মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বাতাস আবারও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরফলে দাবানল আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুধবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পূর্বাভাসকরা আবারও ‘চরম অগ্নি বিপদের’ একটি এলাকা চিহ্নিত করেছেন, যা শহরের কেন্দ্রস্থলের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি অঞ্চলে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিছু পার্বত্য অঞ্চলে বাতাসের ঘণ্টায় ১১৩ কিলোমিটার হতে পারে। এর ফলে চারটি দাবানল ছড়িয়ে পড়ার হুমকি দিচ্ছে।

স্থানীয় সময় বুধবার সকালে লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেনচুরা কাউন্টির কিছু অংশে বাতাসের গতি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা অনুসারে, বুধবার দিনের বেলায় এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির অগ্নিনির্বাপক প্রধান অ্যান্থনি ম্যারোন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “প্রত্যাশিত বাতাসের সাথে কম আর্দ্রতা এবং কম জ্বালানি আর্দ্রতা লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলে আগুনের হুমকিকে আরো বাড়াবে।”

লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তর-পশ্চিমের সিমি ভ্যালি এবং থাউজেন্ড ওকসকে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়েছে।

বিবিসির আবহাওয়ার পূর্বাভাসক সারাহ কিথ-লুকাস জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের শেষের দিকে এবং শুক্রবারে পরিস্থিতির উন্নতির পূর্বাভাস রয়েছে।

বুধবার লস অ্যাঞ্জেলেসের কাউন্টি মেডিকেল পরীক্ষকের অফিস আগুনে ২৫ তম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আরো ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

দাবানলে যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই ইটনের বাসিন্দা। এই শহরের উত্তরে ১৪ হাজার একরেরও বেশি জমি পুড়ে গেছে। আরো পশ্চিমে বৃহত্তর প্যালিসেডসে আগুন ২৩ হাজার একরেরও বেশি জমি পুড়ে গেছে।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লস অ য ঞ জ ল স

এছাড়াও পড়ুন:

বাগমারার শহিদুল ইসলামকে অভিবাদন

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ-বান্দাইখাঁড়া সড়কের পাশে প্রায় ১ হাজার ৪০০ তালগাছ লাগিয়ে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন শহিদুল ইসলাম নামের একটি স্কুলের ল্যাব কর্মচারী। সামান্য বেতনের মানুষটি ১৫ বছর ধরে সন্তানের মতো পরিচর্যা করে যে সবুজের দেয়াল তৈরি করেছেন, তা আমাদের সমাজের দায়িত্ববোধ এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার এক বিরল উদাহরণ।

শহিদুল ইসলাম কোনো সরকারি প্রকল্প বা বড় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে এই কাজ করেননি; বরং তিনি নিজের পকেটের টাকায় তালের বীজ সংগ্রহ করেছেন, যা স্থানীয়দের কাছে একসময় ‘পাগলামি’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তাঁর ভাষায় ‘কিছু পাওয়ার জন্য’ এ কাজ করেননি তিনি; বরং সড়কের ক্ষতি ঠেকানো, বজ্রপাত থেকে রক্ষা, সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং দুর্ঘটনা রোধ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।

বজ্রপাতের ঝুঁকি মোকাবিলায় তালগাছের সারি যে কার্যকর ভূমিকা রাখে, তা আজ প্রমাণিত। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও মাটির ক্ষয়রোধেও এর জুড়ি মেলা ভার। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সরকারি উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে খুব কমই দেখা যায়। শহিদুলের স্ত্রী যখন বলেন, ‘ওই সড়ক দিইয়্যা কোনটেও যাবার লাগলে তালগাছ দেইখ্যা বুক ভরে যায়,’ তখন বোঝা যায়, এই গাছগুলো কেবল পরিবেশ নয়, এটি একটি পরিবারের গর্ব ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

শহিদুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বড় বাজেট নয়, দরকার আন্তরিকতা এবং অধ্যবসায়। তাঁর মতো আরও অনেকে নীরবে এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উচিত তাঁদের যথাযোগ্য স্বীকৃতি দেওয়া। শহিদুলের লাগানো এই ১ হাজার ৪০০ তালগাছের সারির যেন কেউ ক্ষতি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষার এমন মহৎ উদ্যোগগুলো যেন কেবল একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সামর্থ্যের ওপর নির্ভর না করে, তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

শহিদুল ইসলামের তালগাছের সারি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃত দেশপ্রেম কেবল বড় বড় কথার মধ্যে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবনকে জড়িয়ে দেওয়ার সাধারণ অঙ্গীকারের মধ্যে নিহিত। তাঁর এই উদ্যোগ কেবল বাগমারাকে সবুজ করেনি, বরং দেশজুড়ে হাজারো মানুষের জন্য এক নতুন পথের দিশা দিয়েছে। শহিদুল ইসলামরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। পরিবেশসচেতন এমন মহৎপ্রাণ ব্যক্তিকে আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ