শেষ হলো তিনদিনের বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল। গত বুধবার শুরু হওয়া এ আয়োজন শেষ হয় গতকাল রাতে। নাচ, গান, আলো ও সংস্কৃতির দৃষ্টিনন্দন আয়োজন উপলক্ষে মারমেইডবিচ রিসোর্টের আঙিনায় সাজানো হয় পৃথক ছয়টি মঞ্চ। গভীর রাত পর্যন্ত পৃথক মঞ্চে চলে ভিন্নভিন্ন পরিবেশনা। একদিকে চলছে ডিজে, অন্যদিকে কাঁকড়াসদৃশ মঞ্চে তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে আসা ম্রো, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, পাংখোয়া তরুণীরা ছাতানৃত্য, বোতলনৃত্য, জুমনৃত্য, বাঁশনৃত্য পরিবেশন করেন। আরকক্সবাজারের রাখাইন তরুণীরাপরিবেশন করেন থালানৃত্য। এছাড়া কয়েকটি স্টলেনানা ধরনের মুখরোচক খাবারেরপরিবেশনা।
উৎসবের সমাপনী দিনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড.
ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘এমন উৎসব আসলে অসাধারণ। এখানে যেমন আধুনিকতার ছোঁয়া আছে, তেমনিরয়েছে লাইটিংয়ের নান্দনিকতা, আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বাউলগান এবং আদিবাসীদের নৃত্য। এটি সত্যিইদারুণ। তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি বিদেশীরাও আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পেলো।
মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে অবস্থিত মারমেইড বিচ রিসোর্টে আয়োজিত এই উৎসবে দেশ-বিদেশের শিল্পীদেরপরিবেশনায় ছিল বর্ণিল আয়োজন। ফায়ার শো, লাইটিং ডিসপ্লে এবং স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণ দর্শকদের মুগ্ধ করে।এছাড়া উৎসবে প্রদর্শিত হয় এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব বুসানের সেরা পুরস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র ‘বলী: দ্য রেসলার’।
বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের আয়োজক মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরীবলেন, তিনদিনের এ উৎসবে জাপান, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৫ দেশের ২০০ বিদেশিপর্যটকসহ অন্তত দুই হাজার জন অংশ নেয়। । সমুদ্রতীরেনিরিবিলি পরিবেশে আনন্দ উল্লাস করতে পেরে সবাই খুশি। কক্সবাজারের পর্যটনের পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতেই এই আয়োজন। তিনি আরও বলেন বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের সাফল্যে তারা উৎসাহিত এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আয়োজনেরপরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বার্নিং ম্যান’ উৎসব যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার ব্ল্যাক রকসিটিরমরুভূমিতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, উদ্যোক্তা ও দর্শকেরা একত্র হন। সৃজনশীলতা, মুক্ত পরিবেশ এবং স্বাধীনতা এগুলোই হচ্ছে উৎসবের মূলমন্ত্র। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল সেই একই প্রেরণা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।