ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের প্রভাবশালী কারা কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম এখনও নিরুদ্দেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই কর্মস্থলে নেই তিনি। স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি দিয়েও মাহাবুবের সাড়া পায়নি কারা অধিদপ্তর। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর চাকরিজীবনের বেশি সময় কেটেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর মধ্যে নিয়ম ভেঙে সর্বশেষ টানা সাত বছর জেলার হিসেবে এই কারাগারের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে বন্দিদের সুবিধা দিয়ে উৎকোচ আদায়সহ নানা অভিযোগ ছিল। 
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাহাবুবকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ১২ মে কুমিল্লা কারাগারে বদলি করা হয়। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটাতেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পাঁচ দিনের ছুটি নেন। এর পর আর কর্মস্থলে যাননি। পরে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ই-মেইলে তিন মাসের ছুটির আবেদন পাঠিয়ে দেন। ৮ নভেম্বর সেই ছুটিও শেষ হয়েছে। কর্মস্থলে উপস্থিত কিংবা কারা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেননি মাহাবুব।    

কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মনির আহমেদ বলেন, মাহাবুব আগস্ট থেকেই কুমিল্লা কারাগারে উপস্থিত নেই। কৈফিয়ত চেয়ে তাঁর স্থায়ী ঠিকানায় চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এখনও কোনো জবাব দেননি কিংবা যোগাযোগ করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  

জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের পর চার কারাগারের তত্ত্বাবধায়ককে (জেল সুপার) বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের অবসর-সংক্রান্ত আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী, জনস্বার্থে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা বলা হয় আদেশে। অভ্যুত্থানের পর এই চারজন ছাড়া কারা অধিদপ্তরের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

মাহাবুব নিজে থেকেই কর্মস্থল থেকে সরে গেছেন। তিনি ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট ডেপুটি জেলার হিসেবে যোগ দেন। তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল পিরোজপুর কারাগার। ২০০৫ সালের নভেম্বরে বদলি হয়ে আসেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ১/১১-এর সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তারের পর সংসদ ভবন এলাকায় যে ভবনে বন্দি ছিলেন, সেখানকার ডেপুটি জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মাহাবুব। সেই সুবাদে শেখ হাসিনার ‘ঘনিষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সহকর্মী ও কারা কর্মকর্তাদের কাছে শেখ হাসিনার খুব কাছের মানুষ বলে প্রচার করেন। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পদোন্নতি ছাড়াই তাঁকে জেলারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেলার হিসেবে (চলতি দায়িত্ব) মুন্সীগঞ্জ কারাগারে যোগ দেন তিনি।  একই বছরের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের দায়িত্ব পান। প্রায় ১১ মাসের মাথায় ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন। ২০১২ সালের জুলাইয়ে জেলার পদে স্থায়ী হন তিনি। তিন বছর তিন মাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের আগস্টে বদলি হন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। দুই বছর পাঁচ মাস পর ফের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হয়ে আসেন মাহাবুব। 

এ ব্যাপারে মন্তব্য নেওয়ার জন্য জেলার মাহাবুবের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। রং নম্বর বলে সংযোগ কেটে দেন তিনি। এর পর তাঁর আরও তিনটি নম্বরে কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ল গ সরক র ন র পর আগস ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে

আওয়ামী লীগকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।    

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে। 

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। 

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। 

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।  

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।  

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • ৩ কর্মকর্তার অবসর ও বরখাস্তের আদেশ আদালতে বহাল
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করলো বিএসইসি
  • বাবার মরদেহ দুই বছর লুকিয়ে রাখেন সন্তান
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে