সংস্কার যত দীর্ঘায়িত হবে দেশ তত সংকটে পড়বে: তারেক রহমান
Published: 2nd, February 2025 GMT
সংস্কার প্রস্তাবের আলাপ-আলোচনা যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে দেশ তত বেশি সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, যদি সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে থাকি তাহলে যে স্বৈরাচারকে দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিতাড়িত করেছে সেই স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা আবার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসবে। তাই যে বিজ্ঞ ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ সংস্কারের কথা বলছেন, তারা দয়া করে এই আলাপ দীর্ঘায়িত করবেন না। এতে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্রের সুযোগ পাবে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক কর্মশালায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে শ্যামপুরের কদমতলীর বালুর মাঠে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ারি যুক্ত হন প্রধান অতিথি তারেক রহমান। কর্মশালায় মহানগর দক্ষিণের ২৪টি থানা বিএনপিসহ ১১টি অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, সংস্কারের প্রস্তাবগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে সবার আগে নির্বাচনই প্রয়োজন। নির্বাচনের মাধ্যমে যাদেরকে জনগণ দায়িত্ব দেবে তারাই সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারবে, তাদেরকে শুরু করতেই হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কার বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। কারণ, যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে তারা জনগণের কাছে ওয়াদা করবে যে, তারা সুযোগ পেলে এই সব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, সংস্কার যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে দেশের মানুষকে তত দ্রুত আমরা বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব। যে সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে, যে সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশনগুলো তৈরি করে দিয়েছে, যেটাই হোক না কোনো এই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। একটিই পথ, জনগণের নির্বাচন, জনগণের নির্বাচন।
তারেক রহমান বলেন, জবাবদিহিতার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্বাচন হতে হবে, সেটি জাতীয় নির্বাচন কিংবা যে নির্বাচনই হোক। আমরা যদি দেশের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই, আমরা যদি জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের কাজ শুরু করতেন চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে হবে। যত দ্রুত আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করব, তত দ্রুত আমরা পরিবর্তনের কাজ শুরু করতে পারব। যত দ্রুত আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে পারব, তত দ্রুত আমরা দেশকে আরও ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন দ র ত আমর জনগণ র যত দ র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিনিধিত্ব করার ‘প্রতীকহীন’ সুযোগ
দশ বছর ধরে চালু থাকা দলীয় প্রতীক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফিরছে নির্দলীয়তা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন—স্থানীয় নির্বাচনে এবার থেকে ভোটাররাই প্রার্থী বেছে নেবেন দল নয়, প্রার্থীর যোগ্যতা, পরিচিতি ও কাজ দেখে। দলীয় প্রতীকহীন প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থায় ফেরায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
গত ২৪ জুলাই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীক ব্যবহার করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
ওই দিন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে থাকছে না দলীয় প্রতীক। ২৪ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উত্থাপিত সংশোধনী সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়।”
সংশোধিত চারটি আইন ও সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো হলো—
সিটি করপোরেশন আইন ২০১৫: ৩২ (ক) ধারা, পৌরসভা আইন ২০১৫: ৩০ (ক) ধারা, উপজেলা পরিষদ আইন ২০১৫: ১৬ (ক) ধারা, ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০১৫: ১৯ (ক) ধারা।
২০১৫ সালের এই ধারাগুলোর ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক ছিল। সেই বাধ্যবাধকতাই এবার তুলে দিচ্ছে সরকার।
উপদেষ্টা বলেন, “দলীয় প্রতীক পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিগত সময়ে হানাহানি, সহিংসতা, মনোনয়ন বাণিজ্য—সবই আমরা দেখেছি। এখন থেকে প্রার্থীরা নিজের প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন, আর যোগ্যতাই হবে নির্বাচনের মাপকাঠি।”
২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চালু করে। যুক্তি ছিল রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও দলীয় জবাবদিহি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়
প্রার্থী নির্বাচনে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ। স্থানীয় রাজনীতিতে পেশিশক্তির আধিপত্য। দেখা দেয় মনোনয়ন বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বহুদিন ধরেই স্থানীয় সরকারে নির্দলীয় নির্বাচনের পক্ষে ছিল।
সুজন সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “দলীয় প্রতীক চালুর পর জনগণের ভোটাধিকার সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। জনগণের প্রতিনিধি নয়, দলের প্রতিনিধি জয়ী হতেন। সেই কাঠামো ভাঙার এই উদ্যোগ সাহসী ও সময়োপযোগী।”
তিনি আরো বলেন, “এখন যোগ্যতা, পরিচিতি, জনগণের সঙ্গে সম্পর্কই হবে প্রার্থীর সাফল্যের ভিত্তি।”
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “দলীয় পরিচয়কে অনেকে ব্যবহার করেছেন স্রেফ জেতার মাধ্যম হিসেবে। এতে যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়ন না পেয়ে বাদ পড়েছেন, আবার অযোগ্যরাও জিতেছেন। এই সংস্কার মূলত রাজনীতিকে সেবা কেন্দ্রিক করতে সহায়ক হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এটি কোনো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের যৌথ সুপারিশে, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির ৩১ দফা রোডম্যাপেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দলীয় প্রতীকের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো রাজনৈতিক সহিংসতায় রূপ নেয়, স্থানীয় নেতৃত্বের জায়গায় জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটে। দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির দাবির প্রতিফলন।”
ঢাকার দোহার উপজেলার মুদি দোকানি আমির হোসেন বলেন, “আগে এলাকার ভালো প্রার্থী থাকলেও দল না থাকলে ভোট দেওয়া যেত না। এখন নিজের বিবেক দিয়ে ভোট দিতে পারব এটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তি।”
চট্টগ্রামে পটিয়ার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, “গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দাঁড়াতে পারিনি। এবার নিজের প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতে পারব। এটা আমার মতো মানুষের জন্য বিশাল সুযোগ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকারের প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করবে। আগে জনপ্রতিনিধিরা দলীয় নেতার কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন, এখন জনগণের কাছে থাকবেন। নেতৃত্বে সত্যিকারের প্রতিযোগিতা ফেরানোর উদ্যোগ হবে।”
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন,“দলীয় প্রতীকের পরিবর্তে নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন মানে, মানুষের ভোটাধিকার ও বিশ্বাস ফেরানোর সুযোগ। আগে মানুষ ভাবতো ভোট আগেই ঠিক হয়ে গেছে, এখন ভাববে আমি ঠিক করব কে জয়ী হবে।”
ঢাকা/এএএম/ইভা