ঘরের আড়ায় ঝুলছিল নিথর দেহ। হাতে সদ্য লাগানো মেহেদির আলপনা। মেহেদি রাঙা হাতটি দেখিয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে অন্তরার (১৫) লাশের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন মা নাসিমা খাতুন। তিনি বিলাপ করে বলেন, ‘আমার অন্তরা দুই হাতে মেন্দি লাগাইছিন। ছুডুবেলা থাইকা সাজুগুজু করতে পছন্দ করত। আমার কত কষ্টের অন্তরা গো, অন্তরারে কিবায় বিদায় নিলো গো। মা তোমার দমডা কেমনে জানি গেছে গো, কত কষ্ট অইছে তোমার দমডা যাইতে গো।’

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মেয়ের নিথর দেহের পাশে এভাবেই বিলাপ করছিলেন অন্তরার মা। এর আগে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে অন্তরার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। মা নাসিমা খাতুনের দাবি, তাঁর মেয়েকে কেউ হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, অন্তরা আক্তার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের আমোদপুর প্রথম গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার মেয়ে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অন্তরা সবার ছোট ছিল। অন্তরা তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। মা–বাবা ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে অন্তরা রাজধানীর তেজগাঁও মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ত। ৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে নিজেদের বাড়িতে আসে অন্তরা। গ্রামের বাড়িতে অন্তরার সৎভাইয়েরা বসবাস করতেন। অন্তরা বাড়িতে এসে ঘরে একাই থাকছিল, নিজে রান্না করে খেত। তিন দিন আগে চাচাতো বোন লিজাকে নিয়ে অন্তরা নিজের হাতে মেহেদি দিয়েছিল।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা থেকে অন্তরার মা–বাবা প্রতিদিন মুঠোফোনে তাঁর খোঁজ নিতেন। কিন্তু রোববার সারা দিন অন্তরার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ দেখায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজনের নম্বরে কল দিয়ে অন্তরার খোঁজ নিতে বলেন তার মা–বাবা। সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজন অন্তরাদের ঘরের দরজা লাগানো দেখে ভাবে অন্তরা ঢাকা চলে গেছে। অন্তরার বাবা আবার কল করলে বাড়ির লোকজন রোববার রাত ৯টার দিকে অন্তরাদের টিনশেড ঘরের ছিদ্র দিয়ে দেখতে পান, ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে অন্তরা। এ সময় তারা চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

অন্তরার বাবা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, অন্তরা এক বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছিল অন্তরা। তার বিছানার বালিশের নিচ থেকে একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অন্তরা ঠিক কী কারণে এমনটি করেছে, তা বলতে পারছে না কেউ। নিহতের বড় বোন ঝিনুক আক্তার বলেন, কারও সঙ্গে অন্তরার প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি না, তা তাদের জানা নেই। কেন সে আত্মহত্যা করল, তা বুঝতে পারছি না।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ওবায়দুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় এক কিশোরীকে (১৪) দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন উপজেলার ধিতুয়া গ্রামের পংকজ দে (১৯), চাপুরিয়া গ্রামের রোমান মিয়া (২৩) ও এমরান হোসেন (৩২)। অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে চাপুরিয়া গ্রামের আমির হোসেন (২৮) পালিয়ে গেছেন।

পুলিশ জানায়, মুক্তাগাছার মানকোন ইউনিয়নের ওই কিশোরী ঢাকায় একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে। গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বাসে বাড়ি ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সে মুক্তাগাছায় নামে। পরে অটোরিকশায় করে পদুরবাড়ী বাজারে নেমে হেঁটে নিজের বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। তখন অভিযুক্ত পংকজ দের সঙ্গে তার দেখা যায়। পংকজ তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একটি অটোরিকশায় তুলে ভিন্ন পথে চাপুরিয়া গ্রামের একটি বাঁশবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে পংকজ ও তাঁর তিন সহযোগী রোমান মিয়া, আমির হোসেন ও এমরান মিলে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী প্রথম আলোকে বলে, পঙ্কজ তার পূর্বপরিচিত হওয়ায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বললে সে রাজি হয়। কিন্তু তাকে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে ধর্ষণ করে ভোরে একটি মাছের খামারের সামনে ফেলে যায়। পরে সকালে লোকজন তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

এদিকে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী গতকাল রাত ১০টার দিকে তিনজনকে ধরে বেঁধে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। রাতে কিশোরীর মা বাদী হয়ে অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আজ ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়।

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিপন চন্দ্র গোপ প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এলাকাবাসীর সহায়তায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যজনকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে মামলা করায় নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর, চুল কেটে নির্যাতন
  • চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার
  • ময়মনসিংহে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ
  • বাবার কাছে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের নালিশ করায় প্রতিবেশীকে হত্যা
  • ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫
  • ময়মনসিংহে বাবা–মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার, মায়ের অবস্থাও গুরুতর
  • ময়মনসিংহে শ্বশুর বাড়িতে জামাতা-নাতী খুন
  • ময়মনসিংহে বাসে আগুন : অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের, আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার