শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে তাঁকে ‘বিলাল মামা’ বলে ডাকেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যাকালীন আড্ডার সময় তাঁর দোকানে চা কিংবা শিঙাড়া-পেঁয়াজি খাননি—বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অদূরে চা-শিঙাড়া-ডালপুরি আর পেঁয়াজি বিক্রি করেন বিলাল উদ্দিন। বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। প্রায় ৪ দশক ধরে এ পেশায় আছেন তিনি। সিলেট সদরের টুকের বাজার এলাকায় আশির দশকে তিনি এ কাজ শুরু করেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিলাল উদ্দিনের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, শিঙাড়া-ডালপুরি-পেঁয়াজি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। দোকানটির চারদিক খোলা। ওপরে একচালা টিনের শেড। এই ঝুপড়ি দোকান ঘিরেই তাঁর যত কর্মযজ্ঞ। দোকানটির আশপাশে ভিড় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই নিজেদের পাতে শিঙাড়া-পুরি বা পেঁয়াজি পেয়ে খাওয়া শুরু করেছেন। বাকিরা অপেক্ষায় আছেন।

এর এক ফাঁকে চা খেতে খেতে কথা হয় বিলাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাঝে কিছুদিন সিলেটের বন্দরবাজারে ভাত বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু আশানুরূপ না হওয়ায় এটি বাদ দেন। এরপর শহরের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে চা-শিঙাড়ার ব্যবসা শুরু করেন। আর প্রায় ছয় বছর ধরে ভার্সিটি প্রধান ফটক–সংলগ্ন ওই এলাকায় এ ব্যবসা করছেন। আয়ের একমাত্র উৎস থেকেই তিনি সংসার চালিয়ে আসছেন। আগে শিঙাড়া-পুরি তৈরি, পরিবেশন, চা বানানোসহ দোকানের সব কাজ একাই করতেন। কিন্তু বয়সের কারণে এখন চাইলেও অনেক কিছু একা সামলাতে পারেন না। তাই একজন সহযোগী রেখেছেন। তবে খাবার ও চা তিনি নিজেই তৈরি করেন।

বিলাল উদ্দিনের দোকানটি প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান চালু থাকে। সেখানে প্রতিদিনই প্রায় ৪-৫ কেজি ময়দা দিয়ে শিঙাড়া-পেঁয়াজি-পুরি তৈরি করা হয়। এগুলোর প্রতিটির দাম পাঁচ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এর মধ্যে হাজার খানিক টাকা বিলালের লাভ থাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তখন আর লাভের আশা থাকে না। পুঁজির টাকা উঠলেই খুশি থাকেন তিনি।

ময়দার খামির দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এসব নাশতাজাতীয় খাবার বানিয়ে তেলে ভাজেন বিলাল। এতে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ আরও বাড়ে। গরম-গরম শিঙাড়া-পুরি-পিঁয়াজি খেতেই শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় আর খাবারের উৎসাহ দেখলেই তা আঁচ করা যায়।

বিলাল বলেন, ‘ছাত্র মামারা আমারে অনেক মায়া করে। আমার দোকানে এইখন বসার ৯টা বেঞ্চ আছে, এইডার মইধ্যে মাত্র দুইডা আমি কিনছি। বাকি সাতডা মামারা কিইন্যা দিছে। মামারা কেউ বাকি নেয় না। টেখা না থাকলে কইয়া খায়, এক দুই দিন পর দিয়া যায়। আইজ পর্যন্ত মামারা কেউ টেখা মারে নাই। মামারা অনেক আন্তরিক।’

বিলালকে শিক্ষার্থীরাও বেশ ভালোবাসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরাব সাদাত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উনি (বিলাল) কখনো কাস্টমার (ক্রেতা) হিসেবে বিবেচনা করেছেন বলে মনে হয়নি। আমাদের তিনি একদম নিজের আপনজন মনে করেন। আমাদের কত-শত আড্ডা, আলাপ-আলোচনার স্মৃতির সঙ্গে যে মামা ও তাঁর চা-শিঙাড়া থাকবে, তার ইয়ত্তা নেই।’

আলাপের একপর্যায়ে হাতের ইশারায় অদূরে একটি দোকান দেখিয়ে বিলাল উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘ওই যে শাটারওয়ালা দোকানডা দেখা যায়, ৫ আগস্টের আগে ওইডা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অফিস আছিল। এরার কাছে ১৬-১৭ হাজার টেখা বাকি পাই। এইখন এরার কোনো খোঁজ পাইতাছি না।’

পরিবারের বিষয়ে বিলাল বলেন, সিলেট সদরের টুকেরবাজার এলাকায় তিনি সপরিবারে বসবাস করেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর ছয় সদস্যের পরিবার। মেজ ছেলে প্রতিবন্ধী। তবে বড় ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো শিখছেন। এতে তাঁর দুঃখ কিছুটা লাঘব বলে প্রত্যাশা করেন। মেয়ে দশম শ্রেণি ও ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ছে। এখন শুধু ছেলেমেয়েদের মানুষ হিসেবে গড়া তোলার স্বপ্ন দেখেন শিক্ষার্থীদের ‘বিলাল মামা’।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ফতুল্লার লামাপাড়ায় মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, কোর্স সমাপনী সনদ প্রদান, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থতার বর্ষপূর্তি ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।

মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়াস বিগত ২২ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা করে যাচ্ছে।

সব ধরনের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সেবার মানোন্নয়ন প্রয়াসের বর্তমান লক্ষ্য। শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান নয়, বরং মানসম্পন্ন টেকসই সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম কেন্দ্রটি পরিচালনা করে থাকে।

জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়াসে চিকিৎসা কোর্স সম্পন্নকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান, প্রাক্তন সদস্যদের মনিটরিং, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থ থাকার স্বীকৃতি ও জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহণ প্রয়াসের টেকসই চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ।

তিনি আরো বলেন, আমরাই প্রথম নারায়ণগঞ্জে ৪০ বেডে লাইসেন্স প্রাপ্ত মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়াসের প্রতিষ্ঠা ২০০৩ সালে হলেও আমরা লাইসেন্স পেয়েছি ২০০৬ সালে। গত ২০২১ সাল থেকে আমরা প্রতিবছর সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসছি।

এসময় তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি ও প্রাক্তন সদস্যদের প্রয়াসের সামগ্রিক কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের কাউন্সিলর মোঃ সাইফুল ইসলাম, অফিসার এডমিন সাজ্জাদ হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফরিদ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শওকত হোসেন, লিটন, আমজাদ, বাবুসহ  রিকোভারীবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ