ডায়াবেটিক রোগীদের আঙুলে সুচ ঢুকিয়ে রক্ত পরীক্ষার দিন শেষ হচ্ছে
Published: 10th, December 2025 GMT
রক্তের শর্করা মাপার জন্য ডায়াবেটিক রোগীদের অনেকেই নিয়মিত আঙুলে সুচ ঢুকিয়ে রক্ত পরীক্ষা করেন। বিষয়টি কষ্টকর হলেও ডায়াবেটিসের প্রকোপ এবং এর জটিলতা মোকাবিলায় রক্তের শর্করা পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিজ্ঞানীরা আলোর তরঙ্গ কাজে লাগিয়ে রক্তের শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। সেন্সরযুক্ত যন্ত্রটির ওপর হাত রাখলেই রক্তের শর্করার মাত্রা জানা যাবে। ফলে আঙুলে সুচ ঢুকিয়ে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে না ডায়াবেটিক রোগীদের। নতুন এই যন্ত্রের তথ্য অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন যন্ত্রটির বিষয়ে এমআইটির বিজ্ঞানী জেওন উওং ক্যাং জানান, কেউই চায় না প্রতিদিন একাধিকবার নিজের আঙুলে সুচ ফোটাতে। এটি বেশ অস্বস্তির বিষয়। অনেকেই চিকিৎসকের সুপারিশের চেয়ে কম ঘন ঘন পরীক্ষা করেন, এতে গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে। নতুন আলোভিত্তিক বিকল্প সমাধান ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের গবেষণার ফসল। ২০১০ সালে এমআইটির লেজার বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের প্রকৌশলীরা প্রথম দেখান, রামান স্পেকট্রোস্কোপি ব্যবহার করে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করা যেতে পারে। এই কৌশলে বিভিন্ন অণু কীভাবে আলোকে বিচ্ছুরিত করে তার ভিত্তিতে শনাক্ত করা হয়। ত্বকের ওপর কাছাকাছি-ইনফ্রারেড ও দৃশ্যমান আলো ফেলে রামান সংকেত বিশ্লেষণ করা হয়। ফলে তরলে গ্লুকোজ শনাক্ত করা যায়।
২০২০ সালে এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে অন্য একটি কোণ থেকে আসা কাছাকাছি-ইনফ্রারেড আলোর সঙ্গে রহমান আলোকে একত্র করার মাধ্যমে গ্লুকোজ সংকেতকে আলাদা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়। এই পদ্ধতি অন্যান্য ত্বকের অণুর সংকেত ফিল্টার করতে সাহায্য করে। ফলে গ্লুকোজের তথ্য স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।
আগে সংকেত ধারণের যন্ত্রটি আকারে প্রায় প্রিন্টারের সমান ছিল। দীর্ঘ গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এখন যন্ত্রটির আকার কমিয়ে এনেছেন, যা প্রায় জুতার বাক্সের সমান। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী আরিয়ানা ব্রেসি বলেন, আমরা এখন মাত্র তিনটি সংকেতের ব্যান্ডের ওপর মনোযোগ দিচ্ছি। যন্ত্রটির মাধ্যমে তথ্য জানতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় প্রয়োজন।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোন ধরনের পেশা ঝুঁকিতে ফেলবে এআই, কোনটি থাকবে নিরাপদ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের কাঠামোকে আমূল বদলে দিতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সমর্থক ও সংশয়বাদী—উভয় পক্ষই একমত। আগে কর্মীরা যেসব কাজ করতেন, প্রযুক্তির ক্রমাগত অগ্রগতির ফলে সেসব কাজ এখন এআই অনায়াসে করতে সক্ষম হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, এআই ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ শতাংশ কর্মীকে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার অর্জন করেছে, যা মজুরি হিসেবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণযুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্রমেই এআই গবেষণা ও ব্যবহারনির্ভর হয়ে উঠছে। কিছু হিসাবে গত এক দশকে বেসরকারি খাতে এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলার। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও বেড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এআই ও সংশ্লিষ্ট জ্বালানি খাতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বের শীর্ষ নেতা বানানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
তবে এ উদ্দীপনার বিপরীতে রয়েছে উদ্বেগও। অনেকের আশঙ্কা, এআই শ্রমবাজারে অভূতপূর্ব ধাক্কা দেবে। এতে একদিকে পুনরাবৃত্তিমূলক শ্রমভিত্তিক কাজ, অন্যদিকে নকশা ও কোডিংয়ের মতো উচ্চদক্ষ পেশাও ঝুঁকিতে পড়বে।
চলতি বছরে কর্মী ছাঁটাইয়ের যে ঢেউ যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে, তার সঙ্গেও এআইকে যুক্ত করা হচ্ছে। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যামাজন প্রায় ১৪ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়ার সময় এআই প্রযুক্তির রূপান্তরকারী অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেছে।
কী জানা গেলএমআইটির গবেষকেরা ‘আইসবার্গ ইনডেক্স’ নামে একটি সূচকের তথ্য ব্যবহার করেছেন, যা শ্রমবাজারে এআইয়ের প্রভাব বা ঝুঁকি পরিমাপের জন্য তৈরি হয়েছে। ৩ হাজার কাউন্টির ৯২৩টি পেশার অন্তর্ভুক্ত ১৫ কোটি ১০ লাখ কর্মী এবং ৩২ হাজারের বেশি দক্ষতা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা অনুমান করেছেন, কত দ্রুত এআইয়ের সক্ষমতা মানুষের পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে মিলে যেতে পারে।
তবে গবেষকেরা স্পষ্ট করেছেন, ১২ শতাংশের এই হিসাব হলো প্রযুক্তিগত উন্মুক্ততা, যেখানে এআই পেশাগত কাজ সম্পাদন করতে পারে। এটি সরাসরি চাকরি হারানোর ফলাফল নয়। বাস্তব শ্রমবাজারে এর প্রভাব নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের কৌশল, কর্মীদের অভিযোজনক্ষমতা ও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ওপর।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমানে এআইয়ের ব্যবহার মূলত প্রযুক্তি খাতের পেশাগুলোতেই সীমাবদ্ধ, যা শ্রমবাজারের মোট মজুরি মূল্যের ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এআইয়ের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রশাসনিক কাজ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা শ্রমবাজারের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ অংশজুড়ে রয়েছে।
গবেষকেরা কয়েকটি বিস্তৃত খাত ও পেশাকে ‘এআই উন্মুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটিং ও প্রযুক্তি খাত। যেমন সফটওয়্যার প্রকৌশলী, ডেটা সায়েন্টিস্ট, বিশ্লেষক, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্ট পেশা—এসব খাতে বর্তমানে এআইয়ের ব্যবহার বেশি। বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ, যেমন আর্থিক বিশ্লেষণ ও প্রশাসনিক সমন্বয়। অর্থ, হিসাবরক্ষণ ও অনুরূপ ব্যবসায়িক সেবা খাত এবং পেশাগত সেবা খাত, যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার প্রশাসনিক ক্ষেত্রও রয়েছে।
তবে গবেষণাটি কেবল প্রযুক্তিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যেখানে প্রযুক্তির পরিপক্বতা ও ব্যবহারপদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, শারীরিক স্বয়ংক্রিয়তার (ফিজিক্যাল অটোমেশন) প্রভাব ভবিষ্যতে সক্ষমতা আরও বাড়লে শ্রমবাজারে ক্রমেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এর আগে গত জুলাইয়ে মাইক্রোসফট প্রকাশিত এক গবেষণায় কোন কোন পেশায় এআই স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সে বিষয়ে আরও বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল।
মাইক্রোসফট তাদের কো-পাইলট চ্যাটবটের সঙ্গে দুই লাখ ব্যবহারকারী কথোপকথনের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিটি পেশার জন্য একটি করে এআই প্রযোজ্যতা স্কোর নির্ধারণ করেছে এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পেশাগুলো চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো—
একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ডেস্কে কাজ করছেন কর্মীরা