ক্ষমতার প্রতি মোহমুক্ত একজন নেলসন ম্যান্ডেলা
Published: 5th, December 2025 GMT
বিশ্বের অন্যতম শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রনায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে সেখানে বহুজাতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ২৭ বছর কারাবন্দী ছিলেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ম্যান্ডেলা। অবশেষে ১৯৯০ সালে মুক্তি পান তিনি।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর ভালো কাজ শুধু দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না; বিশ্বের অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি, যার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, রসবোধ ও কঠোর নির্যাতনের পরও প্রতিশোধের কথা ভুলে সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবিরাম সংগ্রাম বিশ্বজুড়ে ম্যান্ডেলাকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্বুজুড়ে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত।
১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী শুভেচ্ছাদূত হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি প্রাণঘাতী এইডসের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালান। ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাগতিক দেশ হওয়ার পেছনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ম্যান্ডেলার বেড়ে ওঠা
নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার এম্ভেজে গ্রামে। নিজ গোত্রের কাছে তিনি ‘মাদিবা’ নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর স্কুলশিক্ষক তাঁর নাম দেন নেলসন।
ম্যান্ডেলার বাবা স্থানীয় রাজপরিবারের একজন কাউন্সিলর ছিলেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। এরপর গোত্রপ্রধানের কাছে বড় হন। ১৯৪১ সালে ২৩ বছর বয়সে স্থানীয় এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু তিনি বিয়ে না করে জোহানেসবার্গে পালিয়ে যান।
পড়াশোনা
এর দুই বছর পর শ্বেতাঙ্গদের জন্য পরিচিত উইটসওয়াটারস্রান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানে বিভিন্ন বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় তিনি উদারপন্থী, চরমপন্থী ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন। পাশাপাশি বর্ণবাদ ও বৈষম্যের অভিজ্ঞতাও লাভ করেন।
রাজনীতি
এসব বিষয় রাজনীতির প্রতি ম্যান্ডেলার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে। ওই বছরই তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (এএনসি) যোগ দেন। পরের বছর এভলিন এনটোকো মেইসের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। এরপর একে একে তাঁদের ঘরে চার সন্তান আসে। রাজনৈতিক জীবনে ম্যান্ডেলা সক্রিয় হয়ে উঠলে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৮ সালে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়।
ম্যান্ডেলা আইনজীবী হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে অলিভার টাম্বোর সঙ্গে জোহানেসবার্গে একটি আইনি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাঁরা একসঙ্গে বর্ণবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। তাঁরা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে দমিয়ে রাখতে শ্বেতাঙ্গদের দল ন্যাশনাল পার্টির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন।
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করায় ১৯৫৬ সালে ম্যান্ডেলাসহ আরও ১৫৫ জন আন্দোলনকর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। তবে চার বছর ধরে চলা বিচার শেষে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়।
এ সময় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বিশেষ করে নতুন পাস হওয়া একটি আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান কৃষ্ণাঙ্গরা। আইনে কৃষ্ণাঙ্গরা কোথায় বসবাস করবেন, কোথায় কাজ করবেন, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।
রোবেন দ্বীপে এই কারাকক্ষেই দীর্ঘ সময় বন্দী ছিলেন ম্যান্ডেলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন লসন ম য ন ড ল
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থী পরিচয়ে প্রতারণা, বাসাভাড়া নিয়ে দেড় বছর ক্যাম্পাসেই থেকেছেন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে নিয়েছিলেন বাসাভাড়া। নিজেকে কখনো বাংলা বিভাগ আবার কখনো মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে যুক্ত হয়েছিলেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠনেও। একাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন ঋণ। এক বছর এভাবে চলার পর অবশেষে ধরা পড়েছেন তিনি।
ধরা পড়া ওই ব্যক্তির নাম সীমান্ত ভৌমিক (১৯)। তিনি খুলনা জেলার সদর উপজেলা বাসিন্দা। তিনি ২০২৪ সালের জুনে শিক্ষার্থী পরিচয়ে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। এরপর বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। তবে এক বছরে তাঁর কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁকে হাতে নাতে ধরেন। পরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে সোপর্দ করেন।
জানতে চাইলে ভুয়া পরিচয় শনাক্ত করা অন্যতম শিক্ষার্থী যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মো. ইখলাস বিন সুলতান বলেন, কিছুদিন ধরে আচরণগত অসংগতি ও বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার ঘটনায় সীমান্তের বিষয়ে তাঁদের সন্দেহ হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে কৌশলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর এক পর্যায়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি আর সীমান্ত দুজনই দক্ষিণ ক্যাম্পাসে পাশাপাশি ভাড়া বাসায় থাকতাম। সে সুবাদে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়। সন্দেহজনক আচরণের কারণে আজ আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলেও বিভাগে কেউ তাঁকে চেনেন না। তাই আমরা তাঁকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে সোপর্দ করি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখন অনেক সচেতন। তাঁদের উদ্যোগেই দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী সেজে ঘুরে বেড়ানো সীমান্তকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, সে বহুজনের সঙ্গে লেনদেনে জড়িত। তাঁকে নিরাপত্তা দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুয়া শিক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার ঘটনা এবার প্রথম নয়। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাতেও মোহাম্মদ মিনহাজ নামের একজনকে আটক করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তিনি অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পরিচয় দিতেন।