মাইলেজ না দিলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির হুমকি রেল কর্মচারীদের
Published: 20th, January 2025 GMT
বিধি মোতাবেক অর্জিত মাইলেজ প্রদানের দাবিতে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে আন্তঃনগর দুইটি ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারীরা। আগামী ২৭ জানুয়ারি রাত ১২টার মধ্যে দাবি না মানলে পরদিন (২৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ও চিলাহাটিগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে ট্রেন দুইটির সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারীরা। অল্প সময় পরই রেললাইন থেকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা। এরপর ট্রেন দুইটি গন্তব্যে ছেড়ে যায়। পরে স্টেশনের দুই নম্বর প্লার্টফর্মে পথসমাবেশ করেন কর্মচারীরা।
সমাবেশে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও রানিং স্টাফ শ্রমিক কর্মচারী ঈশ্বরদী শাখার দপ্তর সম্পাদক শাহিদ হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য দেন- রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আফজাল হোসেন, রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম, রেল শ্রমিকদল ঈশ্বরদী শাখার সভাপতি মাসুদ রানা নয়ন, শ্রমিক দল ঈশ্বরদী শাখার সম্পাদক ছবি মন্ডল, রানিং স্টাফ কর্মচারী ইউনিয়ন ঈশ্বরদী শাখার সম্পাদক রবিউল ইসলাম, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন টিটিই'জ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আকরামুল হক।
আরো পড়ুন:
আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সমাবেশ
পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের মাটিকাটা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ
রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, “ব্রিটিশ আমলে এদেশে রেল চালু হয়। ১৬০ বছরের অধিক সময় ধরে রেলওয়েতে প্রচলিত কোড ও বিধি বিধানের আলোকে আমরা রানিং স্টাফরা ‘পার্ট অফ পে’ রানিং এলাউন্স এবং ৭৫ শতাংশ রানিং এলাউন্স যোগ করে পেনশন পেয়ে আসছি। ভবিষ্যৎ জটিলতা এড়াতে রানিং এলাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানে অর্থ মন্ত্রণালয় এর ০৩/১১/২০২১ তারিখের পত্রের অসম্মতি প্রত্যাহার করে লিখিত আদেশ জারি করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “২০২২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত রানিং স্টাফরা রানিং এলাউন্স না পাওয়ায় দৈনিক ৩০০ টাকা হারে যে বেতন পান তা দিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ দূরের কথা নিজের খাওয়া চলে না। আমরা কি খাবো আর পরিবারকে কি খাওয়াবো? ২০২২ সাল পরবর্তী সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের পূর্ববর্তী রানিং স্টাফদের ন্যায় মাইলেজ ভাতা এবং পেনশন সুবিধা প্রদান করতে হবে। এগুলো প্রদান করা প্রশাসনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এখন সেটা প্রদান না করে দীর্ঘদিন নানা তালবাহানা করছে।”
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, “৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ জন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ। মাইলেজের হিসাব হল- প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক বেসিকের সমপরিমাণ টাকা বেশি পাবেন। ৮ ঘণ্টায় একদিনের কর্মদিন ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা দুই-তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হয়। এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয় তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করে। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ঐক্য আন্দোলন করে আসছে।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী ২৭ জানুয়ারির পূর্বে রেলওয়ে রানিং কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক মাইলেজ যোগ করে প্রদানের ক্ষেত্রে ৩/১১/২০২১ তারিখের পত্রের অসম্মতি প্রত্যাহার এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের নিয়োগপত্রের বৈষম্যমূলক ১২ এবং ১৩ নম্বর শর্তটি বাতিল করে রেলওয়ে প্রচলিত কোড ও বিধি বিধাণের আলোকে আদেশ জারি করতে হবে। তা না করা হলে আগামি ২৮ জানুয়ারি থেকে সারা দেশের সব রানিং স্টাফরা একযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করতে বাধ্য হবে।”
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, “আমি রেলওয়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেছি।”
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন দ র য় কম ট র র লওয় র প নশন
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ