প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত (আইডিপি) অবস্থায় আছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। দেশজুড়ে গণনা করে এই প্রথম এ সংখ্যা তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম-জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা)। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে আজ দেশে দুর্যোগজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সামগ্রিক সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল জাতিসংঘের সংস্থাটি। এখানে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় কীভাবে মানুষের জীবনকে এখনো প্রভাবিত করছে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আইওএমের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আইওএমের গবেষণা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বর্তমানে ৪৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৭ জন মানুষ দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে এ–সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ে ২৯ হাজারের বেশি তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং ৫ হাজার ৩৮৮টি মাঠ পরিদর্শন করা হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের গবেষণার মধ্যে এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড়।

বাংলাদেশে প্রতিবছর নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, কিন্তু এত দিন পর্যন্ত দুর্যোগজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির কোনো যাচাইকৃত জাতীয় পরিসংখ্যান ছিল না। এই তথ্যের ঘাটতি পূরণে আইওএম দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪ হাজার ৫৭৯টি ইউনিয়ন, ৩২৯টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশেনের ৪৮০টি ওয়ার্ডজুড়ে এই গণনা পরিচালনা করে।

আজ এ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইওএম বাংলাদেশের মিশনপ্রধান ল্যান্স বোনো বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা জানা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ফলাফল জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আরও সুসংগঠিত পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।’

এই গণনায় জানা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ (৬৩ শতাংশ) ২০২০ সালের এপ্রিলের আগেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা দীর্ঘস্থায়ী ও অমীমাংসিত বাস্তুচ্যুতিরই প্রতিফলন। এক-চতুর্থাংশ (২৫ শতাংশ) ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে, এ সংখ্যা ১২ লাখ ১ হাজার। এরপর ঢাকা বিভাগে ৭ লাখ ৯০ হাজার লাখ এবং রাজশাহী বিভাগে ৬ লাখ ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে। মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের এক-চতুর্থাংশই রয়েছে চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ভোলা ও নোয়াখালী এই চার জেলায়। অধিকাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ (৮৫ শতাংশ) গ্রামীণ ইউনিয়ন এলাকায় বসবাস করে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা এই গণনাকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনার জাতীয় কৌশলের বাস্তবায়নকে আরও শক্তিশালী করার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে স্বাগত জানান। এই কৌশলে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর নিয়মিত ও কাঠামোগত তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আবদুল ওয়াদুদ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ সাইফুল্লাহ; এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ইভা আতানাসোভা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে গণনাপদ্ধতি নিয়ে উপস্থাপনা, প্রতিবেদন উন্মোচন এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির তথ্য সরকারি ডেটা ব্যবস্থায় কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই জরিপ দুর্যোগ প্রস্তুতি, পুনর্বাসন পরিকল্পনা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু অভিযোজন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় নীতিনির্ধারকদের আরও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা আসলে কত লাখ, ৩২ নাকি ৬০

চট্টগ্রাম জেলার আয়তন সব মিলিয়ে ৩ হাজার ২৮২ বর্গমাইল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার আয়তন ৬০ বর্গমাইলের মতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন—দুই সংস্থার হিসাবেই রয়েছে এমন তথ্য। তবে নগর বা সিটি করপোরেশন এলাকায় জনসংখ্যা কত তা নিয়ে এই দুই সংস্থার হিসাবে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। সিটি করপোরেশনের হিসাবে যে সংখ্যক জনসংখ্যার কথা বলা হয়, তা পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবের প্রায় দ্বিগুণ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নগরে জনসংখ্যা আনুমানিক ৬০ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার জনসংখ্যা ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৫০৭ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব অবশ্য কোনো জরিপের ভিত্তিতে করা হয়নি, অনুমানের ভিত্তিতেই করা। উত্তর দিকে লতিফপুর-জঙ্গল সলিমপুর; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদী; পূর্ব দিকে কর্ণফুলী নদী থেকে হালদা, চিকনদণ্ডী এবং পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর, ভাটিয়ারী ও জঙ্গল ভাটিয়ারী—কাগজে–কলমে এটিই চট্টগ্রাম নগরের সীমানা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে সেখানে বসবাসকারী মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, জনসংখ্যার সঠিক হিসাব না থাকলে প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট নির্ধারণ, অবকাঠামোর আকার, সেবাদানের সক্ষমতা—সবকিছুতেই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে সরকারি সম্পদের অপচয় হয় এবং জনগণ প্রত্যাশিত সেবা পায় না।

নথিপত্রে জনসংখ্যার হিসাব

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৫। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং ১৫টি উপজেলা এলাকা রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা দেখানো হয় আনুমানিক ৬০ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বলা হয় আনুমানিক ৭০ লাখ। অর্থাৎ করপোরেশন বলছে, তিন বছরে জনসংখ্যা ১০ লাখ বেড়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা দেখানো হয় আনুমানিক ৬০ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বলা হয় আনুমানিক ৭০ লাখ। অর্থাৎ করপোরেশন বলছে, তিন বছরে জনসংখ্যা ১০ লাখ বেড়েছে।

নগরে ৭০ লাখের মতো জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ ভাসমান, এদের ভাসমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাঁদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, মাত্র ছয় বর্গমাইল আয়তন নিয়ে ১৮৬৩ সালে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালটি। ১৯৮২ সালে পৌরসভাকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নামে যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর সময় জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখ। যদিও বিবিএসের হিসাবে ১৯৯১ সালে সিটি করপোরেশনে জনসংখ্যা ১৩ লাখ ৬৬ হাজার।

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা আসলে কত লাখ, ৩২ নাকি ৬০
  • যুক্তরাষ্ট্রে চাকরিতে ছাঁটাই ঘোষণা করোনা মহামারির পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে