হবিগঞ্জ শহরে দখলদারদের দৌরাত্ম্য চলছেই। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মাটি ভরাট করে শতবর্ষী একটি পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শতবর্ষী এ পুকুরটি দখলে নিয়ে ভরাট করা হলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে পুকুরপাড়ের বাসিন্দাসহ স্থানীয়দের।

এমন পরিস্থিতিতে পুকুরটি বাঁচাতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তপেক্ষ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া হয়েছে লিখিত অভিযোগ। 

হবিগঞ্জ শহরের গোপীনাথপুর এলাকায় প্রায় ১০০ বছর আগে এক একর ৫৩ শতক আয়তনের একটি পুকুর খনন করা হয়। পুকুরের চারপাশে রয়েছে গাছগাছালি ও বসতবাড়ি। দৈনন্দিন নানা কাজে এ পুকুরের পানি ব্যবহার করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি পুকুরটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বাসিন্দা আব্দুস সালাম, আব্দুল কালামসহ তাদের অনুসারীরা। সম্প্রতি তারা পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে মাটি ফেলে দখল করে নিয়েছেন একাংশ। এ কাজে এলাকার বাসিন্দারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বরং দখল বাধার মুখে পড়ায় আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী মহল। 

হরিধন সূত্রধর নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দৃষ্টিনন্দন এই পুকুরের মালিক ওই পুকুরপাড়ে বসবাসকারী ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার। তারা পুকুরটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হিসেবে ধরে রেখে ব্যবহার করে আসছেন অনেকদিন ধরে। সম্প্রতি একটি মহল পুকুরটি দখলে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল সূত্রধর জানান, শত বছরেরও অধিক সময় ধরে এ পুকুরটি ব্যবহার করছেন তারা। এটি হবিগঞ্জ শহরের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুকুর। বৃষ্টি হলে শহরে যখন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তখন এ পুকুরেই এলাকার সব পানি নামে। পুকুরটি বেদখল হলে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। দিলীপ নাথ নামে এক যুবক জানান, এত সুন্দর ও বড় একটি পুকুর এভাবে বেদখল হয়ে যাবে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, পরিবেশের ভারসাম্যগত কারণেই পুকুর ভরাট থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি এসব পুকুর ভরাট করে দখল করা হয় তবে পরবর্তী সময়ে এর কুফল সবাইকে ভোগ করতে হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুস সালাম জানান, পুকুরটিতে তাদের মালিকানাধীন জমি রয়েছে। তারা সেই জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন। তাই তাদের জমিতে তারা মাটি ফেলছেন। পুকুরপাড়ের আরও বেশকিছু লোক নিজেদের মতো করে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান জানান, কেউ পুকুর ভরাট করতে পারবে না। তদন্ত করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ পূর্তি মানে শুধু সময়ের হিসাব নয়,এটি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করার এক দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের গৌরবময় একশ বছর পূর্ণ করল ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব রোকসানা বেগমের নেতৃত্বে, সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি। ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে শতাধিক শিক্ষার্থী সারিবদ্ধভাবে অংশ নেয়। বিদ্যালয়ের আশপাশের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে র‌্যালিটি পুনরায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ভেসে ওঠা শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়দীপ্ত স্লোগান পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে দেয় উৎসবের আবহ। র‌্যালি শেষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফজিলা ইয়াসমিন। তিনি বিদ্যালয়ের শুরুর দিনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, “এই বিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়—এটি এই এলাকার স্বপ্নের ঠিকানা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী সমাজের নানা ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক রোকসানা বেগম, আজমিনা খাতুন, নুরজাহান আক্তার রত্না, শায়লা শারমিন, গোলাম হোসেন ও মফিজুল ইসলাম সহ স্কুল অ্যাডহক কমিটির সদস্য সাইমুম ইসলাম,প্রাক্তন শিক্ষার্থী  ইয়াসমিন আক্তার ও খাদিমুন্নাহার।এছাড়াও বিপুলসংখ্যক অভিভাবক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

পরে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নৃত্য ও আবৃত্তিতে ফুটে ওঠে শিক্ষা, দেশপ্রেম, শৈশব ও আগামীর স্বপ্ন। শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা উপভোগ করেন অতিথি, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের মুখে দেখা যায় গর্বের ঝিলিক।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোকসানা বেগম বলেন, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় একশ বছরের দীর্ঘ পথচলা অতিক্রম করেছে। এই পথচলা আমাদের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি দায়িত্বেরও। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করার যে দায়িত্ব আমরা বহন করে আসছি, তা আরও নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও মূল্যবোধ গঠনে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শতবর্ষের এই শিক্ষা ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের জন্য আলোর বাতিঘর হয়ে থাকবে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শতবর্ষ ধরে সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আধুনিক পাঠদান, সহশিক্ষা কার্যক্রম, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা আরও জোরদার করা হবে।

অভিভাবকরা আলোচনায় বলেন, এই বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষা নিয়ে এলাকার বহু শিক্ষার্থী আজ ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিলিত অংশগ্রহণে শতবর্ষ পূর্তির এই উৎসব পরিণত হয় এক স্মরণীয় মিলনমেলায়। দীর্ঘ পথচলার গর্ব হৃদয়ে ধারণ করে নতুন শতকে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শেষ হয় ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদে’ কূটনীতিকদের নৌযাত্রা
  • ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন