Prothomalo:
2025-12-06@02:50:26 GMT

সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর

Published: 11th, January 2025 GMT

ফাইল ছবি

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজে ফিরতে চায় বিএনপি

প্রথম ধাপে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার এক মাস পর গত বৃহস্পতিবার আরও ৩৬টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এমন এক সময় দলটি দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণা করল, যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমন সময়ে প্রার্থী ঘোষণা করে কার্যত বিএনপি নির্বাচনী তৎপরতা সচল রাখার জানান দিয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। গত ২৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে ১৩ দিন ধরে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দলের নেতা-কর্মীদের মানসিকভাবে চাপে ফেলে। এতে প্রাথমিকভাবে মনোনীত দলীয় অনেক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার থমকে গেছে।

যদিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তবে তিনি দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই নির্বাচন চেয়ে আসছি। আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতেই হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যে ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আসনগুলোতেও ঠিক সময়ে আমরা প্রার্থী দিয়ে দেব।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমন সময়ে প্রার্থী ঘোষণা করে কার্যত বিএনপি নির্বাচনী তৎপরতা সচল রাখার জানান দিয়েছে।স্তিমিত জনসংযোগ, দোয়া প্রার্থনা

এই পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমদসহ অনেক প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় কয়েক দিন ধরে জনসংযোগ করছেন। মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮ আসনের সিদ্ধেশ্বরী, ইস্কাটন ও শাহজাহানপুর এলাকায়, গয়েশ্বর রায় ঢাকা-৩ আসনের চুনকুটিয়া, তেঘরিয়া ও জিঞ্জিরায়, ইশরাক হোসেন ঢাকা-৬ আসনের ধূপখোলা, গোপীবাগ ও সূত্রাপুরের কলতাবাজারে জনসংযোগ করেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ গত মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে জনসংযোগে রয়েছেন। তিনি গতকাল পেকুয়া উপজেলার মাতামুহুরী এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেন। আগামীকাল রোববার তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে যাঁরা নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন, তাঁরা ‘ধানের শীষ প্রতীকে’ ভোট চাওয়ার পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চাইছেন। সবাই নিজ নিজ এলাকায় খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেছেন।

আমরা শুরু থেকেই নির্বাচন চেয়ে আসছি। আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতেই হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যে ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবরে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনী প্রচারে কিছুটা স্থবিরতা আসে। নেত্রীর মারাত্মক অসুস্থতার খবরে উৎকণ্ঠায় পড়ে নেতাদের অনেককে এলাকা থেকে ঢাকায় এসে হাসপাতালে জড়ো হতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে আট দল সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশ করছে। ইতিমধ্যে তারা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহসহ ছয়টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে। আজ শনিবার সিলেটে তাদের সমাবেশ রয়েছে।

বিএনপি প্রথম দফায় ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। তবে এক দিনের মাথায় মাদারীপুর–১ আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করে। দ্বিতীয় ধাপে এই আসনসহ ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। অর্থাৎ দুই ধাপে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। একদিকে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের জোর তৎপরতা, অন্যদিকে দলের প্রধান নেতার মুমূর্ষু অবস্থা—ঠিক এমন সময়ে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়তার বার্তা দিল। তবে দ্বিতীয় ধাপেও কোনো কোনো আসনের প্রার্থীকে নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে।

বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে আট দল সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশ করছে। ইতিমধ্যে তারা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহসহ ছয়টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে। আজ শনিবার সিলেটে তাদের সমাবেশ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, তৃতীয় ধাপে বাকি ২৮টি আসনে শিগগির প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। সেখানে বিগত স্বৈরাচারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট ও সমমনা দলের নেতাদের আসন থাকবে। যদিও জোটের প্রার্থিতা ঘোষণায় বিলম্ব ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করছে। আবার দল মনোনীত অনেক প্রার্থী নিয়েও নির্বাচনী এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ২৩৭ আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর অন্তত ৪৫টি আসনে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সেখানে সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, কাফনের কাপড় পরে মিছিল পর্যন্ত হয়েছে।

দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ভরসার স্থল হচ্ছেন খালেদা জিয়া। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের কাছে ঐক্যের প্রতীক, অনুপ্রেরণা এবং জনমানসের আবেগের কেন্দ্র। তাঁর গুরুতর অসুস্থতা বিএনপির জন্য একটি বড় চাপ। বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাক্কালে ১৩ দিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে, সেটি নেতা-কর্মীদের মানসিকভাবে থমকে দিয়েছে।

এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণায় বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের কিছুটা দ্বিধায় ফেলেছিল। তবু এ সময়ে প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে বিএনপি বার্তা দিয়েছে যে এই সংকটেও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নির্বাচনী কৌশল থেমে নেই, বিএনপি পূর্ণ মাত্রায় নির্বাচনী ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থাৎ দল ও জোট প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিএনপি শিগগিরই পূর্ণ পরিসরে নির্বাচনী প্রচারে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল কুড়িগ্রামে সাংবাদিকদের বলেছেন, বড় ধরনের সংকট না হলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ভরসার স্থল হচ্ছেন খালেদা জিয়া। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের কাছে ঐক্যের প্রতীক, অনুপ্রেরণা এবং জনমানসের আবেগের কেন্দ্র। তাঁর গুরুতর অসুস্থতা বিএনপির জন্য একটি বড় চাপ।আবার জনসংযোগে ফেরার বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে।

এর মধ্যে রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিলম্ব—সব মিলিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে অনেকে সংশয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আছি। আমরা আরও ৩৬টি আসনের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছি। অনিবার্য কোনো কারণ ছাড়া আমরা এই নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বাইরে যেতে চাই না। নির্বাচন বিলম্বিত হোক, সেটিও চাই না। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক।’

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় গত ১৩ দিন মাঠপর্যায়ের প্রচারণা স্তিমিত থাকলেও দ্বিতীয় দফায় ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা নেতা-কর্মীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা—সেটি হচ্ছে আবার মাঠে ফিরতে হবে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা জনমানসে বিশেষ আবেগ ও সহানুভূতি তৈরি করেছে। দল সেই আবেগকে সংগঠিত শক্তিতে রূপ দিতে চায়।

আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আছি। আমরা আরও ৩৬টি আসনের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছি। অনিবার্য কোনো কারণ ছাড়া আমরা এই নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বাইরে যেতে চাই না। নির্বাচন বিলম্বিত হোক, সেটিও চাই না। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান

সম্পর্কিত নিবন্ধ