দক্ষিণ আফ্রিকার খনি থেকে ৭৮ শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার
Published: 15th, January 2025 GMT
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি খনি থেকে কমপক্ষে ৭৮ জন অবৈধ খনি শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই খনিটিতে পুলিশ কয়েক মাস ধরে খাদ্য ও জল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ট্রেড ইউনিয়নগুলো এ ঘটনাকে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টারত মরিয়া মানুষদের উপর ‘ভয়াবহ’ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন হিসাবে আখ্যা দিয়েছে।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া আদালতের নির্দেশে জোহানেসবার্গের দক্ষিণ-পশ্চিমে স্টিলফন্টেইনের সোনার খনিতে উদ্ধার অভিযানে এখন পর্যন্ত মোট ৭৮টি মৃতদেহ এবং ১৬৬ জন জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আরো শত শত মানুষ এখনো ভূপৃষ্ঠের ২ কিলোমিটার নিচে আটকে আছে।
আগস্ট মাস থেকে পুলিশ খনিতে খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ডিসেম্বরে একটি আদালত রায় দেয় যে স্বেচ্ছাসেবকরা খনি শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য পাঠাতে পারবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশের জাতীয় মুখপাত্র অ্যাথলেন্ডা ম্যাথে বলেছেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল অপরাধ দমন করা এবং আমরা ঠিক এটাই করে আসছি। এই অবৈধ খনি শ্রমিকদের খাবার, পানি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করলে পুলিশ তাদের বিনোদন দেবে এবং অপরাধকে বিকশিত হতে দেবে।”
তবে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুলিশ এবং সরকারের সমালোচনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকান ফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়নস এক বিবৃতিতে বলেছে, “সাম্প্রতিক ইতিহাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইচ্ছাকৃত অবহেলার সবচেয়ে ভয়াবহ প্রদর্শনের মধ্যে একটি এটি। এই খনি শ্রমিকদের, যাদের অনেকেই মোজাম্বিক এবং অন্যান্য দক্ষিণ আফ্রিকান দেশ থেকে আসা অনিবন্ধিত এবং হতাশ শ্রমিক ছিলেন, তাদের মৃত্যুর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিতে রাজি ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সৌদি আরবের কাছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দেবেন। ট্রাম্পের এই ঘোষণা আরব দেশগুলোতে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের নীতিতে বড় ধরনের একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত। খবর আলজাজিরার।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের ঠিক একদিন আগে সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন।
আরো পড়ুন:
সৌদিতে বাস-ট্যাঙ্কারের সংঘর্ষে ৪২ ভারতীয় ওমরাহযাত্রী নিহত
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের হজের অনুমতি দেবে না সৌদি আরব
রিয়াদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের প্রশংসা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করব। হ্যাঁ, আমি এটি করার পরিকল্পনা করছি। তারা এগুলো কিনতে চায়। তারা আমাদের খুব ভালো মিত্র।” তার এই মন্তব্যকে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অস্ত্রনীতির বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তটিকে রিয়াদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য জয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প আব্রাহাম চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনে সৌদি আরবকে রাজি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও সৌদি নেতৃত্ব বারবার জানিয়েছে, তারা এখনো আরব শান্তি উদ্যোগের অবস্থানেই অটল। অর্থাৎ টেকসই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি নয়।
এদিকে, সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া হলে ইসরায়েলের ‘গুণগত সামরিক সুবিধা’ যা মার্কিন আইনে সুরক্ষিত- তা ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন কিছু ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
সম্ভাব্য আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের উচ্চতর সামরিক ক্ষমতা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশক ধরে প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
১৯৬৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের অধীনে প্রথম প্রতিষ্ঠিত এবং প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত এই নীতিটি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অস্ত্র বিক্রিকে পরিচালিত করে আসছে।
এরপর থেকে প্রতিটি মার্কিন প্রশাসন যেকোনো ধরনের আঞ্চলিক যেকোনো যুদ্ধে ইসরায়েলের বিজয়ী হওয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
লকহিড মার্টিন দ্বারা নির্মিত এফ৩৫ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান হিসেবে পরিচিত, যার প্রযুক্তি এটিকে শত্রু পক্ষের প্রতিরক্ষার জন্য সনাক্ত করা কঠিন করে তোলে।
ইসরায়েলের সমালোচকরা সতর্ক বলেছেন, এই বিক্রয় এই অঞ্চলে ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী সামরিক শ্রেষ্ঠত্বকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। মধ্যেপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরায়েলের কাছেই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে।
বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান ইয়ার গোলান বলেছেন, এই পদক্ষেপ ‘মধ্যপ্রাচ্যে একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করার ঝুঁকি তৈরি করবে, যা কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের অধিকারী সুবিধাগুলোকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে কূটনৈতিক ‘ব্যর্থতার ঝুঁকিপূর্ণ’ বলেও সমালোচনা করেন।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সোমবার ইহুদি সংবাদ সিন্ডিকেটকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ইসরায়েলকে অবশ্যই এই অঞ্চলে তার আকাশসীমার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হবে।”
হোয়াইট হাউজে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদের সফরের ঠিক আগে ট্রাম্পের এই ঘোষণা, মার্কিন প্রশাসনের বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের অংশ হিসেবে রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরেছে।
ওয়াশিংটন ঐতিহাসিকভাবে আরব দেশগুলোতে বিক্রি হওয়া মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থা হ্রাস করে অথবা ইসরায়েলকে উন্নত সংস্করণ ও অতিরিক্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করে ইসরায়েলের সামরিক শক্তি সম্পর্কে উদ্বেগ দূর করে আসছে।
যদি এফ-২৫ বিক্রয় বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সৌদি আরব অত্যাধুনিক এই যুদ্ধ বিমানের তালিকায় প্রথম আরব দেশ হবে।
২০২০ সালে আবুধাবি ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হওয়ার পর, ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে এফ-২৫ বিমান বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন আইন প্রণেতাদের উদ্বেগের কারণে চুক্তিটি ভেস্তে যায়।
প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত অস্ত্র বিক্রি বাতিল করার ক্ষমতা রাখে মার্কিন কংগ্রেস।