সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে শাসক পরিবারের এক সদস্যের সাবেক স্ত্রী জয়নাব জাভাদলি গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সাবেক স্বামী শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশের কাছে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করার পর এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়েছে, জয়নাব তাঁদের তিন মেয়েকে অপহরণ করেছেন।

শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম দুবাইয়ের শাসকের ভাইয়ের ছেলে। ২০১৯ সালে জয়নাব জাভাদলির সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই শিশুসন্তানদের নিজেদের হেফাজতে রাখা নিয়ে সাবেক স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছে।

গত কয়েক সপ্তাহে এই বিরোধ তীব্র রূপ নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সন্তানেরা কখনো মায়ের কাছে আবার কখনো বাবার কাছে ছিল। দুজনই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্তানদের অপহরণের অভিযোগ এনেছেন।

শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম দুবাইয়ের শাসকের ভাইয়ের ছেলে। ২০১৯ সালে জয়নাব জাভাদলির সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই শিশুসন্তানদের নিজেদের হেফাজতে রাখা নিয়ে দুই সাবেক স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছে।

সবশেষ বিরোধের ঘটনাটি অনলাইনে এসে সরাসরি অভিযোগ করার কারণে জয়নাবকে সাইবার অপরাধের অভিযোগেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

জয়নাব বলেছেন, তিনি ঝুঁকি নিয়েই কাজটি করেছিলেন।

ব্রিটিশ আইনজীবী ডেভিড হেই-কে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় জয়নাব বলেন, ‘আমি জানতাম, এটি আমার শেষ সুযোগ। কারণ, তাঁরা আর আমাকে তাদের দেখার সুযোগ দেবেন না। আমি সত্যিই ধরে নিয়েছিলাম যে এটি আমার শেষ সুযোগ। তাই আমি সরাসরি অনলাইনে এসে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলাম।’

জয়নাব জাভাদলি তাঁর দুবাইয়ের বাড়ি থেকে ভিডিও বার্তাটি দিয়েছেন। বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ মেয়েরা বাবার সঙ্গে থাকার পর তিনি তাদের ফেরত নিয়ে এসেছেন।

জয়নাবের দাবি, ২০২২ সালে দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি সন্তানদের নিজের হেফাজতে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, সন্তানেরা ১৮ বছর পর্যন্ত তাঁর হেফাজতে থাকবে এবং তাদের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে। মেয়েদের স্কুলের খরচ বহন করবেন তাদের বাবা।

আইনজীবী ডেভিড হেই বলেছেন, এসবের বিনিময়ে জয়নাবকে কিছু কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। এসব কাগজে উল্লেখ করা ছিল—তিনি তাঁর পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আর কোনো কথা বলবেন না এবং কোনো কিছু আর সরাসরি সম্প্রচার করবেন না।

পরে আদালত সন্তানদের শেখ সাঈদের হেফাজতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। তবে জয়নাব জাভাদলি বলেন, তাঁর মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, এতে দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে করা চুক্তির ওপর প্রভাব পড়বে না।

দুই মাস আগে পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি বজায় ছিল।

তবে হঠাৎ একদিন সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের সময় জয়নাব একটি বার্তা পান। দুবাই পুলিশের মাধ্যমে সাবেক স্বামীর বার্তাটি তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছিল। বার্তায় বলা হয়, সন্তানেরা সেদিন তাঁর (জয়নাব) সঙ্গে যাবে না। তিনি যেন অপেক্ষা না করেন।

এরপর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সন্তানদের সঙ্গে জয়নাবের আর যোগাযোগ হয়নি। অবশেষে তাঁকে শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে তিন ঘণ্টার জন্য সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। ৮ নভেম্বর তিনি তাঁর গাড়িচালককে নিয়ে সেখানে যান। জয়নাব দাবি করেন, সুরক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে তিনি দেখেন তাঁর সন্তানেরা সেখানে নেই।

জয়নাব যখন ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন দেখেন সন্তানেরা তাঁর দিকে ছুটে আসছে।

জয়নাবের দাবি, ২০২২ সালে দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি সন্তানদের নিজের হেফাজতে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, সন্তানেরা ১৮ বছর পর্যন্ত তাঁর হেফাজতে থাকবে এবং তাদের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে। মেয়েদের স্কুলের খরচ বহন করবেন তাদের বাবা।

সন্তানেরা চিৎকার করে বলছিল, ‘মা, আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাও!’

জয়নাব তাঁর গাড়িচালককে বলেছিলেন, দরজা বন্ধ করে বাড়ি নিয়ে যেতে। তবে তাঁর অভিযোগ, সাবেক স্বামীর কর্মীরা তাঁদের পথ আটকে দিয়েছিল। তখনই তিনি লাইভস্ট্রিম খুলে সাহায্যের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানতেন, এতে আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তি ভঙ্গের ঝুঁকি রয়েছে এবং গ্রেপ্তারও হতে পারেন। এরপরও তাঁর মনে হয়েছে, এটাই একমাত্র পথ।

জয়নাব তখন থেকে শিশুসন্তানদের সঙ্গে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি বলেছেন, গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বাইরে যেতে সাহস পাননি। তাঁর তিন মেয়ের বয়স—নয়, সাত ও ছয়।

আরও পড়ুনদুবাইয়ের শাসকের ৬ হাজার কোটি টাকার বিবাহবিচ্ছেদ২১ ডিসেম্বর ২০২১

মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকজন আমিরাতি কর্মকর্তার সঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আদালতের নথিপত্র দেখে শেখ সাঈদের মনোভাব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

সর্বশেষ নথিতে ৮ নভেম্বরের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, জয়নাব তাঁর চালকের সহায়তায় শিশুদের জোর করে তাঁর গাড়িতে উঠিয়েছিলেন এবং তাঁদের অপহরণ করেছিলেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করার মধ্য দিয়ে জয়নাব তাঁর সাবেক স্বামীর মানহানির পাশাপাশি রাষ্ট্রের অবমাননা এবং রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনসাবেক স্ত্রী প্রিন্সেস হায়ার ওপর অতিমাত্রায় নির্যাতন চালিয়েছেন দুবাইয়ের শাসক: আদালতের রায়২৫ মার্চ ২০২২.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সন ত ন র শ খ স ঈদ জয়ন ব ত বল ছ ন য গ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চার জেলে অপহৃত, মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন একজন

সুন্দরবনের লোনাজলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চার জেলে অপহরণের স্বীকার হয়েছেন। তাঁদের ছাড়তে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে বনদস্যুরা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের আঠারবেকি এলাকার একটি খালে কাকড়া ধরার সময় তাঁদের অপহরণ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, দস্যু আলিম বাহিনীর সদস্যরাই জেলেদের অপহরণ করেন। অপহৃত জেলেদের মধ্যে একজন মুক্তিপণ দিয়ে গতকাল রোববার বাড়ি ফিরেছেন।

শ্যামনগর উপজেলার বড়ভেটখালী গ্রামের ইউসুফ গাজী বলেন, তিনি ২০ নভেম্বর কৈখালী স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র (পাস) নিয়ে নিজের নৌকায় মরগাং গ্রামের ইব্রাহিম শেখ ও আনিস শেখকে নিয়ে বনে প্রবেশ করেন। একইভাবে পাস নিয়ে মরগাং গ্রামের হাসান শেখ ও বড়ভেটখালী গ্রামের আবদুল গাজীও বনে ঢোকেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় আঠারবেকি ভাইজো খালে কাঁকড়া ধরার সময় দস্যুরা তাঁদের নৌকা আটকে দেয়। তিনটি নৌকা থেকে তারা চারজনকে তুলে নেয়। পরে জানায়, মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা দিলে ছাড়া পাওয়া যাবে। গতকাল ভোরে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পর দস্যুরা হাসান শেখকে একটি নৌকায় তুলে দেয়। সকাল ৯টার দিকে তিনি বাড়ি পৌঁছান।

শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাসেম মোরেল জানান, সুন্দরবনে দস্যুতা আবারও বেড়ে উঠেছে। ভেটখালী ও মরগাং গ্রামের বেশ কয়েকজন জেলে সম্প্রতি আঠারবেকি এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়েছেন।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হক বলেন, ‘জেলেরা আমাদের কিছুই জানায় না। মহাজন বা পরিবারের লোকজন মুক্তিপণ দিয়ে তাঁদের ছাড়িয়ে আনে, পরে আমরা খবর পাই। দুর্গম বনাঞ্চলে দ্রুত অভিযান চালানোও কঠিন। বনদস্যু দমনে একটি স্মার্ট পেট্রোল টিম ও দুটি বিশেষ দল মাঠে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারী হত্যার শাস্তির আলাদা বিধান রেখে ইতালির পার্লামেন্টে বিল পাস
  • ‘আমার বেটাকে বাঁচান’, চিকিৎসা খরচ মেটাতে হাত পাতছেন তাঁরা
  • দেশে দরিদ্র ৩ কোটি ৬০ লাখ
  • কক্সবাজারে এতিমখানার ছাত্র অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি
  • কক্সবাজারে এতিমখানার ছাত্রকে অপহরণ, লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
  • নাইজেরিয়ায় অপহৃত ৫০ শিক্ষার্থী পালিয়ে ফিরলো পরিবারে
  • সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চার জেলে অপহৃত, মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন একজন
  • অভাবের কথা বলে পরিচিত হন, আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে হাতিয়ে নেন টাকা