খুলনার কয়রায় দরিদ্র নারীদের জন্য ‘সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্পে’র (ইরেসকো) প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পটির মাঠ সংগঠক জাহানারা খাতুন সমিতির সদস্যদের নামে ঋণ বিতরণ দেখিয়ে প্রকল্পের ব্যাংক হিসাব থেকে ওই টাকা তুলে নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রকল্প পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে তদন্ত চলছে। 

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) কয়রা উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচটি সমিতির ১২৫ সদস্যের নামে ৪৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই টাকা সদস্যদের মাঝে বিতরণ না করে মাঠ সংগঠক জাহানারা খাতুন নিজেই তুলে নেন। নিয়ম অনুযায়ী, মাঠ সংগঠককে সমিতির সদস্যদের ঋণের তালিকা প্রস্তুত করে পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হয়। পরে তিনি অনুমোদন দেন। ঋণগ্রহীতার নামের তালিকা মাঠ সংগঠকের মাধ্যমেই ব্যাংকে যায়। 

অভিযোগ উঠেছে, মাঠ সংগঠক জাহানারা খাতুন ঋণগ্রহীতার ভুয়া তালিকা তৈরির পর প্রকল্পের ব্যাংক হিসাব থেকে নিজেই টাকা তুলে নেন। তিনি প্রকল্পের নিয়ম উপেক্ষা করে এক অর্থবছরে একজন ঋণগ্রহীতার ভিন্ন ভিন্ন নাম (ফাতিমা খাতুন, ফাতিমা উল্লাহ, ফাতিমা আক্তার) দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া টাকা তোলার জন্য ঋণগ্রহীতার স্বামীর নামও পরিবর্তন করেছেন। ঋণের কিস্তির টাকা অনাদায়ী হওয়ায় ব্যাংক হিসাব তলবের পর এসব অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরা পড়ে। 
কয়রার সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা (এআরডিও) মো.

আল মামুনের ভাষ্য, মাঠ সংগঠক জাহানারা একই ব্যাংক হিসাবে একাধিক ঋণগ্রহীতার নাম ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া কয়েকটি সমিতিতে যেসব সদস্যের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এলাকায় বসবাস করেন না এমন অনেক নারীর নামে ঋণ দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আটরা পল্লী উন্নয়ন মহিলা সমিতির সদস্য ফাতিমা খাতুন ও ময়না খাতুনের নামে একই অর্থবছরে সাতবার ঋণ দেখিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। তদন্তে গিয়ে এসব নামে কোনো ঋণগ্রহীতার অস্তিত্ব মেলেনি। জাহানারার বিরুদ্ধে আগের কর্মস্থলে থাকাকালীনও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল।

এআরডিওর বক্তব্যের সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহানারা ২০১৩ সালে পাইকগাছা পল্লী উন্নয়ন অফিসের দায়িত্বরত ‘পল্লী প্রগতি’ প্রকল্প ছেড়ে কয়রা পল্লী উন্নয়ন অফিসে ইরেসকো প্রকল্পে যোগদান করেন। পাইকগাছায় কর্মরত থাকা অবস্থায় কয়েকটি সমিতির সদস্যদের নামে ঋণ দেখিয়ে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। পাইকগাছা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, ‘এটি অনেক আগের ঘটনা।  আমি এখানে যোগদানের পর ওই মাঠ সংগঠকের অনিয়মের কথা জেনেছি। তাঁর কর্মকালীন প্রায় ৩৪ লাখ টাকা ঋণ অনাদায়ী। ওই সব ঋণগ্রহীতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’

এসব বিষয়ে জানতে জাহানারা খাতুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। পরে গতকাল বুধবার অফিসে গেলে তিনি এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। 

বিআরডিবির উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দীন বলেন, মাঠ সংগঠক জাহানারা খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা থেকে একটি দল গত সপ্তাহে এসে তদন্ত করে গেছে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ঠ স গঠক জ হ ন র প রকল প ন কর ম ঋণ দ খ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন