছিল, সাংবাদিকদের পেশাগত নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের করা খসড়ার ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, গৃহ, পরিবার ও যোগাযোগের সব মাধ্যম সুরক্ষিত রাখার অধিকার থাকবে এবং সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কমিশনের খসড়ায় থাকা দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপধারা মন্ত্রণালয় বাদ দিয়েছে। সেগুলোয় বলা ছিল, এক.
এই ধারাগুলো বাদ পড়ায় সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সুরক্ষায় দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুনগণমাধ্যম সংস্কারে প্রতিবিপ্লবের প্রশ্ন১৪ জুলাই ২০২৫এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আশঙ্কা করছেন, এই আইন কার্যকর হলে তাঁদের কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় যে ধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে আইনের আর বাস্তব কোনো প্রয়োজন থাকবে না।কামাল আহমেদ, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক৫ নম্বর ধারার প্রথম উপধারায় কমিশন বলেছিল, সাংবাদিক যেন কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কর্মচারী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভয়ভীতি বা জোরপূর্বক শারীরিক বা মানসিক চাপমুক্ত অবস্থায় স্বাধীনভাবে এবং অনুকূল পরিবেশে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেটি সরকার নিশ্চিত করবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় এই উপধারাও বাদ দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের খসড়ার ৭ নম্বর ধারায় বলা ছিল, যদি কোনো সাংবাদিক সরল বিশ্বাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এবং তাতে কারও ক্ষতি হয়, তবে ভিন্ন উদ্দেশ্য প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। এই পুরো ধারা তথ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় বাদ গেছে।
একইভাবে কমিশনের ১০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল, আদালত ধারা ৯-এর অধীন আরোপিত অর্থদণ্ডকে সাংবাদিকের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য করতে পারবেন এবং অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণের অর্থ দণ্ডিত ব্যক্তির কাছ থেকে আদায়যোগ্য হবে। এই ধারাও মন্ত্রণালয় বাদ দিয়েছে। কমিশনের খসড়ায় বলা ছিল, অধ্যাদেশের অধীন দায়ের করা অভিযোগ ও মামলা সহকারী পুলিশ সুপারের নিচে নন, এমন কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত খসড়ায় এই উপধারাও রাখা হয়নি।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রণীত খসড়াটি সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষায় একটি ‘সুরক্ষাবলয়’ তৈরি করতে পারত। কিন্তু মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা বাদ দেওয়ায় মূল উদ্দেশ্য অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুনগণমাধ্যম সংস্কারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ, ১২ নতুন সিদ্ধান্ত১০ জুলাই ২০২৫‘সংস্কারের মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না’গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ মনে করেন, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশে তথ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে সংশোধনী আনতে চাইছে, তাতে সংস্কারের মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আশঙ্কা করছেন, এই আইন কার্যকর হলে তাঁদের কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় যে ধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে আইনের আর বাস্তব কোনো প্রয়োজন থাকবে না। কারণ, এসব পরিবর্তন হলে এটি সাংবাদিকদের কার্যকর পেশাগত সুরক্ষা দিতে পারবে না।
আরও পড়ুনকমিশন প্রস্তাবিত সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ: প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা২৩ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব প রস ত ব ত ন শ চ ত কর স ব দকর ম কর মকর ত উদ দ শ য স ব ধ নত ক র যকর লক ষ য রক ষ য় গত ন র খসড় র ত খসড় উপধ র করছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকের পরামর্শে স্বামীকে গ্যাস ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যার অভিযোগ,
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রেমিকের পরামর্শে অতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট খাইয়ে স্বামী আব্দুল করিমকে (২৫) হত্যার অভিযোগে তানজিলা খাতুন (২২) নামের এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রাম থেকে আব্দুল করিমের মরদেহ উদ্ধার ও অভিযুক্ত নারীকে আটক করা হয়েছে।
আব্দুল করিম নন্দলালপুর গ্রামের নবী মন্ডলের ছেলে। আটক তানজিলা খাতুন পাবনার সাথিয়া উপজেলার বাঐটোলা গ্রামের হাসেন আলীর মেয়ে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এক মাস আগে মিশুকচালক আব্দুল করিমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তানজিলা খাতুনের। বিয়ের পর করিমের পরিবার জানতে পারে যে, আগে থেকেই সাথিয়ার প্রতিবেশী সিএনজি অটোরিকশার চালক নুর আলম ওরফে নাহিদের সঙ্গে তানজিলার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তানজিলা বাবার বাড়িতে গেলে প্রেমিক নাহিদ তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এ অবস্থায় তিনি প্রেমিকের পরামর্শে স্বামী করিমকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে তানজিলা কৃমিনাশক ট্যাবলেটের কথা বলে তার স্বামীকে অতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ান। কিছুক্ষণ পর থেকে পেটে জ্বালাপোড়া শুরু হলে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে এবং পরে তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে আব্দুল করিমের মৃত্যু হয়।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম আলী বলেছেন, বুধবার সকালে নিজ বাড়ি থেকে আব্দুল করিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নববধূ তানজিলাকে আটক করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার স্বামীকে অতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা/অদিত্য/রফিক