মেহেদি রাঙা দুই হাত, আড়ায় ঝুলছিল শিক্ষার্থীর নিথর দেহ
Published: 13th, January 2025 GMT
ঘরের আড়ায় ঝুলছিল নিথর দেহ। হাতে সদ্য লাগানো মেহেদির আলপনা। মেহেদি রাঙা হাতটি দেখিয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে অন্তরার (১৫) লাশের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন মা নাসিমা খাতুন। তিনি বিলাপ করে বলেন, ‘আমার অন্তরা দুই হাতে মেন্দি লাগাইছিন। ছুডুবেলা থাইকা সাজুগুজু করতে পছন্দ করত। আমার কত কষ্টের অন্তরা গো, অন্তরারে কিবায় বিদায় নিলো গো। মা তোমার দমডা কেমনে জানি গেছে গো, কত কষ্ট অইছে তোমার দমডা যাইতে গো।’
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মেয়ের নিথর দেহের পাশে এভাবেই বিলাপ করছিলেন অন্তরার মা। এর আগে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে অন্তরার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। মা নাসিমা খাতুনের দাবি, তাঁর মেয়েকে কেউ হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে।
পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, অন্তরা আক্তার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের আমোদপুর প্রথম গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার মেয়ে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অন্তরা সবার ছোট ছিল। অন্তরা তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। মা–বাবা ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে অন্তরা রাজধানীর তেজগাঁও মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ত। ৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে নিজেদের বাড়িতে আসে অন্তরা। গ্রামের বাড়িতে অন্তরার সৎভাইয়েরা বসবাস করতেন। অন্তরা বাড়িতে এসে ঘরে একাই থাকছিল, নিজে রান্না করে খেত। তিন দিন আগে চাচাতো বোন লিজাকে নিয়ে অন্তরা নিজের হাতে মেহেদি দিয়েছিল।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা থেকে অন্তরার মা–বাবা প্রতিদিন মুঠোফোনে তাঁর খোঁজ নিতেন। কিন্তু রোববার সারা দিন অন্তরার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ দেখায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজনের নম্বরে কল দিয়ে অন্তরার খোঁজ নিতে বলেন তার মা–বাবা। সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজন অন্তরাদের ঘরের দরজা লাগানো দেখে ভাবে অন্তরা ঢাকা চলে গেছে। অন্তরার বাবা আবার কল করলে বাড়ির লোকজন রোববার রাত ৯টার দিকে অন্তরাদের টিনশেড ঘরের ছিদ্র দিয়ে দেখতে পান, ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে অন্তরা। এ সময় তারা চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
অন্তরার বাবা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, অন্তরা এক বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছিল অন্তরা। তার বিছানার বালিশের নিচ থেকে একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অন্তরা ঠিক কী কারণে এমনটি করেছে, তা বলতে পারছে না কেউ। নিহতের বড় বোন ঝিনুক আক্তার বলেন, কারও সঙ্গে অন্তরার প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি না, তা তাদের জানা নেই। কেন সে আত্মহত্যা করল, তা বুঝতে পারছি না।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সচিবের মতবিনিময়
অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ ২০২৫-২০২৬ সফল করতে ময়মনসিংহে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফিরোজ সরকার।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুল আলম বলেন, “এ বিভাগে আমন সংগ্রহ ২০২৫-২০২৬ এর আওতায় ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন। চালের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ হাজার ৫৯ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।”
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহামন জানান, খাদ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ শতভাগ সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জনান, কৃষকের কাছ থেকে দ্রুততার সহিত ধান ক্রয় করতে হবে, ব্যতয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য বিভাগের সচিব মো. ফিরোজ সরকার খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিবীড়ভাবে যোগাযোগ রেখে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি।
মতবিনিময় সভার আগে, খাদ্য সচিব ময়মনসিংহ সিএসডির চাল ও ধান সংগ্রহ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং ময়মনসিংহ রাইস সাইলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তাহমিনা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ময়মনসিংহ কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ঢাকা/মিলন/মাসুদ