সংবিধানের ন্যায়পাল নিয়োগ কার্যকরের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চার সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনে দুদক মোট ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার অংশে দ্বিতীয় সুপারিশে সংবিধানের ন্যায়পাল নিয়োগ কার্যকরের সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করতে হবে। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদের অধীনে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি করে ন্যায়পালকে এই কৌশলপত্রের যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতায়িত করতে হবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টেলিকম নীতিমালা একতরফা প্রণয়ন সমীচীন হবে না: মির্জা ফখরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫’ তড়িঘড়ি করে ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় রেখে এ সময়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা একতরফা প্রণয়ন সমীচীন হবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে, যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নকে বাধা দিতে পারে। এতে ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খসড়া নীতিমালার সম্ভাব্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, একাধিক সেবা খাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল ফোন অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে; ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, বিদেশি মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত এবং এ খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। ক্রস-ওনারশিপের ফাঁকফোকরে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে।
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এসএমই, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সব পক্ষকে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার পর যেন এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এ ধরনের জাতীয় পর্যায়ের টেলিকম নীতি প্রণয়নে অবশ্যই সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
বড় মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাত
মির্জা ফখরুল বলেন, আইএসপি লাইসেন্সে একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। এনএসপি লাইসেন্সের স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ফিক্সড টেলিকম লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারাদেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চমান বজায় রাখাতে হবে, যা এসএমইদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বড় মোবাইল ফোন কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এতে একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়; নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে। এতে প্রতিযোগিতা নয় বরং আধিপত্য বাড়বে।
নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই
মির্জা ফখরুল বলেন, স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এটি বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
বিবাদ ও অসাম্যের শঙ্কা
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসের সীমা অস্পষ্ট। মোবাইল ফোন অপারেটরদের ফাইবারভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ, তা নীতিমালায় স্পষ্ট নয়। ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে।
জনগণের নীতিমালা হওয়া উচিত
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, সবার জন্য উপকার বয়ে আনে এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে যাব।
নীতিমালায় গ্রামীণ মানুষের সুফল থাকতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা মডার্ন টেকনোলজির বিস্তার চাই। টেকনোলজি সামনের দিকে যাবে, কিন্তু তার সুফল যেন জনগণ পায়। এখানে বড় মোবাইল ফোন অপারেটররা বিরাট সুবিধা পাবে। আর যারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় রকমের বিনিয়োগ করতে পারবে তারা একটা সুবিধা পাবে। সুবিধার লক্ষ্য গণতান্ত্রিক সমাজের সাধারণ মানুষ যাতে সুফলটা পায়। সেটা কিন্তু আমরা যতটুকু জানি, প্রস্তাবিত নীতিমালায় অনুপস্থিত। এই নীতিমালা প্রণয়নে সরকার কারও মতামত নেয়নি বলে মন্তব্য করেন মঈন খান।